কিলাররা ছিল তিন গ্রুপে বিভক্ত-নরসিংদী মেয়রের আসন শূন্য ঘোষণা :২৩ দিন পর ওসি ও এএসপি বদলি by পিনাকি দাসগুপ্ত

নপ্রিয় পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী কিলাররা ছিল তিন গ্রুপে বিভক্ত। তারা ধরে নিয়েছিল লোকমানকে গুলি করার পর পাল্টা গোলাগুলি হতে পারে। এ কারণে একটি গ্রুপ ছিল মোটরসাইকেলে, একটি মাইক্রোবাসে এবং অন্যটি আগে থেকেই ঘটনার অদূরে পথচারী বেশে অবস্থান নিয়েছিল। মাইক্রোবাসটি রাখা ছিল নরসিংদী ফায়ার ব্রিগেড অফিসের কাছে। প্রথম গ্রুপ সফল হওয়ার পর কিলাররা মাইক্রোবাসে ঘটনাস্থল ত্যাগ


করে। দু্'একজন মিশে যায় জনতার সঙ্গে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানিয়েছে মাহফুজ হোসেন তাওয়াব ওরফে সবুজ। সবুজকে পুলিশ দুই মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল রিমান্ডের তৃতীয় দিন। একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছে টিপ্পন ও শাহিন। এদিকে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ওবায়দুল আজম গতকাল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে নরসিংদী পৌরসভার মেয়র আসনটি শূন্য ঘোষণা করে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ২৩ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার নরসিংদী মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকালই বদলি করা হয়েছে নরসিংদী সার্কেল এএসপি কাজী হেলাল উদ্দিনকে। নতুন ওসি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন পরিদর্শক আসাদুজ্জামান। তিনি গতকাল রাতে যোগদান করেছেন।
ওসি আনোয়ার হোসেন এবং এএসপি কাজী হেলাল উদ্দিনের প্রত্যাহার ও বদলির
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন। গতকাল তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে লোকমান হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। মামলার তদন্ত কার্যক্রম সঠিকভাবেই চলছে।
তিন গ্রুপে বিভক্ত : মামলার তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, কিলারদের প্রথম গ্রুপের দায়িত্বে ছিল সবুজ। ঘটনার সময় তার পরনে ছিল কালো প্যান্ট, কালো শার্ট ও কালো মুখোশ। লোকমানকে প্রথম গুলির শব্দ ছিল কম। এ কারণে উপস্থিত অনেকেই বিষয়টি আঁচ করতে পারেনি। দ্বিতীয় পর্যায়ে পরপর দুটি গুলি ছোড়া হয়। এ সময় উপস্থিত লোকজন সতর্ক হয়ে টেবিল ও চেয়ারের নিচে আত্মগোপন করার চেষ্টা করে। সর্বশেষ আরও তিনটি গুলি করে লোকমানের মৃত্যু নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। এরপরই সবুজ ও তার সঙ্গে থাকা (আওয়ামী লীগ অফিসের বাইরে) সহযোগীরা দৌড়ে ফায়ার ব্রিগেডের কাছে থাকা মাইক্রোবাসে ওঠে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পলাতক আসামি : লোকমান হত্যা মামলায় মন্ত্রীর ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুসহ ১৩ আসামিকে পুলিশ গতকাল পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ জানিয়েছে, এজাহারভুক্ত ১৩ আসামির মধ্যে চারজন দেশের বাইরে রয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। অন্য ৯ আসামিকে গ্রেফতারের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও নরসিংদী পুলিশ পৃথকভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে অংশ নেওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা গতকাল সমকালকে জানান, ব্যাপক প্রচারের কারণে আসামিরা সতর্ক হয়ে গেছে। ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শিগগির এজাহারভুক্ত বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
টার্গেট এখন মোবারক হোসেন মোবা : তদন্তকারী সূত্র জানায়, বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের মধ্যে মোবারক হোসেন মোবাকেই দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কারণ গ্রেফতারকৃত আসামিদের কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, লোকমান হত্যার পরিকল্পনার মূল ভুমিকা পালন করেন মোবা। তিন থেকে চার স্তরের এ পরিকল্পনার ছক সাজানো ছিল বলে একটি পক্ষ একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা পর্যন্ত অবহিত ছিল।
মামলার বাদী : নিহত পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই কামরুজ্জামান কামরুল সমকালকে জানান, পুলিশের তদন্ত নিয়ে তিনি বা তার ভাবি নুশরাত বাবলীর কোনো সংশয় নেই। তদন্ত সম্পর্কে পুলিশ সুপারও তাদের আশ্বস্ত করেছেন। তাই তারা আশাবাদী, তদন্তে মূল আসামি ধরা পড়বে এবং প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।
রিমান্ডে ৬ আসামি : লোকমান হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে পুলিশের রিমান্ডে রয়েছেন নরসিংদী শহর যুবলীগ সভাপতি আশরাফ হোসেন সরকারসহ ৬ আসামি। টিপ্পন, হাজি ফারুক, মাহফুজ হোসেন তাওয়াব ওরফে সবুজ, শাহিন ও নাসির।
মেয়রের আসন শূন্য ঘোষণা : এদিকে নরসিংদী প্রতিনিধি প্রীতিরঞ্জন সাহা জানান, নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ওবায়দুল আজম গতকাল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে নরসিংদী পৌরসভার মেয়র আসনটি শূন্য ঘোষণা করে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১ নভেম্বর নরসিংদী পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন সন্ত্রাসীদের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে খুন হওয়ায় পৌরসভার মেয়র আসনটি শূন্য হয়। সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন অফিস এর সত্যতা স্বীকার করেছে।
মিলাদ : লোকমান হোসেন স্মরণে নরসিংদীতে শোকসভা, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা অব্যাহত রয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে লোকমান হোসেনের ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুনে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শোক প্রকাশ করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.