হাওরের বাঁধে বাঁধভাঙা অনিয়ম by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
এবার
টাকা এসেছে বেশি। লুটপাটের সুযোগও তাই বেশিই মিলছে। সুনামগঞ্জের হাওরপারে
বাঁধ নির্মাণের টাকা খরচ হচ্ছে যাচ্ছেতাইভাবে। গত বছর উজান থেকে নেমে আসা
পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের ১৫৪টি হাওরের
বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি
কৃষক পরিবারের সদস্য। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে।
এর প্রেক্ষিতে এবার ঠিকাদারদের পরিবর্তে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি)
মাধ্যমে বাঁধের কাজ করানো হচ্ছে। তবে পিআইসিও ঠিকাদারদের পথেই হাঁটতে শুরু
করায় ফসলরক্ষা করতে পারবেন কিনা এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন সুনামগঞ্জের হাওরপারের
কৃষকরা।
এবার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ এসেছে ১২২ কোটি টাকা। গতবারের চেয়ে বরাদ্দ বেশি আসায় অনেক ক্ষেত্রেই টাকা খরচ হচ্ছে পিআইসির ইচ্ছেমতো সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়ভাবে। বোরো ফসল রক্ষায় আবশ্যক অনেক হাওরে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ না করে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের টাকা দিয়ে শহর রক্ষা বাঁধ, গ্রামের যাতায়াতের রাস্তা, কোনো দিন কাজে আসবে না এমন রাস্তাও নির্মাণ করা হচ্ছে। সবচেয়ে আজগুবি কাজ হয়েছে সদর উপজেলার ছোট কাংলার হাওরে। হাওরের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে ধলাই নদী। বাঁধ দিয়ে ধলাই নদীর পানি ঠেকানো যাবে না। কিন্তু বাঁধের কাজ না থাকলে তো প্রকল্প মিলবে না। আর এ কারণেই ছোট কাংলার হাওরের বালুচর হাটি থেকে চকেরগাঁও পর্যন্ত তিন কিলোমিটার উঁচু সড়ক তৈরি করা হয়েছে। এটা বাঁধ না সড়ক কিছুই বুঝতে পারছেন না স্থানীয় কৃষকরা। কারণ, এখানে সড়কের কোনো প্রয়োজনই নেই এবং এটি কোনো কাজেও আসবে না। আর এটির বাঁধ হওয়ারও কোনো যুক্তি নেই। মাঝখানে নদী খোলা রেখে তৈরি হওয়া এ ‘বাঁধ’ ফসল রক্ষায় কোনো কাজেই আসবে না। জানা গেছে, দুটো প্রকল্প মিলিয়ে এ বাঁধ তৈরি হয়েছে। বাঁধের পাশে সাইনবোর্ডে লিখা রয়েছে ৪৪ ও ৪৯ নং প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) নাম। ৪৯নং পিআইসির সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন। এ পিআইসির বরাদ্দ ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৭৪ টাকা ৩৮ পয়সা। এর পাশের ৪৪ নম্বর পিআইসির সভাপতি মোতালিব মিয়া। ৪৪ নম্বর পিআইসির বরাদ্দ ২১ লাখ ৮১ হাজার ৬৭৭ টাকা ৪৪ পয়সা। অর্থাৎ সরকারি সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা ‘দরিয়া’তেই ঢালা হয়েছে।
অভিযোগ, জগন্নাথপুর উপজেলার গয়াসপুর গ্রাম সংলগ্ন ৩১ ও ৩২ নম্বর প্রকল্পে বাঁধের কাজের ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ইট বিছানো সড়ক তৈরি হচ্ছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নবীনগর-ধাড়ারগাঁও এলাকায় দুটি প্রকল্প গ্রহণ করে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। মোহনপুর ইউনিয়নে বাঁধের নাম ভাঙিয়ে চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ডলুরা হতে কাইয়ারগাঁও-জরজরিয়া সড়কের কাজ হচ্ছে বাঁধের টাকায়। এ ছাড়া মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের দরিয়াবাজ গ্রামে দেখারহাওরে মধ্যবর্তী স্থানে যে বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে এরও কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানা গেছে। গৌরারং ইউনিয়নের ইনাতনগর থেকে উজান রামনগর পর্যন্ত পিআইসির বাঁধগুলোও অপ্রয়োজনীয় বলে জানা গেছে। একইভাবে দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের সুরমা নদীর পাড়ে নির্মিত বাঁধটিও বোরো ফসল রক্ষায় কোনো কাজে আসবে না বলে জানা গেছে। কাজে আসবে না দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নে খাগাউড়া-সেচনি-বাংলাবাজার বাঁধটিও। এ ছাড়া বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের পুটিয়া হাওরে ২৭, ২৮, ৪২, ৪৩ নম্বর পিআইসির বাঁধ, চলতি নদীর ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪ পিআইসির বাঁধগুলো ফসলরক্ষায় কাজে আসবে না বলেই জানা গেছে।
সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়মের যেন শেষ নেই। নিয়ম অনুযায়ী বাঁধের ৫০ মিটার (১৬৪ ফুট) দূর থেকে মাটি এনে বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও বেশির ভাগ পিআইসি এর তোয়াক্কা করছে না। বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন করেই চলছে বাঁধ নির্মাণের কাজ। এর ফলে বাঁধের ভিত্তি দুর্বল হওয়ায় বাঁধগুলোর পানির চাপ সামলাতে না পেরে ভেঙে পরবে বলেই কৃষকদের আশঙ্কা।
বাঁধের নিচের অংশ উপরের অংশের তিনগুণ হওয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ বাঁধেই নিচের অংশ সরু করা হয়েছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের পকেট ভারি হলেও বাঁধগুলো সহজেই ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাটি শক্তভাবে বসানোর জন্য প্রতিটি বাঁধে বাধ্যতামূলকভাবে দুরমুশ করার কথা থাকলেও, কোনো বাঁধেই দুরমুশের কাজ হয়নি। অথচ এ কাজের জন্য ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অর্থাৎ এ টাকার পুরোটাই ঢুকেছে বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের পকেটে। বৃষ্টির পানি যাতে বাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বাঁধে ঘাস লাগানোর কথা থাকলেও বাঁধ নির্মাণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এর ধারে কাছেও যাচ্ছে না। এ খাতে বরাদ্দকৃত টাকার পুরোটাই লোপাট হয়েছে। কোথাও কোথাও মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
হাওরে বাঁধের কাজের অনিয়ম প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেন গুপ্তা মানবজমিনকে বলেন, দিরাই-শাল্লার বাঁধের ব্যাপারে আমি আশাবাদী- এবার আর ফসলহানি হবে না। বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য, দু-একটা ঘটনা এরকম ঘটেছিল, তৎক্ষণাত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনেকেই মুচলেকা দিয়েছেন।
এবার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ এসেছে ১২২ কোটি টাকা। গতবারের চেয়ে বরাদ্দ বেশি আসায় অনেক ক্ষেত্রেই টাকা খরচ হচ্ছে পিআইসির ইচ্ছেমতো সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়ভাবে। বোরো ফসল রক্ষায় আবশ্যক অনেক হাওরে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ না করে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের টাকা দিয়ে শহর রক্ষা বাঁধ, গ্রামের যাতায়াতের রাস্তা, কোনো দিন কাজে আসবে না এমন রাস্তাও নির্মাণ করা হচ্ছে। সবচেয়ে আজগুবি কাজ হয়েছে সদর উপজেলার ছোট কাংলার হাওরে। হাওরের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে ধলাই নদী। বাঁধ দিয়ে ধলাই নদীর পানি ঠেকানো যাবে না। কিন্তু বাঁধের কাজ না থাকলে তো প্রকল্প মিলবে না। আর এ কারণেই ছোট কাংলার হাওরের বালুচর হাটি থেকে চকেরগাঁও পর্যন্ত তিন কিলোমিটার উঁচু সড়ক তৈরি করা হয়েছে। এটা বাঁধ না সড়ক কিছুই বুঝতে পারছেন না স্থানীয় কৃষকরা। কারণ, এখানে সড়কের কোনো প্রয়োজনই নেই এবং এটি কোনো কাজেও আসবে না। আর এটির বাঁধ হওয়ারও কোনো যুক্তি নেই। মাঝখানে নদী খোলা রেখে তৈরি হওয়া এ ‘বাঁধ’ ফসল রক্ষায় কোনো কাজেই আসবে না। জানা গেছে, দুটো প্রকল্প মিলিয়ে এ বাঁধ তৈরি হয়েছে। বাঁধের পাশে সাইনবোর্ডে লিখা রয়েছে ৪৪ ও ৪৯ নং প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) নাম। ৪৯নং পিআইসির সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন। এ পিআইসির বরাদ্দ ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৭৪ টাকা ৩৮ পয়সা। এর পাশের ৪৪ নম্বর পিআইসির সভাপতি মোতালিব মিয়া। ৪৪ নম্বর পিআইসির বরাদ্দ ২১ লাখ ৮১ হাজার ৬৭৭ টাকা ৪৪ পয়সা। অর্থাৎ সরকারি সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা ‘দরিয়া’তেই ঢালা হয়েছে।
অভিযোগ, জগন্নাথপুর উপজেলার গয়াসপুর গ্রাম সংলগ্ন ৩১ ও ৩২ নম্বর প্রকল্পে বাঁধের কাজের ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ইট বিছানো সড়ক তৈরি হচ্ছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নবীনগর-ধাড়ারগাঁও এলাকায় দুটি প্রকল্প গ্রহণ করে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। মোহনপুর ইউনিয়নে বাঁধের নাম ভাঙিয়ে চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ডলুরা হতে কাইয়ারগাঁও-জরজরিয়া সড়কের কাজ হচ্ছে বাঁধের টাকায়। এ ছাড়া মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের দরিয়াবাজ গ্রামে দেখারহাওরে মধ্যবর্তী স্থানে যে বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে এরও কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানা গেছে। গৌরারং ইউনিয়নের ইনাতনগর থেকে উজান রামনগর পর্যন্ত পিআইসির বাঁধগুলোও অপ্রয়োজনীয় বলে জানা গেছে। একইভাবে দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের সুরমা নদীর পাড়ে নির্মিত বাঁধটিও বোরো ফসল রক্ষায় কোনো কাজে আসবে না বলে জানা গেছে। কাজে আসবে না দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নে খাগাউড়া-সেচনি-বাংলাবাজার বাঁধটিও। এ ছাড়া বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের পুটিয়া হাওরে ২৭, ২৮, ৪২, ৪৩ নম্বর পিআইসির বাঁধ, চলতি নদীর ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪ পিআইসির বাঁধগুলো ফসলরক্ষায় কাজে আসবে না বলেই জানা গেছে।
সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়মের যেন শেষ নেই। নিয়ম অনুযায়ী বাঁধের ৫০ মিটার (১৬৪ ফুট) দূর থেকে মাটি এনে বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও বেশির ভাগ পিআইসি এর তোয়াক্কা করছে না। বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন করেই চলছে বাঁধ নির্মাণের কাজ। এর ফলে বাঁধের ভিত্তি দুর্বল হওয়ায় বাঁধগুলোর পানির চাপ সামলাতে না পেরে ভেঙে পরবে বলেই কৃষকদের আশঙ্কা।
বাঁধের নিচের অংশ উপরের অংশের তিনগুণ হওয়ার কথা থাকলেও বেশির ভাগ বাঁধেই নিচের অংশ সরু করা হয়েছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের পকেট ভারি হলেও বাঁধগুলো সহজেই ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাটি শক্তভাবে বসানোর জন্য প্রতিটি বাঁধে বাধ্যতামূলকভাবে দুরমুশ করার কথা থাকলেও, কোনো বাঁধেই দুরমুশের কাজ হয়নি। অথচ এ কাজের জন্য ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অর্থাৎ এ টাকার পুরোটাই ঢুকেছে বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের পকেটে। বৃষ্টির পানি যাতে বাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বাঁধে ঘাস লাগানোর কথা থাকলেও বাঁধ নির্মাণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এর ধারে কাছেও যাচ্ছে না। এ খাতে বরাদ্দকৃত টাকার পুরোটাই লোপাট হয়েছে। কোথাও কোথাও মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
হাওরে বাঁধের কাজের অনিয়ম প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেন গুপ্তা মানবজমিনকে বলেন, দিরাই-শাল্লার বাঁধের ব্যাপারে আমি আশাবাদী- এবার আর ফসলহানি হবে না। বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য, দু-একটা ঘটনা এরকম ঘটেছিল, তৎক্ষণাত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনেকেই মুচলেকা দিয়েছেন।
No comments