দেড় হাজার প্রতিষ্ঠানের পণ্য নিয়ে ভাসছে পাঁচ জাহাজ
পোশাক
খাতসহ প্রায় ২০টি শিল্প খাতের কাঁচামাল ও বাণিজ্যিক পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের
জলসীমায় ভাসছে কনটেইনারবাহী পাঁচটি জাহাজ। এসব জাহাজ কখন জেটিতে ভেড়ানো
যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিদেশি এই পাঁচটি জাহাজের স্থানীয় এজেন্সি
পরিচালনার কাজ কে করবে, তা নিয়ে জটিলতায় জাহাজগুলো জেটিতে ভেড়ানোর অনুমতি
মিলছে না। এজেন্সি পরিচালনার কাজ পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানের
দ্বন্দ্বে পড়ে ভুগছেন আমদানিকারকেরা। এই পাঁচ জাহাজে চট্টগ্রাম, ঢাকা,
গাজীপুর, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, রংপুরসহ ১৩ জেলার প্রায় দেড় হাজার শিল্প ও
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আমদানি পণ্যবাহী ৬ হাজার ১৩ একক কনটেইনার রয়েছে বলে
জাহাজ কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বন্দর জলসীমায় আসা জাহাজ জেটিতে
ভিড়তে দুই-তিন দিন দেরি হলে যেখানে ব্যবসায়ীদের উৎকণ্ঠা শুরু হয়, সেখানে এই
পাঁচ জাহাজের একটি ‘এমভি টিআর আরামিস’ ২৩ দিন ধরে পণ্য নিয়ে ভাসছে। এ ছাড়া
এমভি থরস্কাই ১১ দিন, ক্যাপ অ্যারাক্সস ৯ দিন, এমভি চার্লি ৮ দিন এবং
ক্যাপ ওরিয়েন্ট ৫ দিন ধরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভাসছে। এসব জাহাজে আমদানি করা
শিল্পের কাঁচামাল না পেয়ে ইতিমধ্যে অনেক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন পোশাক শিল্পকারখানার মালিকেরা। কারণ, পণ্য
উৎপাদনের জন্য তাঁরা সময় পান বড়জোর তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ। পণ্য উৎপাদনের
অধিকাংশ সময় চলে গেলেও তাঁরা কাঁচামাল হাতে পাচ্ছেন না। এর মধ্যে এনভয়
টেক্সটাইল, রিজেন্সি গার্মেন্টস, বেক্সিমকো ফ্যাশন, ফিয়াত ফ্যাশন,
মিলেনিয়াম টেক্সটাইল প্রমুখ কারখানা রয়েছে। এ ছাড়া ওষুধ, কাচ, ইস্পাত,
অ্যালুমিনিয়াম, সিরামিক, রং, সিমেন্ট, প্রসাধন, কাগজ, পলিথিন, প্লাইউড,
সার, প্লাস্টিক, গাড়ি সংযোজন, টায়ার, আসবাব, চা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও জুতা
প্রস্তুতকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আমদানি করা পণ্য রয়েছে। তৈরি পোশাক
রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর বন্দর ও জাহাজীকরণ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির
চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘পণ্য উৎপাদনের জন্য বিদেশি ক্রেতারা
সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় দেন। এর মধ্যে যদি ২৩ দিনেও কারখানায় পণ্য না
ঢোকে, তাহলে তো উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানো ছাড়া বিকল্প উপায় থাকবে না।’
এই
পাঁচটি জাহাজের তিনটিতে আছে বিএসআরএম গ্রুপের রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও
রাসায়নিক। এর মধ্যে ‘টিআর আরামিস’ জাহাজে আনা ৩৫ কনটেইনার পণ্য ২৩ দিনেও
হাতে পায়নি তারা। বিএসআরএম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন,
নির্ধারিত সময়ে পণ্য হাতে না পাওয়ায় উৎপাদনে ব্যাঘাত হচ্ছে। একই জাহাজে
গাজীপুরের কাশিমপুরে ডেনিম কারখানার জন্য যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে ডেলটা
গ্রুপ। এসব যন্ত্রপাতি না পাওয়ায় কারখানাটি চালু করা যাচ্ছে না। জানা গেছে,
এসব জাহাজে যে দেড় হাজার প্রতিষ্ঠানের পণ্য আনা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে
ইউনিলিভার, স্কয়ার গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, ট্রান্সকম গ্রুপ, অ্যাপেক্স
ট্যানারি, বসুন্ধরা গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাভানা, প্রাণ-আরএফএল, আবুল
খায়ের গ্রুপ, কেডিএস গ্রুপ, পারটেক্স, জিপিএইচ, কেএসআরএম, যমুনা গ্রুপ,
বার্জার পেইন্টস, লিনডে বাংলাদেশ, নেসলে, সেনাকল্যাণ সংস্থা, আরএকে
সিরামিক, পেডরোলো গ্রুপ প্রমুখ। কাস্টমস সূত্র জানায়, এজেন্সি পরিচালনা
হস্তান্তর নিয়ে যে দুটি প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্ব চলছে তার একটি হলো মেসার্স
সি মেরিন শিপিং লাইনস লিমিটেড। অপরটি হলো মার্কো শিপিং কোম্পানি। কনটেইনার
জাহাজ পরিচালনাকারী সিঙ্গাপুরভিত্তিক ফার শিপিং লাইনস লিমিটেডের বাংলাদেশের
এজেন্ট ছিল সি মেরিন। ৩১ জানুয়ারি সি মেরিন শিপিং লাইনস লিমিটেডের সঙ্গে
ফার শিপিং কোম্পানির এজেন্সি পরিচালনা চুক্তি শেষ হয়। এরপরই বিদেশি
কোম্পানিটি সি মেরিনকে বাদ দিয়ে মার্কো শিপিং কোম্পানিকে এজেন্সি পরিচালনার
জন্য নিয়োগ দেয়। নিয়োগ পাওয়ার পর ফার শিপিংয়ের পক্ষে বন্দরে আসা জাহাজের
কাজ করার অনুমতি চেয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে মার্কো শিপিং।
নিয়মানুযায়ী, এজেন্সি হস্তান্তর করতে হলে আগের কোম্পানির সঙ্গে দেনা-পাওনা
পরিশোধের সমঝোতা করতে হয়। এরপর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দুই পক্ষের উপস্থিতিতে
যৌথ ঘোষণাপত্র নিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানকে এজেন্সি পরিচালনার অনুমতি দেয়। এই
নিয়মানুযায়ী, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যৌথ ঘোষণাপত্র প্রদানের জন্য চিঠি দেয় দুই
পক্ষকেই। সি মেরিন যৌথ ঘোষণাপত্র প্রদান না করায় ফার শিপিং কোম্পানিটির
পক্ষে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের দায়দেনা গ্রহণসংক্রান্ত অঙ্গীকারনামা
কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে প্রদান করে মার্কো শিপিং। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি বন্দরে
সাময়িকভাবে কাজ করার জন্য মার্কো শিপিংকে শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি দেয় কাস্টমস
কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মার্কো শিপিংকে চূড়ান্ত অনুমোদন না দেওয়ায়
তারা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করে।
No comments