বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা যে কারণে আত্মহত্যা করছে! by অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক
বাংলাদেশের
মেডিকেল ছাত্র-ছাত্রীদের বড় একটা অংশ ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা ভুগছেন। এমনকি
আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে। কী অদ্ভুত, আশ্চর্য পড়াশোনার কারিকুলাম যা এত
মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়! আমি এজন্য আমাদের মেডিকেল
পাঠ্যক্রমকে দায়ী মনে করি। আমাদের মেডিকেল কারিকুলাম ৫০ বছরের পুরনো ধাচের।
চরম অবাস্তব।এটা ভালো ডা. হবারও অন্তরায়। শুধু থিউরিটিক্যাল কচকচি। যেমন
ধরা যাক, ৯৯% ডা. এর কখনও কাজে লাগবে না অ্যানাটমি (anatomy) নামের একটা
সাবজেক্ট। এর বই ১০ কেজি ওজনের। তা-ও পড়ানো হয় প্রায় নির্যাতনের মত করে।
মুখস্থ করো, পরীক্ষার সময় বমি করো। two way communication তেমন নাই।
পড়াশোনা একেবারে আনন্দহীন, রুক্ষ। অথচ সার্জন হবার MS না পরলে এটা কোনও
কাজেই লাগে না। সে সময় এটা আবার করে একইভাবে পড়তে হয়। তাহলে
আন্ডারগ্রাজুয়েটে এটা এতই বিস্তারিত করে, কেন কল্পনাতীত কঠিন করে পড়ানো হয়।
কেন তা এক ধরণের ভীতিপ্রদ করে পড়ানো হয়। বুঝতে পারি না। একটু দাড়ি,কমা ভুল
হলেই ফেল আর ফেল। আমি যতটুকু জানি, আমেরিকার হার্ভার্ড স্কুলেও এটা শুধু
ভাসা ভাসা করে পড়ানো হয়। সেখানে ৪ বছরের med graduation এ প্রথম ২ বছরের
ভেতর anatomy /physiology /pathology /biostatics পড়ানো শেষ করা হয়। কারণ
বিশেষজ্ঞ হওয়ার সময় এটা তারা আরও বিস্তারিত পড়বে। debates /seminer/group
presentation / two way discussion এভাবে মুখরিত থাকে আনন্দময় পড়াশোনা।
তুলনা না করলে বোঝা যাবে না, মেডিসিন ও শিশু /মানসিক/নিউরোমেডিসিন/ এসব আরো
মিলিয়ে এ ৫ বছরে সব মিলিয়ে মাত্র ৫০০ ঘণ্টা, এ জায়গায় অ্যানাটমিতে ৭০০
ঘণ্টার অপচয়। বায়োকেমিস্ট্রি ও প্যাথলজি এতো বিস্তারিত পড়ানো হয় যেনো পাশ
করেই প্যাথলজিস্ট হতে যাচ্ছে। অথচ পোস্ট গ্রাজুয়েশন ছাড়া এ শিক্ষা কোনও
কাজেই লাগে না।
মেধাবী চৌকষ ছাত্র/ছাত্রীরা, হোঁচট খায় শুরুতেই। এই
নিরানন্দ (আর এখন তো মারত্মক ভুত ভবিষ্যৎহীন) পরিবেশে ৪০% med
ছাত্র/ছাত্রীরা ডিপ্রেশনে ভুগছেন। এ কারণে তাদের সুইসাইড করা অসম্ভব কিছু
নয়। এ অঘটনের জন্য বিশেষভাবে দায়ী বেসিক সায়েন্সের অপ্রয়োজনীয় চাপ। দেশ
প্রত্যাশা করে একজন এমবিবিএস ডাক্তার গ্রামের সীমিত সামর্থে এক প্রসূতি
মায়ের কম জটিল obstructive প্রসূতির সফল সন্তান প্রসব করাবেন। এক হাড়
ভাঙ্গা রুগির প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা সুচারুভাবে করে বড় হাসপাতালে পাঠাবেন।
যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, আর্সেনিক, সিফিলিস, জরুরি মানসিক রোগীর তাৎক্ষণিক চিকিৎসা
দেবেন। তাদের প্রশান্তি দেবেন। ইসিজি দেখে রোগ কতটা জটিল ,নির্ধারণ করবেন।
শিশুর নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার সুচিকিৎসা দিতে পারবেন। কিন্তু আমি মনে করি,
আমাদের মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা এসবের চেয়ে বেসিক সায়েন্সের নামে
শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সময় নিয়ে নিচ্ছে। অতি মেধাবী হওয়ায় ডাক্তাররা
বিভিন্ন ট্রেনিং থেকে সাধারণ বিষয়গুলো রপ্ত করছেন। আমার অনুরোধ,বেসিক
সায়েন্সের অযাচিত বিষয় বাদ দিয়ে মেডিকেল পড়াশোনা বাস্তবমুখী করলে
শিক্ষার্থীরা যেমন ব্যাপক আনন্দ নিয়ে পড়বে, তেমনই দেশ ও জনগণেরও বিশেষ
উপকার হবে। তাই বাস্তবতার আলোকে সুচিকিৎসক গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের
চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজান উচিত। আর বাস্তব চিকিৎসা অজ'নের মূল
সময় ইন্টার্নশিপ ২ বছরের হওয়া উচিত।এ সময় একজন সরকারি চিকিৎসকের বেতনসহ
বাড়তি কাজের proportionate অথ' অবশ্যই দেয়া উচিত।এতে আখেরে গ্রামগঞ্জের
মানুষ আরো অভিজ্ঞ চিকিৎসক কাছে পাবে। ইন্ডিয়ান কারিকুলাম আমাদের মত হলেও
তারা ইন্টার্ন থাকার সময়েই MD/MS-এ apply করতে পারে, MD করতে লাগে ৩ বছর।কম
বয়সে বিশেষজ্ঞ হওয়ায় তারা নানা বিষয়ে আরও সূক্ষ্ম জ্ঞান অর্জন করে। যার
কারণে তারা আমাদের চেয়ে ভালো করে।
লেখক: অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক এফসিপিএস, এফআরসিপি (যুক্তরাজ্য), ডিডিভি (অস্ট্রেলিয়া) কন্টেন্ট ক্রেডিট: মেডিভয়েসবিডি
লেখক: অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক এফসিপিএস, এফআরসিপি (যুক্তরাজ্য), ডিডিভি (অস্ট্রেলিয়া) কন্টেন্ট ক্রেডিট: মেডিভয়েসবিডি
No comments