মজিনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের আটটি বাধা
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশের সামনে আটটি বাধা রয়েছে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা। এগুলো হলো- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ, আইনের শাসনের অপ্রতুলতা, দুর্নীতি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো, রেল, সড়ক ও বন্দর ব্যবহারের অপর্যাপ্ত সুযোগ।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সোনার বাংলা গড়তে তৈরি পোশাক শিল্পে সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার সময় অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।
মজিনা বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের বিশ্বে তৈরি পোশাক ও গৃহে ব্যবহৃত কাপড় (শিট, তোয়ালে ও টেবিল ক্লথ ইত্যাদি) রপ্তানির ক্ষেত্রে এক নম্বরে থাকা উচিত। উৎপাদন স্থান হিসেবে চীন ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানা চীন ছেড়ে নতুন স্থান খুঁজছে। আমার মতে, নতুন স্থান বাংলাদেশই হওয়া উচিত।'
তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগসহ মোট আটটি সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এ সীমাবদ্ধতাগুলো বাস্তব। তবে এর প্রতিটিরই সমাধান সম্ভব। বাংলাদেশ সৌভাগ্যবান, কারণ সমস্যাগুলো সমাধানযোগ্য।'
পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের ঋণ চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার না পাওয়ার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুটি বিষয় আলাদা। এগুলোর মাত্রাও ভিন্ন।
পদ্মা সেতু ইস্যু বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের বিষয় উল্লেখ করে মজিনা বলেন, 'দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে আন্তআঞ্চলিক বাণিজ্য জোরদারে এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর উন্নয়নের চাবিকাঠি ওই সেতু নির্মাণকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। আমরা (যু্ক্তরাষ্ট্র) আশা করি, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক এমন পথ খুঁজে পাবে যা সেতুটি নির্মাণে সহায়ক হবে।'
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বিষয়ে মজিনা বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের দেওয়া ওই শুল্ক কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই প্রত্যাহার হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে কেন শুল্ক প্রত্যাহার করা উচিত তা স্পষ্ট করে বাংলাদেশ এ বিষয়টি কংগ্রেসে নিয়ে যেতে পারে।'
এক প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য, ছোট জাহাজ, ওষুধসামগ্রী, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, সিল্ক, পাটজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি/মাছের মতো পণ্যগুলোর সম্ভাবনা রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত তৈরি পোশাক শিল্পে শিশু শ্রম, নিয়মিত বেতন দেওয়ার মতো বিভিন্ন ইস্যুতে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে 'বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম' প্রণয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাকে (আইএলও) সঙ্গে নিয়ে তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীদের উদ্যোগে তিনি উৎসাহিত বোধ করছেন। তিনি মনে করেন, এ ধরনের কর্মসূচি শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করবে। পরে অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চুক্তি বা প্রতিশ্রুতিগুলো মানা হচ্ছে কি না আইএলও তা দেখার মূল দায়িত্ব পালন করতে পারে।
No comments