চরাচর-সাপের বিষ by আজিজুর রহমান
পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ বিষধর। বাকি ৯২ শতাংশ নির্বিষ ও নিরীহ প্রকৃতির। আর বাংলাদেশে রয়েছে ৮০ প্রজাতির সাপ। এগুলোর মধ্যে ২২ প্রজাতি মারাত্মক বিষধর। সুতরাং সাপে কামড়ালেই মানুষ মারা যাবে_এ আশঙ্কা ঠিক নয়।
ভারতের গবেষকরা এক জরিপে জানতে পেরেছেন, সাপের কামড়ে মারা যাওয়া মানুষের ৮০ শতাংশেরই নির্বিষ সাপের কামড়ে মৃত্যু ঘটে। এসব মৃত্যুর কারণ মূলত আতঙ্ক। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। এদের মধ্যে মারা যায় ছয় হাজারের বেশি। সাপের কামড়ে সাধারণত তিনভাবে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে_১. সাপের কামড়ে আতঙ্কগ্রস্ত ব্যক্তির হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে; ২. সাপের দাঁত ও মুখ-গহ্বরস্থিত মারাত্মক টিটেনাস অথবা অন্য কোনো জীবাণুর সংক্রমণে এবং ৩. বিষাক্রান্ত হয়ে। সাপের বিষ প্রধানত রক্ত সংবহনতন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে মানুষের মৃত্যু ঘটায়। এ ছাড়া দেহের মাংসপেশি, কিডনি, রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায়, হৃৎপিণ্ডে এবং দংশিত স্থানে স্থানীয়ভাবে বিষক্রিয়া ঘটায়। বিষের বিশেষ উপাদান হিমোলাইসিন রক্ত সংবহনতন্ত্রকে আক্রমণ করে রক্তের লোহিত কণাকে দ্রুত ভেঙে রক্তকে অকার্যকর করে মানুষের মৃত্যু ঘটায়। আবার কোনো কোনো প্রজাতির সাপের বিষ স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বিনষ্ট করে দেয়। ফলে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। তবে কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রম বিষক্রিয়ার তীব্রতা কমে এলে কিংবা নির্দিষ্ট পরিবেশতাত্তি্বক প্রভাব ও শারীরবৃত্তীয় প্রতিরোধ বা সংশোধন কলা-কৌশলের ঘাত-প্রতিঘাতে পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। মারাত্মক বিষধর কেউটে, গোখরা ও চন্দ্রবোড়া সাপের দংশনে স্নায়ুতন্ত্রের ওপর বিষক্রিয়ার কারণে শরীর অবশ বা প্যারালাইসিস হতে পারে। প্রাণিদেহে বিষ তৈরি হয় মূলত দুটি কারণে_আত্মরক্ষা ও শিকার ধরা এবং পরিপাকগত ব্যবস্থাপনার কারণে। প্রাণীদের মধ্যে সাপের বিষ খুবই মারাত্মক ও ভয়াবহ। এ বিষের আঙ্গিক ও গঠন খুবই জটিল। সাপের বিষ বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, এই বিষের বেশির ভাগ অংশ অকোষীয় (নন-সেলুলার) ও আমিষে (পলিপেপটাইড) তৈরি। এ ছাড়া অন্যান্য জৈব-রাসায়নিক পদার্থও রয়েছে। এর ভেতর কিছু ধাতব আয়ন এবং ২০ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন এনজাইম বা বিজনয়কের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে বেশির ভাগ সাপ প্রজাতির বিষে সাত থেকে ১০টির মতো এনজাইম থাকে। সাপের বিষগ্রন্থিতে যে বিষ থাকে তার রং সাধারণত হলদে মরাটে ও অম্বর রঙের হয়ে থাকে। সাপের বিষ লালাগ্রন্থিতে উৎপন্ন হয় এবং সেখানেই থাকে। সাপের প্রতি ছোবলে চার-পাঁচ ফোঁটা থেকে এক মিলিলিটার পর্যন্ত তরল বিষ নিঃসরিত হয়। সামুদ্রিক সাপের বিষক্রিয়া সর্বোচ্চ এবং তা চোখের তুলনায় দ্বিগুণ।
আজিজুর রহমান
আজিজুর রহমান
No comments