নিজের জন্য গর্ত খুঁড়েছেন শি জিনপিং -সিএনএনের বিশ্লেষণ
আজীবন
প্রেসিডেন্ট থাকার যে বৈধতা পেয়েছেন চীনের শি জিনপিং দীর্ঘমেয়াদে তার জন্য
তা রাজনৈতিক বিপদ ডেকে আনবে। এটা হবে তার জন্য বিপর্যয়কর। চীনের
প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংকে আজীবন প্রেসিডেন্ট করার বৈধতা দেয়ার পর এমন সব
কথাই বলছেন সমালোচকরা। চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত ‘চায়না ইয়ুথ ডেইলি’ পত্রিকার
সাবেক সম্পাদক লি দাতোং এ নিয়ে সরাসরি কড়া মন্তব্য করে বসেছেন। অন্য
সামান্য কিছু বিরোধী মতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনি বলেছেন, এর মাধ্যমে শি
জিনপিং নিজের জন্য নিজেই একটি বিশাল গর্ত খুঁড়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, চীনের
সব রাজনৈতিক দল সবচেয়ে বড় একটি সুযোগ শেয়ার করতেন। তা হলো শীর্ষ নেতার
নির্ধারিত মেয়াদ। কিন্তু তা বাতিল করায় আন্তঃরাজনৈতিক সংঘাত তীব্র হতে
পারে। এ জন্যই আজীবন প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি একটি বিপজ্জনক পন্থা। এ খবর
দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। এতে আরো বলা হয়, রোববার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে শি
জিনপিংকে ওই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এতে তিনিই শুধু আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকবেন,
এমনটা নয়। একই সঙ্গে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে ভাইস প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রেও।
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এই পদটি এমন একজন পেতে চলেছেন যিনি প্রেসিডেন্ট শি
জিনপিংয়ের সবচেয়ে কাছের বলে গণ্য হবেন। এমন বেশ কিছু আস্থাভাজন ব্যক্তি
রয়েছেন তার পাশে। তাদের ভেতর থেকে কাউকে বেছে নেবেন তিনি। এক্ষেত্রে এগিয়ে
আছেন ওয়াং কিশান। তাকে চীনের দুর্নীতিবিরোধী সিজার হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
তিনি দুর্নীতি বিরোধী সাবেক কর্মকর্তা। এ সপ্তাহেই তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট
পদে টেনে নিতে পারেন জিন পিং। তাকে দেয়া হতে পারে বড় ধরনের দায়িত্ব। এর
মধ্য দিয়ে আগামী বছরগুলোতে হাতে হাত রেখে হয়তো চীনকে নেতৃত্ব দেবেন তারা।
ওদিকে জিন পিং ইস্যুতে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক
পরিচালক ডানকান ইনস-কের বলেছেন, তিনি (জিন পিং) হলেন বুলডোজারের মতো। এমন
কোনো রাজনীতিক নেই, যিনি তার সমকক্ষ হতে পারেন অথবা তার প্রতিকূলে দাঁড়াতে
পারেন। সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী নেতা হওয়ার সমস্যা হলো, যদি অন্যায় কিছু
হয় তাহলে কোথায় গিয়ে তার সমাপ্তি ঘটবে, তা সবাই জানেন। রোববার চীনে
সাংবিধানিক যেসব সংশোধন করা হয়েছে তার আরেকটি বড় ইস্যু হলো দুর্নীতি বিরোধী
জাতীয় একটি সার্বিক ক্ষমতাসম্পন্ন এজেন্সি সৃষ্টি করা। এই কমিটির নাম হবে
দ্য ন্যাশনাল সুপারভিশন কমিটি। এ কমিটি হবে মন্ত্রিপরিষদ, সুপ্রিম কোর্ট ও
প্রসিকিউশন অফিসের সম মর্যাদার। দুর্নীতি বিরোধী ক্ষমতা সরকারের যেসব
এজেন্সিকে দেয়া আছে, বিদ্যমান সেসব ক্ষমতা চলে যাবে তাদের হাতে। দলীয়
শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখা অফিস যেখানে তা ব্যবহার করবে তারা। লোকবলও ব্যবহার
করবে। শুধু কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরাই নন, সরকারি যেকোনো কর্তৃত্বে থাকা
যেকাউকেই টার্গেট করতে পারবে এই কমিশন। এর মধ্য দিয়ে জিন পিং যেকোনো
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়ার ক্ষমতা পেয়েছেন। ইনস-কের
বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতা পেয়ে প্রথম দিকে যা
করেছিলেন, ঠিক একই রকম ঘটনা এটাও। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, জিন পিংকে
দেয়া ক্ষমতা সংস্কারের জন্য কতটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক। তবে এই মুহূর্তে
আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না, সরকার সংস্কারের পক্ষে কিভাবে অগ্রসর
হচ্ছে।
No comments