সুধারামের তিন রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড
একাত্তরের
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নোয়াখালীর সুধারামের চার রাজাকারের মধ্যে ৩
জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া অপর আসামিকে ২ বছরের কারাদণ্ড
দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন
সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর
দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারক আবু আহমেদ জমাদার।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন আমির হোসেন ওরফে আমির আলী, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন
ও আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুর। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হলেন আবদুল কুদ্দুস।
আসামিদের মধ্যে আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুর বর্তমানে পলাতক। এরআগে গতকাল
সোমবার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক
অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি এ
মামলার উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা
হয়েছিল। অর্থাৎ যে কোন দিন রায় ঘোষণা করা হবে। এর ৩৪ দিন পর গতকাল রায়ের
জন্য দিন ধার্য করেন বিচারক। আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই
এলাকায় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের তিনটি অভিযোগ রয়েছে।
এ
মামলার আসামিরা হলেন- আমির আহমেদ ওরফে আমির আলী, মো. জয়নাল আবেদীন, আবদুল
কুদ্দুস ও আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুর। তাদের মধ্যে মনসুর পলাতক। মামলার
আরেক আসামি ইউসুফ আলী গ্রেফতার হওয়ার পর অসুস্থ অবস্থায় মারা যাওয়ায় তার
নাম বাদ দেওয়া হয়। মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম ও
রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তরিকুল ইসলাম, গাজী এমএইচ
তামিম ও মাসুদ রানা। প্রসিকিউশন পক্ষে ১৫জন সাক্ষী দেন এবং এবং আসামিপক্ষ
কোন সাফাই সাক্ষী দেয়নি। এ মামলায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৬
নভেম্বর তদন্ত শুরু হলেও অভিযোগ গঠনের আগেই আসামি মো. ইউসুফ আলী গ্রেফতারের
পর অসুস্থ হয়ে মারা যান। ২০১৫সালের ১৪ অক্টোবর নোয়াখালী ও লক্ষীপুর থেকে
চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২০১৬ সালের ২০ জুন চার আসামিকে হত্যা,
লুণ্ঠণ ও অগ্নিসংযোগের তিন ঘটনায় অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করেন
ট্রাইবূ্যনাল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় নোয়াখালীর সুধারামে
১১১জনকে হত্যা ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রথম অভিযোগ, একাত্তরের
১৫ জুন বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নোয়াখালীর সুধারামের শ্রীপুর ও
সোনাপুরে আসামিরা ৪১জন নিরিহ-নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে এবং তাদের বাড়ী-ঘর
লুট করে। ২য় অভিযোগ, একাত্তরের ১৩ সেপ্টেম্বর আমীর আলীর নেতৃত্বে অপর দুই
রাজাকার মনসুর ও জয়নাল সুধারামের পশ্চিম করিমপুর ও দেবীপুর গ্রামের ২জনকে
আটক করে নির্যাতনের পর হত্যা করে। ৩য় অভিযোগ একই দিনে সকাল ৬টা থেকে বেলা
১১টা পর্যন্ত আসামি আমীর ও মনসুর রামহরিতালুক, দেবীপুর ও উত্তর
চাকলাদারগ্রামে ৩শ জনকে আটক করে নির্যাতন চালায় এবং তার মধ্যে থেকে বেছে
বেছে ৯জনকে গুলি করে হত্যা করে।
No comments