মোবাইলে প্রশ্ন পাওয়া ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল হবে
অবশেষে
এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস যাচাই-বাছাই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় পক্ষকাল পর এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হলো। প্রতিবেদন
প্রণয়ন চূড়ান্ত হলেও যাচাই-বাছাই কমিটির সব সদস্যের স্বাক্ষর সংগ্রহে
বিলম্বের কারণে ৯ দিন বিলম্ব হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তার পরও দু’জন
সদস্যের স্বাক্ষর ছাড়াই প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘খ’ সেটের
এমসিকিউ প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ হাজারের কম বা বেশি
শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা হবে। গতকাল বেলা ৩টার দিকে যাচাই-বাছাই
কমিটির সদস্যসচিব মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব আবু আলী সাজ্জাদ
হোসেন কমিটির পক্ষে খামবদ্ধ প্রতিবেদন শিক্ষাসচিব মো: সোহরাব হোসাইনের কাছে
হস্তান্তর করেন। রিপোর্ট হাতে পেয়ে শিক্ষাসচিব বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটির
প্রতিবেদন মাত্র পেয়েছি। এখন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পড়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ
ক্ষেত্রে কাউকেই কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে
মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। তিন পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনসহ আট পৃষ্ঠার জমাকৃত
প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সুপারিশের মধ্যে
রয়েছে- ১. ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে তাদের
ফলাফল বাতিল করা। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর পাস করা কোনো
শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেও যদি ফাঁস প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়,
তাহলে তখনো তার ফল বাতিল হবে। পাশাপাশি এসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর
আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। ২. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে প্রশ্নপত্র নেয়ার
দায়ে যারা বহিষ্কৃত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। ৩. ফাঁসের
অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের সাথে যেসব পরীক্ষার্থীর লিংক
ছিল তাদেরকে চিহ্নিত করে পরে তাদের ফল বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। ৪.
কমিটি প্রশ্নফাঁসের কারণে কোনো পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে নয়। কেননা সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে উন্মুক্তভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। কাছাকাছি কিছু লোকের মধ্যে
(ক্লোজ গ্র“প) প্রশ্ন শেয়ার হয়।
ফলে পরীক্ষার আগমুহূর্তে অতি নগণ্য সংখ্যক
পরীক্ষার্থীর প্রশ্ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ২০ লাখ সাধারণ পরীক্ষার্থীর
হাতে প্রশ্ন পৌঁছায়নি। যারা আগ মুহূর্তে সঠিক বা ভুয়া প্রশ্ন পেয়েছে তারা
ওই সময় পরীক্ষা কেন্দ্রের পথে বা কেন্দ্রের সামনে ছিল। এ সময় প্রশ্ন পেয়ে
থাকলেও তারা তেমন লাভবান হতে পারেনি। এ কারণে সম্পূর্ণ পরীক্ষা বাতিল করা
সমীচীন হবে না। কেননা পরীক্ষা বাতিল করা হলে ২০ লাখ শিক্ষার্থী, তাদের
মা-বাবা ও অভিভাবককে বিপদে ফেলা হবে। তা ছাড়া পরীক্ষা বাতিল করে প্রচলিত
পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে গেলে আবার যে প্রশ্নফাঁস হবে নাÑ সে নিশ্চয়তা নেই।
বরং এতে নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকসহ কোটি মানুষের ভোগান্তি
বাড়বে। তাই পরীক্ষা বাতিল না করাই অধিক যুক্তিযুক্ত বলে কমিটি মনে করছে।
এসব ব্যাপারে শিক্ষা সচিব মো: সোহরাব হোসাইনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি
বলেন, ১৭টি বিষয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি বিষয়ের এমসিকিউ
অংশের শুধু ‘খ’ সেট প্রশ্ন পরীক্ষার সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা আগে ফাঁস হয়েছে
বলে কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে। কিন্তু সর্বোচ্চ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী সেই
প্রশ্ন পেয়েছে। তাদের কারণে বাকি সাড়ে ১৯ লাখ শিক্ষার্থীকে কষ্ট দেয়া ঠিক
হবে না। এ কারণে আমরা গোটা পরীক্ষা বাতিল করছি না। তদন্ত প্রতিবেদনেও একই
কথাই বলা হয়েছে, তাতে উল্লেখ রয়েছে বলে সূত্র জানায় যে, কমিটির কাছে
প্রতীয়মান হয়েছে, কোনো প্রশ্নই পুরোপুরি ফাঁস হয়নি। প্রশ্নের এমসিকিউ অংশটি
ফাঁস হয়েছে। এতে মোবাইলে যারা এ প্রশ্ন পেয়েছে তারাই ফাঁসের সুবিধা পেয়েছে
বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে এই ৫০ হাজার বা
তার কিছু বেশি বা কম শিক্ষার্থী চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর ফল
বাতিলের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে। গতকাল শিক্ষা
বিভাগের সচিবের কাছে হস্তান্তর করা প্রতিবেদনে কমিটি এ কথা বলেছে। কমিটি
প্রতিবেদনের পরপরই ওই ৫০ হাজার পরীক্ষার্থীর ব্যাপারে আরো যাচাই-বাছাই করা
হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র নয়া দিগন্তকে
জানিয়েছে।শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষার সময়ে সর্বোচ্চ এক
হাজার টাকা বিকাশ ও রকেট মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেনকারীদের সন্দেহে
এনে দোষী পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এ ছাড়া ফেসবুকের
সংশ্লিষ্ট গ্র“প এবং গ্রেফতার ও বহিষ্কৃত ব্যক্তি, শিক্ষক-কর্মচারী ও
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে দোষী শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করার
কাজ শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্র“য়ারি ২০১৮ সালের এসএসসি ও সমমানের
পরীক্ষা শুরু হয়। শুরুর দিন থেকে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষার তৃতীয়
দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো: আলমগীরের
নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি গতকাল বিকেলে তদন্ত
প্রতিবেদন জমা দেয়।
No comments