ইতিহাসের খোঁজে by মুনতাসীর মামুন

ইতিহাসে বহুদিন ধরে আমরা আছি, বসবাস আমাদের ইতিহাসের মধ্যে, সৃষ্টিও করে চলেছি ইতিহাস। তাই বোধহয় ইতিহাস যে ধরে রাখতে হয় সে বোধ নেই আমাদের। ইতিহাস ছুড়ে ফেলি, উপো করি। আর এদিকে এই সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিত্যনতুন তারা খোঁজে ইতিহাস। বলা যেতে পারে, হন্যে হয়ে খুঁজছে তারা ইতিহাস।


এমনকি অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে, সিডনিতে জাদুঘরে আমি দেখেছি কী যত্নের সঙ্গে এক টুকরো কাঠ রেখে দিয়েছে, দু'শ' বছর আগে তা দিয়ে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল।
আরব আমিরাতে, দুবাইতে সুন্দর ছোট একটি জাদুঘর আছে। স্মৃতিস্মারক তেমন নেই তাতে, কিন্তু নতুন পুরনো স্মারক, ছবি, আলো ও শব্দের সাহায্যে সুন্দর একটি জাদুঘর গড়েছে। গরিব বাণিজ্য পোস্ট থেকে দুবাই কীভাবে দুবাই হলো তা বোঝা যাবে ঐ জাদুঘরে গেলে। আমি অবশ্য প্রচুর বাঙালীকে জিজ্ঞেস করেছি তারা ঐ জাদুঘরের খবর জানে কি-না। না, কেউ জানে না।
আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতেও নেই। তবে তারা হেরিটেজ ভিলেজ বা ঐতিহ্য গ্রাম করে ইতিহাসকে ধরে রাখতে চেয়েছে। বেদুইনরা কীভাবে বসবাস করত তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। শুকনো খেজুর পাতার পর্ণ কুটির, অতি সামান্য কয়েকটি গৃহস্থালি তৈজসপত্র আর মেঝেতে বিছানো কার্পেট। কিছু নেই ইতিহাসের।
আজ আবুধাবিতে সব আছে, দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে, নেই ইতিহাস, নেই শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ঐতিহ্য। আর এ জন্য তারা হন্যে হয়ে উঠছে। ইতিহাস না থাকলে একটি জাতি তো দাঁড়াতে পারে না।
এখানে সবাই ছিল বেদুইন। ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা শিকড়হীনভাবে মরুভূমিতে। সুতরাং কিছু নির্মিত হয়নি। তাদের যা ইতিহাস তা মুখে মুখে প্রচলিত হয়েছে জেনারেশন থেকে জেনারেশনে। সেই প্রচলিত ওরাল হিস্ট্রিও এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।
এখানকার ঐতিহাসিকরা এ বিষয়ে এখন উদ্বিগ্ন। আবুধাবি অথরিটি ফর কালচার এ্যান্ড হেরিটেজ আহ্বান জানিয়েছে নাগরিকদের প্রতি তারা যেন পুরনো চিঠিপত্র, অডিও রেকর্ডিং, ভিডিও, নথি সংগ্রহে সাহায্য করে। রাস আল খামিয়ার সাংবাদিক আবদুল্লাহ আবদুল রহমান একটি বই লিখেছেন, নাগরিকদের স্মৃতিতে আমিরাত [দি ইউএই ইন দ্য মেমোরি অব ইটস সিটিজেন]। এ জন্যে সংগৃহীত ছবি ও সাাতকারসমূহ দান করেছেন ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে। এ জন্য তিনি খবর হয়েছেন। এ স্মারকগুলো কত পুরনো জানেন? মাত্র ত্রিশ বছর। তাঁর নেয়া ১৫০ ঘণ্টার সাাতকার ও ৩০০ প্রতিকৃতি প্রকাশিত হবে। আরব আমিরাত যারা গঠন করেছিলেন তাদের জবানীতে জানা যাবে তেলপূর্ব আমিরাতের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি। ন্যাশনাল লাইব্রেরির পাণ্ডুলিপি বিজ্ঞানের প্রধান জানিয়েছেন, আবদুল রহমানই হচ্ছেন একমাত্র যিনি আমিরাতের পুরনো জীবন [এ্যানসিয়েন্ট লাইফ] লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি যাদের সাাতকার নিয়েছিলেন তারা এখন বেঁচে নেই। সুতরাং তার গবেষণা হয়ে উঠেছে আরও গুরুত্ব। এই সাাতকারগুলো নেয়া হয়েছিল ১৯৮০ সালের দিকে। আমিরাতের এখন ঝোঁক তেলপূর্ব আমিরাত বা প্রাক-আমিরাত পর্বের ইতিহাস ঐতিহ্যের শুধু খোঁজ নয়। সংগ্রহ ও সংরণ। কারা আমিরাত হওয়ার এবং তেল উত্তোলনের পর আমিরাতের পুরনো সব কিছু ভেঙ্গেচুরে নতুন জীবন যে প্রচলন করা হয়েছে যা বৈচিত্র্যহীন এবং যা পাশ্চাত্যে অনুকরণ। আবুধাবির গ্রামীণ ঐতিহ্য সংগ্রহশালায় তাই দেখলাম ১৯৬০ সালের কিছু ছবি খুব যত্নের সঙ্গে রাখা হয়েছে, যেখানে দেখা যায় আবুধাবি ছোট একটি গাঁ, বাসিন্দারা সব হতদরিদ্র, সাধারণ।
আমিরাতে এখন পৃথিবীর জাদুঘরের সহায়তায় জাদুঘর নির্মিত হতে যাচ্ছে। এ জন্য এখনই জাদুঘর কমর্ী তৈরিতে প্রশিণের আয়োজন করা হচ্ছে। যারা জাদুঘরে কাজ করতে আগ্রহী তাদের পাশ্চাত্যে বিভিন্ন জাদুঘরে পাঠানো হচ্ছে 'ইন্টার্ন' হিসেবে। ২০১৩ সালের মতো চারটি বড় জাদুঘর নির্মিত হতে যাচ্ছে আমিরাতে। সেগুলো হলো_
২০১২ মিউজিয়াম অব মিডল ইস্ট মডার্ন আর্ট, কালচার ভিলেজ, দুবাই
২০১২_ গগেনহাইস মিউজিয়াম, সাদিয়াত দ্বীপ, আবুধাবি
২০১২_ লু্যভ আবুধাবি, সাদিয়াত দ্বীপ
২০১৩_ জায়েদ ন্যাশনাল মিউজিয়াম, সাদিয়াত দ্বীপ

No comments

Powered by Blogger.