সরকারি চাকরিতে কোটার কাঁটা by আশরাফুল আলম
চাকরিপ্রত্যাশী
মেধাবীদের মধ্যে সরকারি চাকরির প্রতি, তা যতই নি¤œ পদের হোক না কেন,
একধরনের মোহ বা আগ্রহ আমাদের সমাজে দীর্ঘ দিন ধরে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, ঘুষ, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ ইত্যাদির
পাশাপাশি বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার কারণে লাখো তরুণের চাকরি লাভের লালিত
স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বলতে গেলে কোটা ব্যবস্থাই এখন মেধাবীদের
সরকারি চাকরি লাভের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে যখন
দেখি, ক্লাসের পেছনের সারির কোনো ছাত্র কোটার বলে বলীয়ান হয়ে অপেক্ষাকৃত কম
মেধাবী হয়েও বিসিএস বা বড় কোনো চাকরি বাগিয়ে নিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়;
অন্য দিকে মেধাবী ছাত্র পরীক্ষায় ভালো করেও কোটার বলি হয়ে প্রত্যাশিত চাকরি
না পেয়ে দুর্বিষহ বেকার জীবন পার করে, নীরবে অশ্রু ফেলে তখন ব্যথিত,
উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। এ কোন দেশে আমরা বাস করছি, যে দেশে যথাযথ মেধার
মূল্যায়ন হয় না। যেকোনো অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় আনার জন্য কোটা
ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে- সন্দেহ নেই। এ বিবেচনায় বিশ্বের
অনেক দেশ চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কোটাপদ্ধতি অনুসরণ
করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সাময়িক সময়ের জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে নির্বাহী আদেশে যে কোটাপদ্ধতি
প্রবর্তিত হয়, সেখানেও আদেশের শুরুতেই বলা হয়েছিলÑ সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এ
কোটা নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু সাময়িক সময়ের কথা বলে যে কোটাপদ্ধতি চালু
করা হয়েছিল, দুঃখজনক হলেও সত্য; সামান্য কিছু সংস্কার ছাড়া তা আজো বলবৎ
আছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে সমঅধিকারের কথা আমাদের সংবিধানে
স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সেখানে এ রকম একটি চরম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে
রাখা দেশের জন্য কখনো মঙ্গলজনক ও কাম্য হতে পারে না। অবাক করার বিষয়, এ রকম
একটি বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক, নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বিপক্ষে দীর্ঘ দিনেও
জোরালো কোনো প্রতিবাদ বা আন্দোলন গড়ে উঠতে দেখা যায়নি। এমনকি লাখ লাখ
চাকরিপ্রত্যাশী, যারা মূলত এ ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ শিকার, তারা ভেতরে ভেতরে
ক্ষুব্ধ হলেও, হতাশার আগুনে দগ্ধ হলেও এর তেমন বহিঃপ্রকাশ খুব বেশি
দৃশ্যমান হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে দু-একবার আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা হলেও
সরকারের কঠোর মনোভাব, সরকারি ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধাচরণ, কোটাপ্রাপ্তদের
জোরালো তৎপরতা, বুদ্ধিজীবীদের নির্লিপ্ততাসহ নানাবিধ কারণে এ পদ্ধতির
রহিতকরণ বা বড় ধরনের কোনো সংস্কার সাধন আজো সম্ভব হয়নি। অতি সম্প্রতি
কোটাপদ্ধতির সংস্কারের লক্ষ্যে সচেতন সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও
চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে তৎপরতা লক্ষ করা গেছে, যা আশাব্যঞ্জক। মূলত
বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা নিয়ে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের
সাম্প্রতিক একটি বক্তৃতা তাদের এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে উৎসাহ জুুগিয়েছে। ড.
খান গত ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ আয়োজিত
‘প্রেজেন্ট সিভিল সার্ভিস সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক সেমিনারে
কোটাপদ্ধতির কুফল তুলে ধরার পাশাপাশি কোটাপদ্ধতিকে ’উদ্ভট’ আখ্যায়িত করে তা
তুলে দেয়ার দাবি জানান। তিনি তার গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে উল্লেখ করেন
‘দেশে বর্তমানে ২৫৭ ধরনের কোটা রয়েছে, যা ঐতিহাসিক ও বিশ্বে বিরল ঘটনা।
পৃথিবীর কোনো দেশেই এমন উদ্ভট ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে কোটাব্যবস্থা চালু
করা হয়েছিল দরিদ্রদের ওপরে তুলে আনার জন্য, কাউকে পুরস্কৃত করার জন্য নয়।’
তার এ বক্তব্য দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী এবং অসংখ্য
বেকারের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে
ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এ পদ্ধতির বিপক্ষে ব্যাপক
পাঠক মতামত আসতে থাকে, যার রেশ এখনো অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান
কোটাব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানপরিপন্থী বললেও অত্যুক্তি হবে
না। কেননা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যমূলক নীতির কারণে এ
দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জেগে উঠেছিল। লক্ষ্য
ছিল- একটি শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু কোটা ব্যবস্থার
নামে একটি বিশেষ শ্রেণীকে সুবিধা দেয়া, মূল ধারায় আনার নামে মূলধারা থেকে
আরো পেছনে ঠেলে দেয়া পুরোপুরি বৈষম্যের নামান্তর- যা কখনো মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার সমার্থক হতে পারে না। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯(৩) এর (ক) মাধ্যমে
কোটাপদ্ধতির সাংবিধানিক বৈধতা দেয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে- ‘সরকার মনে
করলে বিশেষ শ্রেণীর জন্য বিশেষ বিধান করতে পারবে। অর্থাৎ ‘নাগরিকদের যেকোনো
অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে
পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান করা হইতে রাষ্ট্রকে
নিবৃত্ত করিবে না’। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই অনগ্রসর অংশ কারা? সাধারণভাবে ধরে
নেয়া যায়, এই অনগ্রসর অংশ বলতে মূলত অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকেই
বুঝানো হয়েছে। যদি তাই হয়, তবে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাংলাদেশ যেখানে
একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে, মাথাপিছু আয়
বৃদ্ধিসহ সব শ্রেণীর মানুষের জীবনেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, সরকারের
সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হয়েছে,
সেখানে সংবিধানে অনগ্রসর অংশ হিসেবে যাদের এ সুবিধার আওতায় আনার কথা বলা
হয়েছে, প্রকৃত অর্থে তা তাদের সমাজের মূলধারায় আনার জন্য নয়, বরং তাদের
অন্যায়ভাবে বাড়তি সুবিধা দেয়া বা তাদের পুরস্কৃত করার শামিল। অন্য দিকে
অনগ্রসরদের কথা যদি বলতেই হয়, তবে এখনো অনেক অনগ্রসর, পিছিয়ে পড়া শ্রেণী
আছে, যারা কোনো কোটা সুবিধার আওতায় আসেনি বা এলেও তাদের জন্য নামমাত্র কোটা
রয়েছে। একটি সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান
মাপকাঠি বা বিবেচ্য বিষয় তো হওয়া উচিত একজনের মেধা ও যোগ্যতা। অন্য কিছু নয়
এবং এটাই স্বাভাবিক, গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক নিয়ম। কোটা কখনো নিয়ম হতে পারে
না বা প্রচলিত নিয়মের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে না। কিন্তু এ দেশে
এর স্পষ্ট ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়, যেখানে মেধা, যোগ্যতার চেয়ে কোটাকে বেশি
মূল্যায়ন করা হয়। যার নজির সম্ভবত বিশ্বে কোথাও নেই। বর্তমানে দেশে ৫৬
শতাংশই নিয়োগ দেয়া হয় কোটার ভিত্তিতে, আর বাকি ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে।
কিন্তু ৪৪ শতাংশ পদের জন্য যুদ্ধ করতে হয় হাজার হাজার, কোথাও বা লাখ লাখ
প্রতিযোগীকে।
অন্য দিকে ৫৬ শতাংশের জন্য প্রতিযোগিতা করতে হয় অপেক্ষাকৃত
অনেক কম, কখনো বা পদসংখ্যার চেয়েও কম প্রতিযোগীকেÑ যা চরম অবিচার ও
বৈষম্যমূলক। আমরা জানি, একটি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে মেধার সঠিক
মূল্যায়ন করতে হবে, মেধাবীদের কাজে লাগাতে হবে। বিসিএসসহ প্রথম বা দ্বিতীয়
শ্রেণীর অনেক চাকরি রয়েছে, যেখানে নিয়োগপ্রাপ্তরা প্রশাসন, দেশ পরিচালনা,
নীতিনির্ধারণ ও সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকেন। যার
প্রভাব আমাদের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয়। কাজেই এ ক্ষেত্রে
কোনো ধরনের আপস করা মানে দেশকে পেছনের দিকে, অন্ধকারে ঠেলে দেয়া। আর যেখানে
মেধা, দক্ষতার ভিত্তিতে সব কর্ম সম্পাদিত হয়, সেখানে কেন সুযোগ থাকা
সত্ত্বে¡ও কোটার ভিত্তিতে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীকে জায়গা করে দেয়া হবে। একজন
অযোগ্যকে নিয়োগ দেয়া মানে তার কুফল তিনি যত দিন কর্মরত থাকবেন, তত দিন
জাতি ভোগ করতে থাকবে। যে কারণে কোটা যদি একান্ত রাখতেই হয়, তবে তা রাখতে
হবে ওই ধরনের চাকরিতে, যেখানে মেধা ও যোগ্যতার কিছু ঘাটতি থাকলেও এর ফলাফল
ততটা ভয়াবহ নয়। আর যেহেতু অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের
মূলধারায় আনাই কোটার মূল লক্ষ্য, সেহেতু এ ধরনের চাকরির সুযোগ করে দেয়ার
মাধ্যমেই তা নিশ্চিত করা সম্ভব। বিদ্যমান কোটা বিন্যাসে দেখা যায়, সবচেয়ে
বেশিসংখ্যক কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নামে, যা ৩০ শতাংশ।
আর মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ, সমালোচনা থাকলেও অত্যন্ত
স্পর্শকাতর বিধায় প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা লক্ষ করা যায় না। এমনকি
মানবাধিকার, সমানাধিকার নিয়ে যারা মাঠ গরম রাখেন কিংবা যারা শিক্ষাবিদ,
বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত, তারাও এ ব্যাপারে খুব একটা মুখ খোলেন না। পাছে
স্বাধীনতাবিরোধীর তকমা লেগে যায় এই ভয়ে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ
সন্তান, এ বিষযে কারো সংশয় নেই। তাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হোক, তা সবারই
কাম্য। তাদের অবদানের প্রতিদান দেয়া কিংবা তাদের মর্যাদাকে সুপ্রতিষ্ঠিত
রাখার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা জানি,
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বর্তমান সরকার তাদের পুনর্বাসন ও
আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যা আগে লক্ষ
করা যায়নি। প্রয়োজনে আরো নতুন নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের প্রতি যথাযথ
সম্মান নিশ্চিত করা যেতে পারে, যে কর্মসূচির মাধ্যমে কোনো মেধাবী
ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু কোটার মাধ্যমে তাদের সন্তান এমনকি
নাতি-নাতনীদের চাকরির সুযোগ করে দেয়ায় মেধাবীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা
জানি, ডাক্তারের ছেলে বলে কেউ বাবার সম্মান বা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন
না। এ জন্য তাকে আলাদাভাবে পরিশ্রম করে প্রথমে ডাক্তার হতে হয়। তেমনিভাবে
বাবার যোগ্যতার বা অবদানের প্রতিদানে স্বভাবিক নিয়মে সন্তান বা নাতি-নাতনী
কখনো রাষ্ট্রীয় কোনো সুবিধা ভোগ করতে পারেন না। অথচ মুক্তিযোদ্ধা কোটার
ক্ষেত্রে আমরা তাই লক্ষ করছি তা কতটা যুক্তিযুক্ত? শুধু তাই নয়,
বংশপরম্পরায় তাদের এ কোটাসুবিধার আওতায় আনা হয়েছে যা ক্ষতিগ্রস্ত,
হতাশাগ্রস্ত করছে মেধাবী তরুণসমাজকে, ক্ষতিগ্রস্ত করছে দেশ ও জাতির
ভবিষ্যৎকে। ধরে নিই একজন মুক্তিযোদ্ধার পাঁচ সন্তান রয়েছে এবং প্রত্যেকের
আবার তিনজন করে ছেলেমেয়ে আছে। তাহলে দেখা যাবে, একজনের বদৌলতে মোট (১+৫+১৫)
২১ জন এই কোটাসুবিধা ভোগ করবেন। একটি সভ্য দেশে এ রকম উদ্ভট, অযৌক্তিক
ব্যবস্থা চলতে পারে না। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের বিরোধিতা ছাড়া প্রত্যক্ষ বা
পরোক্ষভাবে সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন বা সহযোগিতা করেছেন। আর
যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন তারা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে,
প্রতিদানের আশায় কিংবা কোনো কোটার জন্য যুদ্ধ করেননি। তারা যুদ্ধ করেছেন
একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য, সবার সম-অধিকার নিশ্চিত করার জন্য।
আর কোটাব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে এই লক্ষ্য ও চেতনার পরিপন্থী। কাজেই তাদের
সন্তান বা নাতি-নাতনীদের চাকরিতে কোটাসুবিধার মাধ্যমে চাকরি লাভের সুযোগ না
দিয়ে যাতে তারা যোগ্য, মেধাবী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক
চাকরির পরীক্ষায় অন্যদের মতো যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারে, সে জন্য
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া বেশি যুক্তিযুক্ত ও সম্মানজনক। বর্তমান
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে সবার আগে মেধাকে অগ্রাধিকার দিতে
হবে, জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে। আর এ জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে
যোগ্য, মেধাবীদের অংশগ্রহণ বা নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
অথচ বিদ্যমান কোটাব্যবস্থা মেধাকে অবজ্ঞা করার শামিল। অত্যন্ত সুখের বিষয়
যে, বর্তমানে অনেকেই বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার বিপক্ষে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
সবাই এ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা না গেলেও অন্তত সংস্কার করে যৌক্তিক
পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছেন। ভুক্তভোগী তরুণছাত্রসমাজ এর প্রতিবাদে
জেগে ওঠার চেষ্টা করছে। এমনকি অনেক কোটাপ্রাপ্ত বা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এ
পদ্ধতি অসম্মানজনক, অবমাননাকর বিবেচনায় এর সংস্কার চেয়েছেন। কাজেই যত দ্রুত
এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া যাবে, ততই একটি বৈষম্যহীন, সভ্য ও জ্ঞানভিত্তিক
স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ সহজ হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ashraful.sw@gmail.com
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ashraful.sw@gmail.com
No comments