জোট আমলের ১০৭ কোটি টাকা ঋণের হদিস নেই- সমবায় অধিদফতরের সম্মেলনে নানক

চারদলীয় জোট সরকারের জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির নামে ঋণের ১০৭ কোটি টাকার কোন হদিস পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়। জনগণের রাজস্বের এ টাকা কোথায় গেছে, তা বলতে পারে না সংশ্লিষ্ট ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোও। স্থানীয় সরকার,


পলস্ন্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক শনিবার সমবায় অধিদফতরের সভাকক্ষে অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
সমবায় অধিদফতরের অধীনে কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় সহকারী নিবন্ধক থেকে নিবন্ধক পর্যনত্ম এবং জেলা সমবায় কর্মকর্তারা এই সম্মেলনে যোগ দেন। সরকারের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা ও নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধানত্ম অবহিত করার মধ্য দিয়ে রবিবার এ সম্মেলন শেষ হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা সমবায় কর্মকর্তা রম্নহুল আমিন।
সমবায় নিবন্ধক সুরাইয়া বেগমের সভাপতিত্বে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে আরও বক্তব্য রাখেন বিদায়ী পলস্ন্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব সমর চন্দ্র পাল, অধিদফতরের অতিরিক্ত নিবন্ধক বদিউল আলম, উপ-নিবন্ধক মমিনুল হক তালুকদার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় যুগ্ম-নিবন্ধক আব্দুল লতিফ খান, দিনাজপুরের জেলা সমবায় কর্মকর্তা মাহবুবুল হক।
সম্মেলনে বিভাগীয় ও জেলা সমবায় কর্মকর্তারা জানান, জনবল সঙ্কটের কারণে তাঁরা তাদের নিয়মিত কাজও ঠিকমতো করতে পারেন না। স্থানীয় পর্যায়ের অফিসগুলোতে পাঁচজন লোকবল থাকার কথা থাকলেও অনেকসময় মাত্র একজনকে দিয়েই অফিস চলে। ফলে অধিকাংশ সময়ই অফিস বন্ধ করে ওই কর্মকর্তাকে কাজ করতে হয়।
তাঁরা জানান, দেশে বর্তমানে এক লাখ ৬৫ হাজার ৮৮টি নিবন্ধিত সমবায় সমিতি রয়েছে। এসবের অধিকাংশ সমবায় সমিতিই বর্তমানে আর কার্যকর নেই। কিন্তু সমবায় ব্যাংকের ঋণ থাকায় আইন অনুযায়ী এসব সমিতির কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে সমবায় অধিদফতরকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার এসব সমিতির ঋণ মওকুফ করলে অথবা অন্য কোন প্রক্রিয়া আদায়ের উদ্যোগ নিলে তা অনেক ভাল হবে।
এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে সমবায় অধিদফতরকে উন্নয়ন কর্মকা-ে ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, আইন পরিবর্তন করে সমবায় অধিদফতরকে সমবায় উন্নয়ন অধিদফতর করে একে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বের করা সম্ভব হয়। এতে সমবায় অধিদফতরের অধীনস্থ সংস্থা ও জনবলকে ব্যবহার করে সরকার সমবায় আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে পারে।
কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে সমবায় কর্মকর্তাদের মর্যাদা উন্নয়ন ও নির্ধারণ, যানবাহনের ব্যবস্থা করা এবং সমবায়ের ভিত্তিতে কৃষি পণ্যের বিক্রির ব্যবস্থা করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
জবাবে প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জোট সরকারের মৎস্যজীবী সমিতির নামে যে ঋণ দেয়া হয়ে, তার মধ্যে ১০৭ কোটি টাকার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ওই টাকায় কেনা ট্রলারগুলোও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব ট্রলার কি মধ্যসাগরে ডুবে গেছে, নাকি এখনও আছে, তাও কেউ জানেন না। এ অবস্থায় সরকার খুবই বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার 'একটি বাড়ি একটি খামার' প্রকল্প বাসত্মবায়নের যে মহাপরিকল্পনা করেছে, তা বাসত্মবায়ন হবে সমবায় এবং বিআরডিবির মাধ্যমে। তাই সমবায় কর্মকর্তাদের আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সমবায়কে শক্তিশালী করে জনগণকে সংগঠিত ও সচেতন করে তুলতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সমবায় অধিদফতর ও এর অধীনে কার্যালয়গুলোকে পরিশ্রম করতে হবে।
তিনি অধিদফতরের জনবল সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে এ ব্যাপারে যত দ্রম্নত সম্ভব মন্ত্রণালয়ে একটি প্রসত্মাবনা জমা দিতে নিবন্ধকের প্রতি নির্দেশ দেন। পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী নানক বলেন, রাজধানীর গ্যাস সঙ্কট উত্তরাধিকার সূত্রে এ সরকার পেয়েছে। তবে সরকার এ সঙ্কট নিরসনে নতুন গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও কেউ কেউ এর বিধোধিতা করছে। মানুষের কল্যাণে আমাদের এ ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সরকারের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিতে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, প্রধানমন্ত্রী সফরে যাওয়ার আগেই যারা কাঁটা বিছিয়ে দিতে চায়, তারা কোন ধরনের মানসিকতা পোষণ করেন, তা সকলেই বুঝতে পারছেন। এ ধরনের মানসিকতা পরিবর্তন করে সকলকে দেশের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.