চরাচর-রোয়াইলবাড়ির পুরাকীর্তি by আলম শাইন

কথায় আছে 'আগুন কখনো ছাইচাপা থাকে না'। থাকে না কখনো ইতিহাস গ্রন্থচাপা। এর সঙ্গে বলতে হয়, পুরাকীর্তি কখনো থাকে না মাটিচাপা। একটা সময় মাটির উপরে বেরিয়ে আসবেই। হাজার বছর পরে হলেও তা খননের মাধ্যমে উদ্ঘাটিত হবে। এ ধরনের অনেক পুরাকীর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে দেশে, যা শত হাজার বছর আগে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও তা একসময় মানুষের চোখের সামনে চলে এসেছে।


ঠিক তেমনি একটি পুরাকীর্তি দেশের মানুষের চোখের সামনে চলে এসেছে প্রায় দুই দশক আগে। এটির সন্ধান পাওয়া গেছে 'রোয়াইলবাড়ি' নামক স্থানে। রোয়াইলবাড়ি ঢাকা থেকে খানিকটা দূরে। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার একটি অবহেলিত গ্রাম। উপজেলা কেন্দুয়া থেকে জেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। রোয়াইলবাড়ি যেতে হলে কেন্দুয়া সদর থেকে ৮-১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে গেলে এ গ্রামটি। বলতে গেলে এটি একটি মামুলি গ্রাম। গ্রামটি দুই যুগ আগেও খুব বেশি পরিচিত ছিল না দেশবাসীর কাছে। পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। মূলত স্থানীয় এলাকাবাসীর উৎসাহে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বছরতিনেক ধরে রোয়াইলবাড়িতে খননকাজ চালায়। দীর্ঘ দিন খননকাজ চালিয়ে যাওয়ার পর বেরিয়ে আসে এক ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি, যা বাংলার সুলতান ঈশা খাঁ দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা এ নিদর্শন দেখে এলাকাবাসীর ভেতর বেশ চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। ইতিহাস তাঁদের মনে করিয়ে দিয়েছে ঈশা খাঁর অশ্বারোহী বাহিনীর দুর্দণ্ড প্রতাপের কথা। একসময় এ অঞ্চলে ঈশা খাঁর অশ্বারোহী বাহিনী চষে বেড়াত, তা ভেবে মানুষ পুলকিত বোধ করছে এখনো। ধ্বংসস্তূপ দেখে ব্যক্তিবিশেষ নানা মন্তব্যও করছেন। আসলে কেউ-ই সঠিক তথ্য বের করতে পারছেন না। কারণ এখানে এ ধরনের কোনো সন-তারিখের (এপিটাফ) হিসাব পাওয়া যায় না। কাজেই অনুমানের ওপরেই মানুষ পুরাকীর্তি স্থাপনের সময়কাল নির্ধারণ করে নিয়েছে এবং ধারণা করেছে এটি একটি ভগ্নদুর্গ ছিল। মার্বেল পাথরের খিলান দেখে এ ধারণা জন্ম হয় জনসাধারণের। খিলানগুলো চমৎকার কারুকার্যমণ্ডিত। পিলারগুলো সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি। যা বিস্ময়কর বটে। এর পাশেই রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গটি কেন করা হয়েছে তাও জানা যায় না। সবই অনুমাননির্ভর তথ্য। ফলে বেশি কিছু জানা যায় নি এ পুরাকীর্তিটি সম্পর্কে। তবে যা-ই জানা যাক না কেন, এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ_এটাই শেষ কথা। এটি এখন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের। বর্তমানে এটির অবস্থা একেবারেই নাজুক। তার চেয়েও বেশি নাজুক রোয়াইলবাড়ি যাওয়ার সড়কটি। সড়কটি সংস্কার হলে রোয়াইলবাড়ির পুরাকীর্তির স্থানটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে বিশ্বাস এলাকাবাসীর। তাই এলাকাবাসীর দাবি ঈশা খাঁর স্থাপত্যটিকে সংস্কারের পাশাপাশি রোয়াইলবাড়ি সড়কটিও যেন মেরামত করা হয়। তাতে পর্যটকদের পাশাপাশি গ্রামবাসীও উপকৃত হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
আলম শাইন

No comments

Powered by Blogger.