লিডারশিপ এবং উন্নয়নবিষয়ক প্রশিক্ষণগুলো কাজে লেগেছে
গুলসান
নাসরীন চৌধুরী একজন নারী উদ্যোক্তা। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ও রেডিয়েন্ট
ইন্সটিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপার্সন। সাফল্যের সঙ্গে বাংলাদেশ উইমেন
চেম্বার কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন
তিনবার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- শিল্পী নাগ
* যুগান্তর: কিভাবে ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন এ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: আমি তখন দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়েদের তৈরি জিনিস নিয়ে মিনা বাজারের আয়োজন করে। নতুন কিছু তৈরির প্রতি সবসময় ঝোঁক ছিল আমার। আমি শার্টিনের ফিতা দিয়ে সুন্দর সুন্দর চুলের রিবন, জন্মদিনে কাগজের রঙবেরঙের টুপি তৈরি করি। মিনা বাজারে আমার তৈরি সব পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। এতে উৎসাহ বাড়ল। দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকায় হলিক্রস কলেজে আইএ ভর্তি হই। ১৯৭৭ সালে আইএ পরীক্ষা দিয়েই গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইন্সটিটিউটে গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হই। ১৯৭৮ সালে গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হই। কারিগরি প্রশিক্ষণে প্রথম হওয়ায় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত থেকে রাষ্ট্রপতি পদক পাই। অনেকটা সময় চলে যায় ফ্রিল্যান্স কাজ করে। এরপর ২০০৪ সালে ইন্টেরিয়র, বনসাই, ইকোবেনা, ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর স্কাই হাই পার্টনারশিপে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু ব্যবসায় লাভ না হওয়ায় ২০০৭ সালে নিজ উদ্যোগে রেডিয়েন্ট ইন্সটিটিউট অব ডিজাইন এ ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং কোর্স দিয়ে শুরু করি। এর সঙ্গে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের কোর্স যুক্ত করি। কোর্সের মেয়াদকাল ছিল ছয় মাস। পরে মাচেন্টডাইর্জিং, অটোকেট, গ্লাস পেইন্ট, জুয়েলারি ডিজাইন এ কোর্সগুলো যুক্ত করা হয়। এসব কোর্সগুলো দু-মাস থেকে এক বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্স। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইন, টিভি এ্যাড মেকিং, থ্রিডি ম্যাক্স ইত্যাদি কোর্সও চালু করা হয়েছে।
* যুগান্তর: একজন ব্যবসায়ীতে পরিণত করতে নিজেকে কিভাবে তৈরি করেছেন? যদি বলেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ফ্যাশন ডিজাইনিং, মার্চেন্টডাইর্জিং ইত্যাদি ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা ও পারদর্শিতারও দরকার। ২০১৩ সালে আমি পাকিস্তানের লাহোরে রিজিওনাল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ওয়ার্কশপ, ঢাকায় ১০ম উইমেনস এ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রিয়াল মিটিং পার্টনার্স ফোরামে অংশ নিই। একই বছর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগামে অংশ নিই। ২০১৫ সালে ঢাকায় ইউনিভার্সিটি উইমেন এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাব আয়োজিত এনকারেজিং অ্যান্ড ডেভেলপিং উইমেন এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড কন্টিবিউটিং টু ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টে অংশ নিই। বিশেষ করে লিডারশিপ এবং ব্যবসা উন্নয়নবিষয়ক প্রশিক্ষণগুলো ব্যবসা পরিচালনা উন্নয়নে আমার অনেক কাজে লেগেছে।
* যুগান্তর: আপনার এ উদ্যোগে নারীদের কাছ থেকে কি রকম সাড়া পেয়েছিলেন বলে আপনি মনে করেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী : প্রথম প্রথম নারীরা এ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে আগ্রহী হলেও অভিভাবকরা আগ্রহ দেখাতেন না। অভিভাবকদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, ফ্যাশন ডিজাইন মানেই তার মেয়ে র্যাম্পে মডেলে পরিণত হবে।
* যুগান্তর: এ সমস্যা থেকে কিভাবে বেরিয়ে এসেছিলেন? যদি বলেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: অভিভাবকদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। এর ফলে অনেকে’র কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেতে থাকি। নারীরা যখন কাজ শুরু করল এরপর তাদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কোর্স চলাকালীন সময়ে ওদের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে ইন্টার্ন করাই।
* যুগান্তর: কোর্স সম্পন্ন হওয়ার পর ওরা কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: ফ্যাশন ডিজাইনিং ও ইন্টেরিয়রের কোর্স কারিকুলাম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, কোর্স সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওরা স্বাবলম্বী হতে পারে। কোর্স চলা সময়ে ফ্যাশন শো, প্রদর্শনী, মেলা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। কাজের মাধ্যমে তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে পরিচিত করে দেয়া হয়। বার্য়িং হাউসে মার্চেন্টডাইজার হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়া ইভেন্টে ম্যানেজমেন্ট ফার্মে ড্রেস ডিজাইনার, গার্মেন্টে ফ্যাশন ডিজাইনার, মিডিয়াতে কস্টিউম ডিজাইনার এমনকি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে ড্রেস প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করতে পারে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, আর্কিটেকচার ফার্ম, মিডিয়াতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ ব্যবসা করতে চাইলে ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, ব্যাংক হিসাব খোলা ইত্যাদি ব্যাপারে সহযোগিতা করা হয়।
* যুগান্তর: এসব পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে কিনা? তারা কি অনুকূল পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন এ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ফ্যাশন ডিজাইনিং, ইকোবেনা, বনসাই ইত্যাদি জায়গাগুলোতে ছেলেমেয়ে উভয় হলেও নারী শিক্ষার্থী শতকরা ৯০ ভাগ। এক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। ইন্টেরিয়র এবং ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে তারা ভালো করছে। কারণ তারা কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়ায় সেরাটাই দিয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ নারীকেই ঠিক করে নিতে হবে। একজন নারী ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাছে বাড়ির কর্ত্রী যতটা খোলামেলা পুরুষ ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাছে তিনি সেভাবে বলতে পারেন না। সে কারণেই নারীরা ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ভালো করছে। নারী ফ্যাশন ডিজাইনারদের কাছেও মেয়েরা স্বাচ্ছন্দ্যভাবে তাদের সমস্যাগুলোর কথা বলতে পারেন। যা একজন পুরুষ ফ্যাশন ডিজাইনারের কাছে বলতে পারেন না।
* যুগান্তর: পরিবার থেকে কতখানি সহযোগিতা পেয়েছেন, এখনও পাচ্ছেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: বাবা আইনজ্ঞ ছিলেন। তিনি তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। আমি বাবাকে ‘বাংলাদেশ গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক্স ইন্সটিটিউট’ এ ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতেই বাবা বলেছিলেন, ‘এটা শিখে কি হবে?’ আমি বলেছিলাম, সিরামিক্স ইন্ডাস্ট্রি করব। বাবা বাধা দেননি। আমার যখন দুই বা আড়াই বছর বয়স তখন বড় আপুর বিয়ে হয়ে বিদেশ চলে যান। চার ভাইয়ের আদরের ছোট বোন হওয়ায় ভাইয়েরা আমার ইচ্ছাকে সবসময় প্রাধান্য দিয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর স্বামী ডা. সঙ্গে ইরানে চলে যাই। কিন্তু সিরামিক্স ইন্ডাস্ট্রি না দিলেও সেখানে আমি পুঁতি, পাথর, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে গহনা তৈরি করে মার্কেটে দিতাম। সেখানেও আমার তৈরি জিনিসের চাহিদা দেখে আমার মনোবল বেড়ে যায়। স্বামী তার কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকলেও আমার কাজে কখনও বাধা দেননি।
* যুগান্তর: কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন অনেক স্বীকৃতি? সে সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: যে কোনো স্বীকৃতি আনন্দের। ২০০৬ সালে পেয়েছি বেগম রোকেয়া সাইনিং পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড, ২০০৮ সালে বেগম রোকেয়া সম্মাননা, মরর বিজনেস অ্যাওয়ার্ড, ২০০৯ সালে এ-ওয়ান টেলিমিডিয়া স্বাধীনতা অ্যাওয়ার্ড, বেনারসি অ্যাওয়ার্ড, কাগজ কলম নারী উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড, ২০১০ সালে ক্লাসিক ম্যাগাজিন বিজনেস অ্যাওয়ার্ড, ২০১১ সালে এফবিসিসিআই এসএমই অ্যাওয়ার্ড, ২০১৩ সালে ক্লাসিক ম্যাগাজিন বিজনেস অ্যাওয়ার্ড, ২০১৬ সালে ইউনিক অ্যান্ড ইউনাইটেড ইনার হুইল অ্যাওয়ার্ড, মানবাধিকার শান্তি পদক ও দীপালোক সম্মাননা পদক।
* যুগান্তর: কিভাবে ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন এ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: আমি তখন দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়েদের তৈরি জিনিস নিয়ে মিনা বাজারের আয়োজন করে। নতুন কিছু তৈরির প্রতি সবসময় ঝোঁক ছিল আমার। আমি শার্টিনের ফিতা দিয়ে সুন্দর সুন্দর চুলের রিবন, জন্মদিনে কাগজের রঙবেরঙের টুপি তৈরি করি। মিনা বাজারে আমার তৈরি সব পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। এতে উৎসাহ বাড়ল। দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকায় হলিক্রস কলেজে আইএ ভর্তি হই। ১৯৭৭ সালে আইএ পরীক্ষা দিয়েই গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইন্সটিটিউটে গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হই। ১৯৭৮ সালে গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হই। কারিগরি প্রশিক্ষণে প্রথম হওয়ায় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত থেকে রাষ্ট্রপতি পদক পাই। অনেকটা সময় চলে যায় ফ্রিল্যান্স কাজ করে। এরপর ২০০৪ সালে ইন্টেরিয়র, বনসাই, ইকোবেনা, ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর স্কাই হাই পার্টনারশিপে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু ব্যবসায় লাভ না হওয়ায় ২০০৭ সালে নিজ উদ্যোগে রেডিয়েন্ট ইন্সটিটিউট অব ডিজাইন এ ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং কোর্স দিয়ে শুরু করি। এর সঙ্গে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের কোর্স যুক্ত করি। কোর্সের মেয়াদকাল ছিল ছয় মাস। পরে মাচেন্টডাইর্জিং, অটোকেট, গ্লাস পেইন্ট, জুয়েলারি ডিজাইন এ কোর্সগুলো যুক্ত করা হয়। এসব কোর্সগুলো দু-মাস থেকে এক বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্স। বর্তমানে গ্রাফিক্স ডিজাইন, টিভি এ্যাড মেকিং, থ্রিডি ম্যাক্স ইত্যাদি কোর্সও চালু করা হয়েছে।
* যুগান্তর: একজন ব্যবসায়ীতে পরিণত করতে নিজেকে কিভাবে তৈরি করেছেন? যদি বলেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ফ্যাশন ডিজাইনিং, মার্চেন্টডাইর্জিং ইত্যাদি ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা ও পারদর্শিতারও দরকার। ২০১৩ সালে আমি পাকিস্তানের লাহোরে রিজিওনাল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ওয়ার্কশপ, ঢাকায় ১০ম উইমেনস এ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রিয়াল মিটিং পার্টনার্স ফোরামে অংশ নিই। একই বছর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগামে অংশ নিই। ২০১৫ সালে ঢাকায় ইউনিভার্সিটি উইমেন এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাব আয়োজিত এনকারেজিং অ্যান্ড ডেভেলপিং উইমেন এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড কন্টিবিউটিং টু ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টে অংশ নিই। বিশেষ করে লিডারশিপ এবং ব্যবসা উন্নয়নবিষয়ক প্রশিক্ষণগুলো ব্যবসা পরিচালনা উন্নয়নে আমার অনেক কাজে লেগেছে।
* যুগান্তর: আপনার এ উদ্যোগে নারীদের কাছ থেকে কি রকম সাড়া পেয়েছিলেন বলে আপনি মনে করেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী : প্রথম প্রথম নারীরা এ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে আগ্রহী হলেও অভিভাবকরা আগ্রহ দেখাতেন না। অভিভাবকদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, ফ্যাশন ডিজাইন মানেই তার মেয়ে র্যাম্পে মডেলে পরিণত হবে।
* যুগান্তর: এ সমস্যা থেকে কিভাবে বেরিয়ে এসেছিলেন? যদি বলেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: অভিভাবকদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। এর ফলে অনেকে’র কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেতে থাকি। নারীরা যখন কাজ শুরু করল এরপর তাদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কোর্স চলাকালীন সময়ে ওদের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে ইন্টার্ন করাই।
* যুগান্তর: কোর্স সম্পন্ন হওয়ার পর ওরা কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: ফ্যাশন ডিজাইনিং ও ইন্টেরিয়রের কোর্স কারিকুলাম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, কোর্স সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওরা স্বাবলম্বী হতে পারে। কোর্স চলা সময়ে ফ্যাশন শো, প্রদর্শনী, মেলা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। কাজের মাধ্যমে তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে পরিচিত করে দেয়া হয়। বার্য়িং হাউসে মার্চেন্টডাইজার হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়া ইভেন্টে ম্যানেজমেন্ট ফার্মে ড্রেস ডিজাইনার, গার্মেন্টে ফ্যাশন ডিজাইনার, মিডিয়াতে কস্টিউম ডিজাইনার এমনকি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে ড্রেস প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করতে পারে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, আর্কিটেকচার ফার্ম, মিডিয়াতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ ব্যবসা করতে চাইলে ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, ব্যাংক হিসাব খোলা ইত্যাদি ব্যাপারে সহযোগিতা করা হয়।
* যুগান্তর: এসব পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে কিনা? তারা কি অনুকূল পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন এ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ফ্যাশন ডিজাইনিং, ইকোবেনা, বনসাই ইত্যাদি জায়গাগুলোতে ছেলেমেয়ে উভয় হলেও নারী শিক্ষার্থী শতকরা ৯০ ভাগ। এক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। ইন্টেরিয়র এবং ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে তারা ভালো করছে। কারণ তারা কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়ায় সেরাটাই দিয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ নারীকেই ঠিক করে নিতে হবে। একজন নারী ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাছে বাড়ির কর্ত্রী যতটা খোলামেলা পুরুষ ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাছে তিনি সেভাবে বলতে পারেন না। সে কারণেই নারীরা ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ভালো করছে। নারী ফ্যাশন ডিজাইনারদের কাছেও মেয়েরা স্বাচ্ছন্দ্যভাবে তাদের সমস্যাগুলোর কথা বলতে পারেন। যা একজন পুরুষ ফ্যাশন ডিজাইনারের কাছে বলতে পারেন না।
* যুগান্তর: পরিবার থেকে কতখানি সহযোগিতা পেয়েছেন, এখনও পাচ্ছেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: বাবা আইনজ্ঞ ছিলেন। তিনি তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। আমি বাবাকে ‘বাংলাদেশ গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক্স ইন্সটিটিউট’ এ ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতেই বাবা বলেছিলেন, ‘এটা শিখে কি হবে?’ আমি বলেছিলাম, সিরামিক্স ইন্ডাস্ট্রি করব। বাবা বাধা দেননি। আমার যখন দুই বা আড়াই বছর বয়স তখন বড় আপুর বিয়ে হয়ে বিদেশ চলে যান। চার ভাইয়ের আদরের ছোট বোন হওয়ায় ভাইয়েরা আমার ইচ্ছাকে সবসময় প্রাধান্য দিয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর স্বামী ডা. সঙ্গে ইরানে চলে যাই। কিন্তু সিরামিক্স ইন্ডাস্ট্রি না দিলেও সেখানে আমি পুঁতি, পাথর, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে গহনা তৈরি করে মার্কেটে দিতাম। সেখানেও আমার তৈরি জিনিসের চাহিদা দেখে আমার মনোবল বেড়ে যায়। স্বামী তার কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকলেও আমার কাজে কখনও বাধা দেননি।
* যুগান্তর: কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন অনেক স্বীকৃতি? সে সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
গুলসান নাসরীন চৌধুরী: যে কোনো স্বীকৃতি আনন্দের। ২০০৬ সালে পেয়েছি বেগম রোকেয়া সাইনিং পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড, ২০০৮ সালে বেগম রোকেয়া সম্মাননা, মরর বিজনেস অ্যাওয়ার্ড, ২০০৯ সালে এ-ওয়ান টেলিমিডিয়া স্বাধীনতা অ্যাওয়ার্ড, বেনারসি অ্যাওয়ার্ড, কাগজ কলম নারী উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড, ২০১০ সালে ক্লাসিক ম্যাগাজিন বিজনেস অ্যাওয়ার্ড, ২০১১ সালে এফবিসিসিআই এসএমই অ্যাওয়ার্ড, ২০১৩ সালে ক্লাসিক ম্যাগাজিন বিজনেস অ্যাওয়ার্ড, ২০১৬ সালে ইউনিক অ্যান্ড ইউনাইটেড ইনার হুইল অ্যাওয়ার্ড, মানবাধিকার শান্তি পদক ও দীপালোক সম্মাননা পদক।
No comments