এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে!-আগেরগুলোর খবর নেই, ফের নতুন এক- 'দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল-গঠনের উদ্যোগ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের by আবুল কাশেম
'অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণ আইন'-এ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভোজ্য তেল, আদা, রসুন, জিরাসহ বিভিন্ন মসলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেই ১৯৮১ সালের এক আদেশে। ওই আদেশের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে অনেক গবেষণা চালিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দিনকয়েক আগে আবারও এ ধরনের ১৫টি পণ্য অন্তর্ভুক্ত করল ওই আইনে।
মাসের পর মাস বৈঠক করে, নানা আশার বাণী শুনিয়ে বছরখানেক আগে চিনি ও ভোজ্য তেলের জন্য জারি করা হলো পরিবেশক প্রথা। বলা হলো, ডিওর হাতবদলের কারণেই পণ্যের দাম বাড়ে। তাই ডিও প্রথা বাদ দিয়ে পরিবেশক প্রথা চালু করলে সারা দেশে তেল-চিনির বাজার স্থিতিশীল থাকবে। মিল মালিকরা নিজেরাই দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু গত বছর পরিবেশক প্রথা চালুর অল্প কয়েক দিন পর শুরু হওয়া রমজানে চিনি আর এবারের রমজানে ভোজ্য তেলের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিই বলে দিচ্ছে, পরিবেশক প্রথার কার্যকারিতা শুধু কাগজেই রয়েছে, বাস্তবে নেই। এখনো পরিবেশকরা পণ্যের জন্য ধরনা দিচ্ছেন ডিও ব্যবসায়ীদের কাছেই। অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর 'ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর' গঠন করা হলেও ভোক্তার অধিকার রক্ষার কোনো প্রমাণ নেই বাজারে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দেশবাসীকে অনেক আশার আলো দেখিয়ে সংসদে পাস করা হলো 'প্রতিযোগিতা আইন'। সেটা বাস্তবায়নেও কোনো উদ্যোগ নেই।
এভাবে একের পর এক আইন, প্রথা, ব্যবস্থা, কমিটি, সংগঠন আর অফিস তৈরির মতো কাগুজে কাজ সেরেই হাত গুটিয়ে বসে থাকেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সেগুলো বাস্তবে কার্যকর করে সত্যি সত্যিই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখে দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটানোর কাজটুকু আর করতে পারে না কেউ। এই ন্যক্কারজনক ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায়ই আরেকটি নতুন কাজে হাত দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, এবার তারা নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য 'দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল' খুলতে যাচ্ছে। কিন্তু এটিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেকটি লোক দেখানো কাগুজে কাজ বলেই কথা উঠেছে খোদ মন্ত্রণালয়ের ভেতরেই। অথচ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদ্যমান আইনগুলো যথাযথভাবে কার্যকর করতে পারলেই ভোক্তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। কিন্তু সেদিকে মোটেও নজর নেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, এর পেছনেও রয়েছে 'স্বার্থ-বুদ্ধি'। 'টাকাওয়ালা' ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই কর্মকর্তারা সত্যিকারের বাজার নিয়ন্ত্রণের কাজে জোর দেন না। কেবল রমজানের সময় ব্যবসায়ীদের একটি করে নোটিশ দিয়ে আর কিছু কর্মকর্তাকে বাজার মনিটরিংয়ে পাঠিয়েই এক বছরের জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব শেষ করেন তাঁরা। চলতি রমজানে মাছ, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে মন্ত্রণালয়। মজার কথা হলো, এ চিন্তাটাও মন্ত্রণালয়ের কারো মাথা থেকে আসেনি। এসেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে। তারা স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়াতে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধের কথা বলার পর এক কাগুজে আদেশ জারি করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাবিত 'দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল' নামে স্থায়ীভাবে নতুন একটি শাখা খুলতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনও পেয়েছে। অর্থ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সম্মতির অপেক্ষা এখন। জানা গেছে, শুরুতে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূবার্ভাস সেল নাম দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও পরে এর নামকরণ হবে 'দ্রব্যমূল্য গবেষণা ও তদারকি সেল'। এখনই নাম পরিবর্তন করলে সেল স্থাপনে দেরি হওয়ার আশঙ্কায় এ কৌশল নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দামের দিকে তাকালে এর সঙ্গে ভোক্তার চাহিদা ও পণ্যের সরবরাহের সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমানে ট্যারিফ কমিশন পণ্যের আমদানি ও মজুদসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করছে। এর বাইরে আলাদা একটি বিভাগ করা হলে তার কেবল আইনগত ভিত্তি থাকলেই হবে না, কার্যকরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের মতো দক্ষতাও থাকতে হবে। না হলে এ উদ্যোগ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য সব উদ্যোগের মতো সাধারণ উদ্যোগে পরিণত হবে।
দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস সেলের কর্মকর্তাদের দায়িত্বও চিহ্নিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে : বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি (ঋণপত্র) খোলা, এলসি নিষ্পত্তির মূল্য ও পাইপলাইনে (আমদানি পর্যায়ে) থাকা আমদানির পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, বিভিন্ন পণ্যের আমদানির পরিমাণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দৈনিক বাজারদর সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হবে এ সেলের কাজ। বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ এসব কাজ করছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক প্রতি সপ্তাহে পণ্য আমদানির পরিমাণ ও আমদানি মূল্য সম্পর্কে ওই বিভাগকে নিয়মিতভাবে তথ্য সরবরাহ করছে।
নতুন এই সেল গঠনের পেছনে মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হলো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও এটি সুষ্ঠু কাঠামোভিত্তিক নয়। বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কাজ অসংহতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব কার্যক্রমকে একটি সুষ্ঠু কাঠামোভিত্তিক রূপ দেওয়ার জন্যই দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল গঠন করা দরকার। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৫ মে প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায়ও এ সেল গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সেলের জন্য একজন উপসচিবের নেতৃত্বে ছয়জন জনবলের অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
১৯৮১ সালের অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণ আদেশ বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ওই আদেশটি এরশাদ সরকারের সময় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই আইনটি অকার্যকর করে রাখা হয়। আরেক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকার ওই আইনটি বাতিল করেনি। তবে তা বাস্তবায়নেরও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তিনি জানান, আদেশটি কার্যকর করার দায়িত্ব ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তরকে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রীও এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসায়ীদের দমন করার খুব বেশি ম্যাকানিজম নেই। তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব উপায় আছে, সেগুলো এখন আর ব্যবহার করার মতো নেই।
মুক্তবাজার ধারণাটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই ধারণায় দেশের ভেতরেও ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, 'আমরা তো ব্যবসায়ীদের সকাল-বিকেল ধরে এনে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তার সাধ্য অনুযায়ী বাজার স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছে।'
নতুন করে দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস সেল গঠন করা হলে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, 'এ ধরনের একটি সেল গঠন করা হবে। তবে গত কয়েক দিন আমি ঢাকার বাইরে থাকায় এ সম্পর্কে এখন বিস্তারিত বলতে পারছি না।'
এভাবে একের পর এক আইন, প্রথা, ব্যবস্থা, কমিটি, সংগঠন আর অফিস তৈরির মতো কাগুজে কাজ সেরেই হাত গুটিয়ে বসে থাকেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সেগুলো বাস্তবে কার্যকর করে সত্যি সত্যিই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখে দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটানোর কাজটুকু আর করতে পারে না কেউ। এই ন্যক্কারজনক ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায়ই আরেকটি নতুন কাজে হাত দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, এবার তারা নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য 'দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল' খুলতে যাচ্ছে। কিন্তু এটিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেকটি লোক দেখানো কাগুজে কাজ বলেই কথা উঠেছে খোদ মন্ত্রণালয়ের ভেতরেই। অথচ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদ্যমান আইনগুলো যথাযথভাবে কার্যকর করতে পারলেই ভোক্তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। কিন্তু সেদিকে মোটেও নজর নেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, এর পেছনেও রয়েছে 'স্বার্থ-বুদ্ধি'। 'টাকাওয়ালা' ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই কর্মকর্তারা সত্যিকারের বাজার নিয়ন্ত্রণের কাজে জোর দেন না। কেবল রমজানের সময় ব্যবসায়ীদের একটি করে নোটিশ দিয়ে আর কিছু কর্মকর্তাকে বাজার মনিটরিংয়ে পাঠিয়েই এক বছরের জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব শেষ করেন তাঁরা। চলতি রমজানে মাছ, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে মন্ত্রণালয়। মজার কথা হলো, এ চিন্তাটাও মন্ত্রণালয়ের কারো মাথা থেকে আসেনি। এসেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে। তারা স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়াতে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধের কথা বলার পর এক কাগুজে আদেশ জারি করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাবিত 'দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল' নামে স্থায়ীভাবে নতুন একটি শাখা খুলতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনও পেয়েছে। অর্থ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সম্মতির অপেক্ষা এখন। জানা গেছে, শুরুতে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূবার্ভাস সেল নাম দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও পরে এর নামকরণ হবে 'দ্রব্যমূল্য গবেষণা ও তদারকি সেল'। এখনই নাম পরিবর্তন করলে সেল স্থাপনে দেরি হওয়ার আশঙ্কায় এ কৌশল নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দামের দিকে তাকালে এর সঙ্গে ভোক্তার চাহিদা ও পণ্যের সরবরাহের সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্তমানে ট্যারিফ কমিশন পণ্যের আমদানি ও মজুদসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করছে। এর বাইরে আলাদা একটি বিভাগ করা হলে তার কেবল আইনগত ভিত্তি থাকলেই হবে না, কার্যকরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের মতো দক্ষতাও থাকতে হবে। না হলে এ উদ্যোগ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য সব উদ্যোগের মতো সাধারণ উদ্যোগে পরিণত হবে।
দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস সেলের কর্মকর্তাদের দায়িত্বও চিহ্নিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে : বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি (ঋণপত্র) খোলা, এলসি নিষ্পত্তির মূল্য ও পাইপলাইনে (আমদানি পর্যায়ে) থাকা আমদানির পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, বিভিন্ন পণ্যের আমদানির পরিমাণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দৈনিক বাজারদর সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হবে এ সেলের কাজ। বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ এসব কাজ করছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক প্রতি সপ্তাহে পণ্য আমদানির পরিমাণ ও আমদানি মূল্য সম্পর্কে ওই বিভাগকে নিয়মিতভাবে তথ্য সরবরাহ করছে।
নতুন এই সেল গঠনের পেছনে মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হলো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও এটি সুষ্ঠু কাঠামোভিত্তিক নয়। বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কাজ অসংহতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব কার্যক্রমকে একটি সুষ্ঠু কাঠামোভিত্তিক রূপ দেওয়ার জন্যই দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল গঠন করা দরকার। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৫ মে প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায়ও এ সেল গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সেলের জন্য একজন উপসচিবের নেতৃত্বে ছয়জন জনবলের অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
১৯৮১ সালের অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণ আদেশ বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ওই আদেশটি এরশাদ সরকারের সময় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই আইনটি অকার্যকর করে রাখা হয়। আরেক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকার ওই আইনটি বাতিল করেনি। তবে তা বাস্তবায়নেরও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তিনি জানান, আদেশটি কার্যকর করার দায়িত্ব ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তরকে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রীও এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যবসায়ীদের দমন করার খুব বেশি ম্যাকানিজম নেই। তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব উপায় আছে, সেগুলো এখন আর ব্যবহার করার মতো নেই।
মুক্তবাজার ধারণাটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই ধারণায় দেশের ভেতরেও ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, 'আমরা তো ব্যবসায়ীদের সকাল-বিকেল ধরে এনে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তার সাধ্য অনুযায়ী বাজার স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছে।'
নতুন করে দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস সেল গঠন করা হলে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, 'এ ধরনের একটি সেল গঠন করা হবে। তবে গত কয়েক দিন আমি ঢাকার বাইরে থাকায় এ সম্পর্কে এখন বিস্তারিত বলতে পারছি না।'
No comments