নিষ্ক্রিয় মহাজোটকে সক্রিয় করছে আওয়ামী লীগ- ৫ জানুয়ারি শীর্ষ নেতাদের বৈঠক

অবশেষে আদর্শিক জোট ১৪ দলকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত এক বছরে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় থাকা এই জোটকে নির্বাচনপূর্ব অবস্থায় ঐক্যবদ্ধ করতে চলছে নানা উদ্যোগ। ৰমতার অংশীদার হয়েও যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়া নিয়ে সৃষ্ট মান-অভিমান, ৰোভ মেটাতে এবং এক বছরের কাজের মূল্যায়নে ১৪ দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে।


দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এটি হবে মহাজোট সরকার ৰমতায় আসার পর প্রথম কোন আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
শুধু চৌদ্দ দলকেই নয়, বছরের শুরম্ন থেকে দলকেও শক্তিশালী করে ঢেলে সাজাতে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর সরকারী বাসভবন যমুনায় আহূত এই বৈঠকে কয়েকটি গুরম্নত্বপূর্ণ সাংগঠনিক ইসু্যতে আলোচনা ও সিদ্ধানত্ম হবে। আর দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাৰরিত বৈঠকে যোগদানের আমন্ত্রণপত্র দু'এক দিনের মধ্যে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে পৌঁছানো হবে। তবে ১৪ দলীয় জোটের শরিক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এ মাসের শেষ সপ্তাহে সারাদেশের তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় তলব করে বিশেষ বর্ধিত সভা করবে ৰমতাসীন দলটি। আর এই বর্ধিত সভার পরই দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফর, সদস্য সংগ্রহ অভিযান এবং কাউন্সিলের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরম্ন হবে। এ ছাড়া আগামী ৬ জানুয়ারি সরকারের এক বছরপূর্তি দিবসে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে সকালে সমাবেশ করারও চিনত্মাভাবনা রয়েছে দলটির।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসনের বিরম্নদ্ধে ও পরবতর্ী প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও নির্বাচনের মধ্যদিয়ে মহাজোট সরকার ভূমিধস বিজয় নিয়ে ৰমতায় আসে। কিন্তু গত এক বছরে শুধু পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চৌদ্দ দলের শীর্ষ নেতাদের একটিবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। বাকি সময় ১৪ দলকে আর সময় দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
আদর্শিক এই জোটের অনেক সিনিয়র নেতারই অভিযোগ, সরকার গঠন ও পরিচালনার ৰেত্রসহ কোন ইসু্যতেই জোটের সঙ্গে কোন আলোচনা বা মতামত গ্রহণ করা হয়নি। এই একটি বছরে জোটের সভার জন্য শরিক দলগুলোর নেতারা চেষ্টা করেও আওয়ামী লীগের পৰ থেকে তারা কোন সাড়া পাননি। নির্বাচনপরবতর্ী সরকার গঠন এবং এক বছরের পথচলায় কোন ভূমিকা এবং কার্যক্রম না থাকায় জোটটি মূলত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। নির্বাচনের পর একমাত্র জোটের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রী করা হয়েছে। বাকিদের মূল্যায়ন না করা নিয়েও প্রকাশ্যে না হলেও শরিক নেতারা ৰোভ ও অসনত্মোষ প্রকাশ করেছেন নানাভাবেই।
আগামী ৬ জানুয়ারি মহাজোট সরকারের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। এর আগে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যমুনায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করে সরকারের এক বছরের কর্মকা-ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আদর্শিক জোট ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সরকারের এক বছরের কর্মকা- নিয়ে মূল্যায়ন, পরামর্শ এবং অভিমান ভাঙাতেই মূলত এই বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সহ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কানত্মি দাস জনকণ্ঠকে জানান, আগামী মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর সরকারী বাসভবন যমুনায় ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগদানের জন্য ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের নামে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাৰরিত আমন্ত্রণপত্র তৈরি করা হচ্ছে। জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ও ন্যাপের (মোজাফফর) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আমন্ত্রণ জানানো হবে এই বৈঠকে। আজ-কালের মধ্যে আমন্ত্রণপত্রটি জোটের শীর্ষ নেতাদের কাছে পেঁৗছে দেয়া হবে। তবে যথারীতি গণফোরামকে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না বলেই সূত্রটি জানিয়েছে।
কাল কেন্দ্রীয় কমিটির সভা
সাংগঠনিক বিষয়ে বেশ কিছু গুরম্নত্বপূর্ণ সিদ্ধানত্ম নিতে আগামীকাল সোমবার যমুনায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরম্নরী সভা আহ্বান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর সরকারী বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে সরকারের এক বছরের কর্মকা-ের মূল্যায়ন, রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ ঢাকায় বিশেষ বর্ধিত সভা, সদস্য সংগ্রহ অভিযান, কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফর এবং সারাদেশে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধানত্ম চূড়ানত্ম করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আগামী ২২ ও ২৩ তারিখ বিশ্ব এজতেমার কারণে বর্ধিত সভা এ মাসের শেষ সপ্তাহে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আহ্বান করা হতে পারে। আর এ সভাতে এবার প্রথম ঠাঁই পাওয়া নতুন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এই বর্ধিত সভার পর পরই সারাদেশে সাংগঠনিক সফরে বের হবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, মূলত বিশেষ বর্ধিত সভার পর পরই ব্যাপক পরিকল্পনায় আনুষ্ঠানিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরম্ন করবে আওয়ামী লীগ।
শনিবার এক বিব"তিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সকল সদস্যকে যথাসময়ে বৈঠকে উপসি'ত হওয়ার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অনুরোধ জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.