চরাচর-আজ বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস by বিশ্বজিৎ পাল বাবু

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, মায়ের দুধ নবজাতকের জন্য আদর্শ পুষ্টিকর খাবার। এতে সংক্রামক ব্যাধির আক্রমণ অনেক কমে যায়। মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটে পরিপূর্ণভাবে। মায়েদের স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।


পুনর্গর্ভধারণের দূরত্বও বেড়ে যায়। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে জাতি উপকৃত হয়। মাতৃদুগ্ধ পালনের মধ্য দিয়ে সন্তান ও মায়ের মধ্যে তৈরি হয় এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক।
আজ বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস। ১ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত পালিত হবে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য মানুষকে সচেতন করাই মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালনের উদ্দেশ্য। নবজাতকের সুস্থ ও পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্য জন্মের পর ছয় মাস অবশ্যই মায়ের দুধ খাওয়ানো উচিত, বিশ্বব্যাপী মাতৃদুগ্ধ দান কর্মসূচি প্রচারণায় এ বিষয়ের ওপরই জোর দেওয়া হয়। ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর এ দিবস ও সপ্তাহ পালন করা হয়ে থাকে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে নবজাতক মৃত্যুর হার ২২ শতাংশ কমানো সম্ভব। শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে বছরে ৩৭ হাজার নবজাতকের জীবন রক্ষা পাবে। জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪৩ শতাংশ নবজাতক জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পায়। অথচ জন্মের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার নবজাতক বছরে মারা যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর জন্মের পর প্রথম ২৮ দিনে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার নবজাতক মারা যায়। এই ভয়াবহ চিত্র দেখলেই বোঝা যায়, জন্মের পরপর শিশুকে মায়ের দুধ দেওয়া কতটা জরুরি।
মায়ের দুধের খাদ্য উপাদানে বিশেষ ফ্যাটি এসিড আছে, যা শিশুর বুদ্ধিদীপ্ততা ও চোখের তীক্ষ্নতা বা জ্যোতি বাড়ায়। মায়ের দুধে প্রায় ১০০ উপাদান রয়েছে, যার প্রতিটি উপাদানই শিশুর জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। গরুর দুধে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকলেও এর সবটুকু শিশুর কাজে আসে না। এ ছাড়া গরুর দুধে মায়ের বুকের দুধের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি খাদ্যপ্রাণ বি-১২ থাকে, যার অধিকাংশই শিশুর জন্য অকেজো। মায়ের দুধে ৮৬ ক্যালরি শক্তি বেশি অছে।
সন্তান জন্মদানের পর হলুদাভ ঘন যে দুধ বের হয়, একে শালদুধ বা কোলাস্ট্রাম বলে। পরিমাণ কম হলেও, এটি নবজাতকের জন্য যথেষ্ট। শালদুধে অনেক বেশি রোগপ্রতিরোধক উপাদান ও শ্বেতকণিকা থাকে। এ উপাদান শিশুকে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু থেকে রক্ষা করে। এ দুধ শিশুর অপরিণত অন্ত্রকে পরিপক্ব করে। শালদুধ শিশুর পেটের প্রথম কালো পায়খানা বা মিকোনিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে। মিকোনিয়াম পেটে বেশি থাকলে নবজাতকের জন্ডিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মায়ের দুধ খাওয়ানো অবশ্যই একটি অপরিহার্য জরুরি উদ্যোগ। এতে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। ব্যক্তি ও পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্রকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মক্ষেত্রেও গড়ে তুলতে হবে বুকের দুধ খাওয়ানোর উপযোগী পরিবেশ। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, চাকরিজীবী, গৃহিণী- প্রত্যেক মা তাঁদের সন্তানকে বুকের দুধ দিতে আগ্রহী ও সচেতন হবেন- এটাই হোক 'বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস'-এর প্রধান লক্ষ্য।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু

No comments

Powered by Blogger.