ঋণের উচ্চ সুদ হার
অর্থ
মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা রোববার প্রাক-বাজেট
আলোচনায় বলেছেন, ব্যাংকিং খাত থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ সরিয়ে ফেলার কারণে
ঋণে সুদের হার বাড়ছে। আর কম টাকায় বিনিয়োগ করে লাভের বড় অংশ হাতিয়ে নিচ্ছে
ব্যাংক মালিকরা। বস্তুত তাদের এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ব্যাংকিং খাতের
প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে এসেছে। লক্ষ করা যাচ্ছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই হু হু
করে বাড়ছে ব্যাংক ঋণে সুদের হার। বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে
সুদের হারে নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল। উদ্যোক্তাদের দাবির কারণে সুদ হার
সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে এ হার বাড়তে
শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতেই ১৯ ব্যাংকের
সুদ হার গড়ে দুই অঙ্কে গিয়ে ঠেকেছে। একক ঋণ হিসেবে কোনো কোনো ব্যাংকের সুদ
হার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও নেতিবাচক
প্রভাব পড়বে। গড়ে উঠবে না নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যমান
শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও সম্প্রসারণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ফলে সংকুচিত হবে
কর্মসংস্থানের পথ। তাছাড়া ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে দেশীয় পণ্যের
উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে। এতে ক্ষতির মুখে
পড়বে রফতানি খাত। এটা স্পষ্ট, ব্যাংকিং খাত অর্থ সংকটে পড়ার অন্যতম কারণ
খেলাপি ঋণের ব্যাপকতা। অভিযোগ আছে, আমানতের টাকা ব্যাংক পরিচালকরা নিজেরাই
নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন! আবার সেই ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপি হয়ে
একপর্যায়ে তা অবলোপনও করেন!
অনেকে সেই টাকা বিদেশে পাচার করে সেখানে বাড়ি
কিনে রাখেন, যাতে অবস্থা বেগতিক দেখলে সটকে পড়া যায়। এ শুধু উদ্বেগের বিষয়
নয়, অবাক করা ব্যাপারও বটে। এ চিত্র সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক উভয় খাতেরই।
সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকের পরিচালকরা সরাসরি ব্যাংকের মালিক না হলেও
পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে মালিকের ভূমিকায়ই অবতীর্ণ হন। এক্ষেত্রে তারা
নিজেরা ঋণ না নিলেও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বড় অংকের ঋণ দিতে
তৎপর থাকেন। বস্তুত এসব ঘটনা বড় ধরনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বৈ অন্য কিছু
নয়। অথচ তা প্রতিরোধে নেয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ। উল্টো দুর্নীতিবাজ ও
ঋণখেলাপিদের দায় চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের ওপর। এটি
অনাকাঙ্ক্ষিত। এ পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত
শিল্পোদ্যোক্তারা। বস্তুত এ ধরনের পরিচালকদের কারণেই ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে
খেলাপি ঋণের পরিমাণ। ঋণের সুদ যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে না আনার এটি একটি বড়
কারণ বৈকি। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর হতে হবে।
প্রয়োজন হলে পরিবর্তন করতে হবে সংশ্লিষ্ট আইন। বস্তুত সাম্প্রতিক বছরগুলোয়
ব্যাংকগুলোতে ঋণ জালিয়াতিসহ বেশকিছু বড় ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ধরা
পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ
বিষয়ে এখন আর চোখ বুজে থাকার সুযোগ নেই। দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক
খাতকে এ স্বেচ্ছাচারিতা থেকে বের করে আনতে হবে যে কোনো উপায়ে।
No comments