মিরপুরে পুড়লো হাজারো ঘর, সম্বল
রাজধানীর
পল্লবী এলাকায় একটি ঘনবসতিপূর্ণ বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে অন্তত ২০০০
ঘর। এতে সর্বস্ব হারিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। কী কারণে আগুন লেগেছে তা
বস্তিবাসী বা ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য জানানো
হয়নি। ওই সূত্রগুলোর ধারণা, রান্নাঘরের গ্যাসের চুলা অথবা বৈদ্যুতিক
শটসার্কিট বা সিগারেটের আগুন থেকে সেখানে আগুন লাগতে পারে। ভয়াবহ আগুনে
কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা টানা সাড়ে ৪ ঘণ্টা
চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনের উৎস ও ক্ষতি খতিয়ে দেখতে ফায়ার
সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী
সাতদিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা
হয়েছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে
সাময়িকভাবে প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল ভোর পৌনে ৪টার দিকে পল্লবী থানাধীন হারুণাবাদ এলাকার কবির মোল্লা বস্তির উত্তর দিকের একটি ঘর থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। তখন পুরো বস্তিবাসীর লোকজন ঘুমে ছিলেন। চার দিকে সুনসান নীরবতা। এসময় হঠাৎ চারপাশে আগুন আগুন বলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। যে যার মতো পেরেছেন ঘর থেকে জীবন নিয়ে বাইরে বের হয়ে ফাঁকা স্থানে চলে যান। ধোঁয়ায় আছন্ন হয়ে যায় বস্তির পুরো এলাকা। আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ওই আগুন পাশের বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার সময় সেখানে বসবাসরত লোকজনের অনেকেই চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট সোয়া ৪ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বস্তির মধ্যে ধোঁয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অক্সিজেনের মাক্স নিয়ে ভেতরে আগুন নিভান। ততক্ষণে বস্তির হাজারো ঘর পুড়ে যায়। আগুন নেভাতে তাদের স্থানীয় জনতা সহযোগিতা করে। আগুন নির্বাপণের পর বস্তির লোকজন আগুনে পোড়া জিনিসের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। বস্তির উত্তর পাশের বাসিন্দা রিকশাচালক মো. সেলিম মানবজমিনকে জানান, ভোরের দিকে সবাই ঘুমিয়ে ছিল। চারদিকে আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনতে পাই। ঘুমের মধ্যে থাকার কারণে মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছিলাম। এসময় আমার স্ত্রী নিলুফা আমাকে হাত ধরে টান দিয়ে আগুন আগুন বলে চিৎকার করে। দ্রুত তখন আমার স্ত্রী ও বাচ্চা নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসি। আগুনের মধ্যে মুহূর্তে ঘুম থেকে জেগে ওঠা সেলুনের কর্মচারী তোরাব আলী জানান, আগুনের কথা শুনে বস্তির লোকজন যে যেভাবে পেরেছে, জীবন নিয়ে বের হয়ে এসেছে। ঘরে কী ছিল আর কী রেখে আসলো, কেউ তা চিন্তা করেনি। ভোরের বাতাসে তীব্রতা থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল সকালে সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পল্লবীর কালশি পার হয়ে হারুনাবাদ এলাকা। এলাকায় উঁচু উঁচু দালান রয়েছে। তার মধ্যখানে বস্তি গড়ে উঠেছে। আগুনের খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন ভিড় জমায়। তাদের ভিড় সামলাতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়। হারুনাবাদ এলাকায় পাশাপাশি ৩টি বস্তি রয়েছে। কবির মোল্লার বস্তির পাশে সাত্তার মোল্লা ও নাজির আলির বস্তি। কবির মোল্লা বস্তির আয়তন প্রায় ২৫ একর। আগুনে বস্তির প্রায় ২ হাজার ঘর ভূস্মীভূত হয়েছে। এই বস্তিতে প্রায় ১৫ হাজার লোকের বসবাস। বস্তির ঘরগুলো ছিল ঘিঞ্জিমতো। একটির সঙ্গে আরেকটি লাগোয়া। ফাঁকা স্থান তেমন ছিল না বললেই চলে। একটি কক্ষে অনেকেই ঠাসাঠাসি করে থাকেন। অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। আবার বস্তিতে প্রায় অধিকাংশ দক্ষিণ অঞ্চলের নদীভাঙা লোকজনের বসবাস। কেউ গার্মেন্টশর্মী, কেউ রিকশাচালক, কেউ কায়িক শ্রমিক। বস্তির মধ্যে ছিল একাধিক খাবারের দোকান। ছিল একাধিক চায়ের দোকান। বস্তির পূর্বপাশের বাসিন্দা ভ্রাম্যমাণ চা-বিক্রতো মো. গিয়াসউদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, কালশি এলাকায় গভীর রাতে বিক্রি করে ঘরে আসি। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমে একটু চোখ এঁটে এসেছিল। এসময় আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনে ঘর থেকে দ্রুত বের হয়ে আসি। আমার কক্ষে উপার্জন করা ৩০ হাজার টাকাসহ সব জিনিস পাতি পুড়ে গেছে। বেঁচে থাকার কিছুই নেই।
আলমাসউদ্দিন নামে এক গার্মেন্টকর্মী জানান, গত পাঁচ বছর আগে ভোলার বোরহানউদ্দিন এলাকায় নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বস্তির একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছিলাম। গ্রামের বাড়ি নদীতে নিয়েছে আর বস্তির ঘর আগুনে নিলো। এখন কোথায় যাবো? এসময় কোলের শিশুকে নিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বস্তির বাসিন্দা জেসমিন বেগম জানান, তার স্বামী রাজমিস্ত্রি। অভাবের সংসারে তিন মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে তিনি মাথা গুঁজেছিলেন এ বস্তিতে। রাতে ছেলে পানি খাওয়ার জন্য ঘুম ভাঙলে তিনি আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পান। তিনি আরও জানান, স্বামীকে বিদেশ পাঠাবো এজন্য কিস্তি থেকে চার লাখ টাকা উঠিয়ে জমা দিয়েছি। ট্রাভেলস বলেছে কয়েক দিনের মধ্যে তার ফ্লাইট হবে। কিন্তু তার টাকা এবং বিদেশ যাওয়ার সব কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। জেসমিন বারবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, আমি এ টাকা কোথা থেকে পরিশোধ করবো। আজ আমার স্বপ্ন পুড়ে ছাই।
তবে বস্তির বাসিন্দা সোহরাব আলী নামে এক রিকশাচালক জানান, বস্তির রাস্তাগুলো অনেক সুরু। এতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো ঢুকতে অসুবিধা হচ্ছিল। তিনি আরও জানান, এছাড়া আশপাশের রাস্তার পাশে নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য ইট ও বালু ফেলে রাখা হয়েছিল। এতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে বাধা পায়। আগুনের খবর দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার কারণে বস্তির লোকজন দ্রুত বের হয়ে আসতে পেরেছেন। না তো ভয়াবহ আগুনে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। তিনি আরও জানান, আগুনে সবকিছু পুড়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে কেউ আবার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হারুনাবাদ এলাকার এক বাসিন্দা মানবজমিনকে জানান, বস্তিটি দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী একটি মহল উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এই আগুনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। সূত্র জানায়, এই বস্তির গ্যাসের লাইন, বৈদুত্যিক লাইন এবং ডিসের লাইন সব অবৈধ। একটি চক্র অবৈধভাবে এই বস্তিতে এসব লাইন সংযোগ দিয়ে তারা মোটা অংকের চাঁদা তুলে থাকে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল আহমেদ জানান, বস্তির ঘরগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লাগায়ো। এতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া সকালে বাতাসের কারণে আগুন আরও লেগে যায়। তিনি আরও জানান, আগুনের ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের পরিচালক দেবাশীষ বর্মনকে।
আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় সংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমার এলাকার মানুষ এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের সব সম্পদ পুড়ে গেছে। তাদের খোলা আকাশের নিচে আমি রাখতে পারি না। তিনি আরও জানান, এজন্য তাদের খাওয়া-দাওয়া এবং থাকার ব্যবস্থা করেছি। তাদের থাকার জন্য আমার ভবন কুজরত আলী মার্কেটের ৬টি ফ্লোর ছেড়ে দিয়েছি। প্রত্যেকটা ফ্লোর ২৬ হাজার বর্গফুটের। এখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। অন্যদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসন প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেবে বলে আমাকে জানিয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইডের ম্যানেজার আ. ম. নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের বস্তিবাসীদের নিয়ে কারো তেমন চিন্তাভাবনা নেই। এজন্য বারবার দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। এগুলো ঠেকাতে হবে। এখানে আমরা তাদেরকে তাৎক্ষণিক কী কী সহযোগিতা করা যায় তা নির্ণয় করছি। পল্লবী থানার ডিউটি অফিসার রোখসানা বেগম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ ঘটনায় কোনো আহত ও নিহত না হওয়ায় মামলা দায়ের হয়নি।
গতকাল ভোর পৌনে ৪টার দিকে পল্লবী থানাধীন হারুণাবাদ এলাকার কবির মোল্লা বস্তির উত্তর দিকের একটি ঘর থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। তখন পুরো বস্তিবাসীর লোকজন ঘুমে ছিলেন। চার দিকে সুনসান নীরবতা। এসময় হঠাৎ চারপাশে আগুন আগুন বলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। যে যার মতো পেরেছেন ঘর থেকে জীবন নিয়ে বাইরে বের হয়ে ফাঁকা স্থানে চলে যান। ধোঁয়ায় আছন্ন হয়ে যায় বস্তির পুরো এলাকা। আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ওই আগুন পাশের বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার সময় সেখানে বসবাসরত লোকজনের অনেকেই চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট সোয়া ৪ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বস্তির মধ্যে ধোঁয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অক্সিজেনের মাক্স নিয়ে ভেতরে আগুন নিভান। ততক্ষণে বস্তির হাজারো ঘর পুড়ে যায়। আগুন নেভাতে তাদের স্থানীয় জনতা সহযোগিতা করে। আগুন নির্বাপণের পর বস্তির লোকজন আগুনে পোড়া জিনিসের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। বস্তির উত্তর পাশের বাসিন্দা রিকশাচালক মো. সেলিম মানবজমিনকে জানান, ভোরের দিকে সবাই ঘুমিয়ে ছিল। চারদিকে আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনতে পাই। ঘুমের মধ্যে থাকার কারণে মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছিলাম। এসময় আমার স্ত্রী নিলুফা আমাকে হাত ধরে টান দিয়ে আগুন আগুন বলে চিৎকার করে। দ্রুত তখন আমার স্ত্রী ও বাচ্চা নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসি। আগুনের মধ্যে মুহূর্তে ঘুম থেকে জেগে ওঠা সেলুনের কর্মচারী তোরাব আলী জানান, আগুনের কথা শুনে বস্তির লোকজন যে যেভাবে পেরেছে, জীবন নিয়ে বের হয়ে এসেছে। ঘরে কী ছিল আর কী রেখে আসলো, কেউ তা চিন্তা করেনি। ভোরের বাতাসে তীব্রতা থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল সকালে সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পল্লবীর কালশি পার হয়ে হারুনাবাদ এলাকা। এলাকায় উঁচু উঁচু দালান রয়েছে। তার মধ্যখানে বস্তি গড়ে উঠেছে। আগুনের খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন ভিড় জমায়। তাদের ভিড় সামলাতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়। হারুনাবাদ এলাকায় পাশাপাশি ৩টি বস্তি রয়েছে। কবির মোল্লার বস্তির পাশে সাত্তার মোল্লা ও নাজির আলির বস্তি। কবির মোল্লা বস্তির আয়তন প্রায় ২৫ একর। আগুনে বস্তির প্রায় ২ হাজার ঘর ভূস্মীভূত হয়েছে। এই বস্তিতে প্রায় ১৫ হাজার লোকের বসবাস। বস্তির ঘরগুলো ছিল ঘিঞ্জিমতো। একটির সঙ্গে আরেকটি লাগোয়া। ফাঁকা স্থান তেমন ছিল না বললেই চলে। একটি কক্ষে অনেকেই ঠাসাঠাসি করে থাকেন। অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। আবার বস্তিতে প্রায় অধিকাংশ দক্ষিণ অঞ্চলের নদীভাঙা লোকজনের বসবাস। কেউ গার্মেন্টশর্মী, কেউ রিকশাচালক, কেউ কায়িক শ্রমিক। বস্তির মধ্যে ছিল একাধিক খাবারের দোকান। ছিল একাধিক চায়ের দোকান। বস্তির পূর্বপাশের বাসিন্দা ভ্রাম্যমাণ চা-বিক্রতো মো. গিয়াসউদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, কালশি এলাকায় গভীর রাতে বিক্রি করে ঘরে আসি। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমে একটু চোখ এঁটে এসেছিল। এসময় আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনে ঘর থেকে দ্রুত বের হয়ে আসি। আমার কক্ষে উপার্জন করা ৩০ হাজার টাকাসহ সব জিনিস পাতি পুড়ে গেছে। বেঁচে থাকার কিছুই নেই।
আলমাসউদ্দিন নামে এক গার্মেন্টকর্মী জানান, গত পাঁচ বছর আগে ভোলার বোরহানউদ্দিন এলাকায় নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বস্তির একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছিলাম। গ্রামের বাড়ি নদীতে নিয়েছে আর বস্তির ঘর আগুনে নিলো। এখন কোথায় যাবো? এসময় কোলের শিশুকে নিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বস্তির বাসিন্দা জেসমিন বেগম জানান, তার স্বামী রাজমিস্ত্রি। অভাবের সংসারে তিন মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে তিনি মাথা গুঁজেছিলেন এ বস্তিতে। রাতে ছেলে পানি খাওয়ার জন্য ঘুম ভাঙলে তিনি আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পান। তিনি আরও জানান, স্বামীকে বিদেশ পাঠাবো এজন্য কিস্তি থেকে চার লাখ টাকা উঠিয়ে জমা দিয়েছি। ট্রাভেলস বলেছে কয়েক দিনের মধ্যে তার ফ্লাইট হবে। কিন্তু তার টাকা এবং বিদেশ যাওয়ার সব কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। জেসমিন বারবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, আমি এ টাকা কোথা থেকে পরিশোধ করবো। আজ আমার স্বপ্ন পুড়ে ছাই।
তবে বস্তির বাসিন্দা সোহরাব আলী নামে এক রিকশাচালক জানান, বস্তির রাস্তাগুলো অনেক সুরু। এতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো ঢুকতে অসুবিধা হচ্ছিল। তিনি আরও জানান, এছাড়া আশপাশের রাস্তার পাশে নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য ইট ও বালু ফেলে রাখা হয়েছিল। এতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে বাধা পায়। আগুনের খবর দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার কারণে বস্তির লোকজন দ্রুত বের হয়ে আসতে পেরেছেন। না তো ভয়াবহ আগুনে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। তিনি আরও জানান, আগুনে সবকিছু পুড়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে কেউ আবার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হারুনাবাদ এলাকার এক বাসিন্দা মানবজমিনকে জানান, বস্তিটি দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী একটি মহল উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এই আগুনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। সূত্র জানায়, এই বস্তির গ্যাসের লাইন, বৈদুত্যিক লাইন এবং ডিসের লাইন সব অবৈধ। একটি চক্র অবৈধভাবে এই বস্তিতে এসব লাইন সংযোগ দিয়ে তারা মোটা অংকের চাঁদা তুলে থাকে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল আহমেদ জানান, বস্তির ঘরগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লাগায়ো। এতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া সকালে বাতাসের কারণে আগুন আরও লেগে যায়। তিনি আরও জানান, আগুনের ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের পরিচালক দেবাশীষ বর্মনকে।
আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় সংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমার এলাকার মানুষ এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের সব সম্পদ পুড়ে গেছে। তাদের খোলা আকাশের নিচে আমি রাখতে পারি না। তিনি আরও জানান, এজন্য তাদের খাওয়া-দাওয়া এবং থাকার ব্যবস্থা করেছি। তাদের থাকার জন্য আমার ভবন কুজরত আলী মার্কেটের ৬টি ফ্লোর ছেড়ে দিয়েছি। প্রত্যেকটা ফ্লোর ২৬ হাজার বর্গফুটের। এখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। অন্যদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসন প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেবে বলে আমাকে জানিয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইডের ম্যানেজার আ. ম. নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের বস্তিবাসীদের নিয়ে কারো তেমন চিন্তাভাবনা নেই। এজন্য বারবার দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। এগুলো ঠেকাতে হবে। এখানে আমরা তাদেরকে তাৎক্ষণিক কী কী সহযোগিতা করা যায় তা নির্ণয় করছি। পল্লবী থানার ডিউটি অফিসার রোখসানা বেগম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ ঘটনায় কোনো আহত ও নিহত না হওয়ায় মামলা দায়ের হয়নি।
No comments