যে লাউ সেই কদু- 'ছাত্রদল কমিটিতে ৯০ ভাগ অছাত্র' আছে সন্ত্রাসী, গার্মেন্টস মালিক by রিয়াদুল করিম
সংগঠনের নাম জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হলেও সংগঠনটির সভাপতি বিএনপির সহসম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। আর সাধারণ সম্পাদক বিএনপির সদস্য আমিরম্নল ইসলাম খান আলিম, যাদের কোন ছাত্রত্ব নেই এবং বিবাহিত। সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের মতো প্রায় '৯০ ভাগ অছাত্র' দিয়ে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নামে ছাত্রদের সংগঠন হলেও কার্যত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন অছাত্র, বিবাহিত, সনত্মানের জনক, সন্ত্রাসী, ঠিকাদার, গার্মেন্টস শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। ওয়ান ইলেভেনের পর সংস্কারপন্থী হিসাবে পরিচিতি পাওয়াদের অনেকেই স্থান পেয়েছেন কমিটিতে। ছাত্রদলের দায়িত্ব ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়ার কথা থাকলেও কমিটিতে স্থান পাওয়া প্রকৃত ছাত্র খুবই কম। অভিযোগ উঠেছে, জালিয়াতি করে গঠন করা হয়েছে এ কমিটি। স্বয়ং সাধারণ সম্পাদকও বলেছেন, 'এ অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা নয়।' মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়েও অনেকে পদ পেয়েছেন। আর বাদ পড়েছেন অনেক তরম্নণ পরিশ্রমী নেতা।
আর এসব ৰোভ থেকেই শুক্রবার ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পরদিনই সভাপতিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার কুশপুতুল দাহ করেছে তারই সংগঠনের নেতা- কর্মীরা। ফুলের মালার বদলে হামলার শিকার হয়েছেন নতুন কমিটির তিন নেতা। সহযোদ্ধাদের হাতে ধাওয়া খেয়েছেন অনেকে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে ছাত্রদল। তিন ভাগে বিভক্ত সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মাঝে যে কোন সময় আরও বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বছরের ১ জুলাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সভাপতি ও আমিরম্নল ইসলাম খান আলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬ মাসের জন্য ছাত্রদলের ৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে বলেছিলেন, তাদের ৬ মাসের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ৬ মাসের মধ্যে দলকে পুনর্গঠন করে প্রকৃত ছাত্রদের হাতে ছাত্রদলের দায়িত্ব তুলে দেবেন। কিন্তু গত ৬ মাসে তাঁরা কোন ধরনের সম্মেলন করতে পারেননি। তাঁদের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন কমিটি না দিয়ে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ আগের পাঁচজনকে রেখে ১ জানুয়ারি রাতে ছাত্রদলের ১৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
শুক্রবার রাতে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে সংগঠনটি। সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আমিরম্নল ইসলাম খান আলিম সমর্থিত নেতা-কর্মীদের বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে গেছে। এর আগে গত জুলাই-এ টুকু আলিমকে দিয়ে কমিটি দেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের নেতৃত্বে একটি বড় অংশ বিদ্রোহ করেছিল।
কমিটি ঘোষণার পর সাধারণ সম্পাদক আমিরম্নল ইসলাম খান আলিম গ্রম্নপের নেতা-কর্মীরা শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে টুকু গ্রম্নপের নতুন তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে মারধর করে। ধাওয়া দেয় আরও বেশ কয়েক নেতা-কর্মীকে। প্রত্যৰদর্শীরা জানায়, বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ছাত্রদলের টুকু গ্রম্নপের নতুন কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা মধুর ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছিল। এ খবর পেয়ে আলিম গ্রম্নপের আহসান উদ্দিন সিপনের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন নেতা-কর্মী তাদের উপর হামলা চালায়। এতে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ইজমানুল হক পাইলট, সহআপ্যায়ন সম্পাদক রম্নহুল ইসলাম খান, সহদফতর সম্পাদক জিয়াউল হক জিয়া আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
আলিম গ্রম্নপের বিৰুব্ধ নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্য অভিযোগ, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু ও বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন জালিয়াতির মাধ্যমে এ কমিটি গঠন করেছে। মূল যে কমিটি করা হয়েছিল তা পাশকাটিয়ে কৌশলে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এবং পছন্দের লোকদের ঢুকানো হয়েছে কমিটিতে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির ৫ পাতার তালিকায় শুধু প্রথম পাতায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাৰর আছে। বাকি কোন পাতায় তাঁর স্বাৰর নেই। নিয়মানুযায়ী সব পাতায় খালেদা জিয়ার স্বাৰর থাকার কথা। তারা অভিযোগ করেন, কৌশলে মিলন, টুকু এ কাজ আদায় করে নিয়েছে। আর এ সুযোগে দ্বিতীয় পাতা থেকে ইচ্ছামতো নাম ওলটপালট করা হয়েছে।
আগের কমিটির পাঠাগার সম্পাদক পলাশ সাংবাদিকদের বলেন, সভাপতি টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আলিম কমিটির একটি খসড়া করেছিলেন। কিন্তু কমিটি ঘোষণার আগ মুহূর্তে ৫০টি নাম পরিবর্তন করে ত্যাগী নেতাদের বাদ দেয়া হয়েছে।
এ অভিযোগে আলিম গ্রম্নপের নেতা- কর্মীরা ক্যাম্পাসে বিৰোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে সংগঠনের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। সমাবেশ শেষে তারা টুকুর কুশপুতুল দাহ করে। সমাবেশে নেতা-কর্মীরা দাবি করেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অনেক ব্যবসায়ী অছাত্রকে কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। ছাত্রদলের কমিটি হলেও কমিটিতে স্থান পাওয়াদের ৯০ ভাগই অছাত্র।
যুগ্ম সম্পাদক শহীদুলস্না ইমরান, আনোয়ার হোসেন টিপু, সহসাধারণ সম্পাদক তরম্নণ দে, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক মশিউর রহমান মিশু, পাঠাগার সম্পাদক আব্দুল মান্নান ফরহাদসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়াদের অনেকেই পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের এ বিৰোভ কর্মসূচীতে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচীতে অংশ নেয়। এদের মধ্যে অনেকে বলেছেন, তাঁরা যোগ্যতানুযায়ী পদ পাননি।
কমিটি জালিয়াতির এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আমিরম্নল ইসলাম খান আলিম জনকণ্ঠকে বলেন, এ অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা নয়। সংগঠনের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু অবশ্য এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, নিয়মানুযায়ী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অনুমোদনের মাধ্যমেই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। বেশ ভাল কমিটি হয়েছে মনত্মব্য করে তিনি বলেন, ছাত্রদল অনেক বড় সংগঠন। সবাইকে কমিটিতে স্থান দেয়া সম্ভব নয়। যাঁরা স্থান পেয়েছেন তাঁরা সবাই সঠিক বিবেচনায় হয়েছেন। তিনি বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সহসম্পাদক হয়ে ছাত্রদলের সভাপতি হতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যা হতে পারি । এতে কোন বাধা নেই। আগে আমরা বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছিলাম। এখন সহযোগী সংগঠন।
ছাত্রদলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এ কমিটিতে যাঁরা স্থান পেয়েছেন তাঁদের সিংহভাগ বিবাহিত এবং সনত্মানের জনক। ওই সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়া ১৬ জন সহসভাপতির সবাই অছাত্র এবং বিবাহিত। তাদের অধিকাংশই সনত্মানের জনক ও ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে এক বিভাগীয় সহসভাপতি ফেনসিডিল ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত।
যে ৫ জনকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে তাঁদের সবাই বিবাহিত এবং সনত্মানের জনক। এদের একজন ঠিকাদার। ১০ জন সহসাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একজন ছাড়া কারই ছাত্রত্ব নেই। এদের প্রথমজন গার্মেন্টস শ্রমিক। একজন চাকরিজীবী, একজন টেইলারিং ব্যবসায়ী, একজন রিজভীর এপিএস, একজন আইনজীবী, তিনজন ব্যবসায়ী ও একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের ভাই। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর থেকে এক চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে সংগঠনটির সদস্য করা হয়েছে। যাদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদার, তিন জন ব্যবসায়ী। এদের দু'জন আবার গত ৭ বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে সংশিস্নষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
কমিটিতে স্থান পাওয়াদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে প্রায় ৯০ ভাগই অছাত্র। একজন সহসম্পাদক আছেন গার্মেন্টস কর্মচারী। এছাড়া হোটেল মালিক, ব্যবসায়ী আছেন অনেক। আর বেশির ভাগই বিবাহিত। ছাত্রদলের কয়েক তরম্নণ নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আশা করেছিলাম ছাত্রদলে তরম্নণদের এবার নেতৃত্বে আনা হবে। প্রকৃত ছাত্রদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে ছাত্র সংগঠনটির নেতৃত্ব। এমন আশাও আমাদের দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম যে লাউ সেই কদু! বিবাহিত, অছাত্র, ব্যবসায়ীদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ করা হলো ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। গুরম্নত্বপূর্ণ পদে যাঁরা দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁদের প্রায় সবাই অছাত্র, বিবাহিত।
আর এসব ৰোভ থেকেই শুক্রবার ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পরদিনই সভাপতিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার কুশপুতুল দাহ করেছে তারই সংগঠনের নেতা- কর্মীরা। ফুলের মালার বদলে হামলার শিকার হয়েছেন নতুন কমিটির তিন নেতা। সহযোদ্ধাদের হাতে ধাওয়া খেয়েছেন অনেকে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে ছাত্রদল। তিন ভাগে বিভক্ত সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মাঝে যে কোন সময় আরও বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বছরের ১ জুলাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সভাপতি ও আমিরম্নল ইসলাম খান আলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬ মাসের জন্য ছাত্রদলের ৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে বলেছিলেন, তাদের ৬ মাসের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ৬ মাসের মধ্যে দলকে পুনর্গঠন করে প্রকৃত ছাত্রদের হাতে ছাত্রদলের দায়িত্ব তুলে দেবেন। কিন্তু গত ৬ মাসে তাঁরা কোন ধরনের সম্মেলন করতে পারেননি। তাঁদের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন কমিটি না দিয়ে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ আগের পাঁচজনকে রেখে ১ জানুয়ারি রাতে ছাত্রদলের ১৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
শুক্রবার রাতে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে সংগঠনটি। সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আমিরম্নল ইসলাম খান আলিম সমর্থিত নেতা-কর্মীদের বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে গেছে। এর আগে গত জুলাই-এ টুকু আলিমকে দিয়ে কমিটি দেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সে সময়ের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের নেতৃত্বে একটি বড় অংশ বিদ্রোহ করেছিল।
কমিটি ঘোষণার পর সাধারণ সম্পাদক আমিরম্নল ইসলাম খান আলিম গ্রম্নপের নেতা-কর্মীরা শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে টুকু গ্রম্নপের নতুন তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে মারধর করে। ধাওয়া দেয় আরও বেশ কয়েক নেতা-কর্মীকে। প্রত্যৰদর্শীরা জানায়, বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ছাত্রদলের টুকু গ্রম্নপের নতুন কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা মধুর ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছিল। এ খবর পেয়ে আলিম গ্রম্নপের আহসান উদ্দিন সিপনের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন নেতা-কর্মী তাদের উপর হামলা চালায়। এতে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ইজমানুল হক পাইলট, সহআপ্যায়ন সম্পাদক রম্নহুল ইসলাম খান, সহদফতর সম্পাদক জিয়াউল হক জিয়া আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
আলিম গ্রম্নপের বিৰুব্ধ নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্য অভিযোগ, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু ও বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন জালিয়াতির মাধ্যমে এ কমিটি গঠন করেছে। মূল যে কমিটি করা হয়েছিল তা পাশকাটিয়ে কৌশলে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এবং পছন্দের লোকদের ঢুকানো হয়েছে কমিটিতে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির ৫ পাতার তালিকায় শুধু প্রথম পাতায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাৰর আছে। বাকি কোন পাতায় তাঁর স্বাৰর নেই। নিয়মানুযায়ী সব পাতায় খালেদা জিয়ার স্বাৰর থাকার কথা। তারা অভিযোগ করেন, কৌশলে মিলন, টুকু এ কাজ আদায় করে নিয়েছে। আর এ সুযোগে দ্বিতীয় পাতা থেকে ইচ্ছামতো নাম ওলটপালট করা হয়েছে।
আগের কমিটির পাঠাগার সম্পাদক পলাশ সাংবাদিকদের বলেন, সভাপতি টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আলিম কমিটির একটি খসড়া করেছিলেন। কিন্তু কমিটি ঘোষণার আগ মুহূর্তে ৫০টি নাম পরিবর্তন করে ত্যাগী নেতাদের বাদ দেয়া হয়েছে।
এ অভিযোগে আলিম গ্রম্নপের নেতা- কর্মীরা ক্যাম্পাসে বিৰোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে সংগঠনের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। সমাবেশ শেষে তারা টুকুর কুশপুতুল দাহ করে। সমাবেশে নেতা-কর্মীরা দাবি করেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অনেক ব্যবসায়ী অছাত্রকে কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। ছাত্রদলের কমিটি হলেও কমিটিতে স্থান পাওয়াদের ৯০ ভাগই অছাত্র।
যুগ্ম সম্পাদক শহীদুলস্না ইমরান, আনোয়ার হোসেন টিপু, সহসাধারণ সম্পাদক তরম্নণ দে, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক মশিউর রহমান মিশু, পাঠাগার সম্পাদক আব্দুল মান্নান ফরহাদসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়াদের অনেকেই পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের এ বিৰোভ কর্মসূচীতে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচীতে অংশ নেয়। এদের মধ্যে অনেকে বলেছেন, তাঁরা যোগ্যতানুযায়ী পদ পাননি।
কমিটি জালিয়াতির এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আমিরম্নল ইসলাম খান আলিম জনকণ্ঠকে বলেন, এ অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা নয়। সংগঠনের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু অবশ্য এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, নিয়মানুযায়ী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অনুমোদনের মাধ্যমেই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। বেশ ভাল কমিটি হয়েছে মনত্মব্য করে তিনি বলেন, ছাত্রদল অনেক বড় সংগঠন। সবাইকে কমিটিতে স্থান দেয়া সম্ভব নয়। যাঁরা স্থান পেয়েছেন তাঁরা সবাই সঠিক বিবেচনায় হয়েছেন। তিনি বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সহসম্পাদক হয়ে ছাত্রদলের সভাপতি হতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যা হতে পারি । এতে কোন বাধা নেই। আগে আমরা বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছিলাম। এখন সহযোগী সংগঠন।
ছাত্রদলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এ কমিটিতে যাঁরা স্থান পেয়েছেন তাঁদের সিংহভাগ বিবাহিত এবং সনত্মানের জনক। ওই সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়া ১৬ জন সহসভাপতির সবাই অছাত্র এবং বিবাহিত। তাদের অধিকাংশই সনত্মানের জনক ও ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে এক বিভাগীয় সহসভাপতি ফেনসিডিল ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত।
যে ৫ জনকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে তাঁদের সবাই বিবাহিত এবং সনত্মানের জনক। এদের একজন ঠিকাদার। ১০ জন সহসাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একজন ছাড়া কারই ছাত্রত্ব নেই। এদের প্রথমজন গার্মেন্টস শ্রমিক। একজন চাকরিজীবী, একজন টেইলারিং ব্যবসায়ী, একজন রিজভীর এপিএস, একজন আইনজীবী, তিনজন ব্যবসায়ী ও একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের ভাই। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর থেকে এক চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে সংগঠনটির সদস্য করা হয়েছে। যাদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদার, তিন জন ব্যবসায়ী। এদের দু'জন আবার গত ৭ বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে সংশিস্নষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
কমিটিতে স্থান পাওয়াদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে প্রায় ৯০ ভাগই অছাত্র। একজন সহসম্পাদক আছেন গার্মেন্টস কর্মচারী। এছাড়া হোটেল মালিক, ব্যবসায়ী আছেন অনেক। আর বেশির ভাগই বিবাহিত। ছাত্রদলের কয়েক তরম্নণ নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আশা করেছিলাম ছাত্রদলে তরম্নণদের এবার নেতৃত্বে আনা হবে। প্রকৃত ছাত্রদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে ছাত্র সংগঠনটির নেতৃত্ব। এমন আশাও আমাদের দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম যে লাউ সেই কদু! বিবাহিত, অছাত্র, ব্যবসায়ীদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ করা হলো ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। গুরম্নত্বপূর্ণ পদে যাঁরা দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁদের প্রায় সবাই অছাত্র, বিবাহিত।
No comments