স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান নেতিবাচক চিত্র by ডা. এম এ করীম

এক সহকর্মীর বিদায় অনুষ্ঠানে (চাকরি থেকে অবসর নেওয়া) সহকর্মীরা আমাকে দাওয়াত করেছিলেন। সেখানে আড্ডায় মেতেছিলাম আমরা কয়েকজন পরমাণু চিকিৎসাবিজ্ঞানী। আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল স্বাস্থ্যব্যবস্থা, স্বাস্থ্যনীতি, বিএমডিসি, ড্যাব এবং স্বাচিপ। আলাপ হচ্ছিল স্বাস্থ্য খাতের বাজেট নিয়ে। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাত সম্পর্কে যা বললেন তা হলো, 'সবার জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমরা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।


আমরা দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতের কর্মসূচি নিয়েছিলাম। ফলে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সম্পর্কিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছি।' তিনি আরো বলেন, 'আমরা এ দেশে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্য পূরণের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যসেবাকর্মীর অনুপাত ১ঃ৩ঃ৫-এ উন্নীত করা প্রয়োজন। উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে আগামী (২০১১-১২) অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে আমি আট হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। এ থেকে স্পষ্ট হয়েছিল, প্রস্তাবিত মোট বাজেটের ৫.১০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতের। এই বাজেট চলতি অর্থবছরের চেয়ে শতকরা ০.৯০ শতাংশ কম। এর মধ্যে প্রস্তাবিত বাজেটের ৭ শতাংশ উন্নয়ন এবং ৪.২০ শতাংশ অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কম রাখার মানেই হলো, এ খাতকে তেমন গুরুত্ব না দেওয়া। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দিয়েছেন; কিন্তু বরাদ্দ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মনে হয় না। এক কথায় বলা যায়, বক্তব্য আর কাজের মধ্যে কোনো মিল নেই। এখানে লক্ষণীয় বিষয়, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ল কি কমল, সেটা দেখার বিষয় নয়। মূল কথা, এর বাস্তবায়নে কারা কাজ করছে, সেটা। আরেকটি বিষয় হলো, সেবা খাতকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে? গবেষণায় কী রকম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে? সেবা খাতকে গুরুত্ব না দিয়ে অর্থমন্ত্রী ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ বেশি রেখেছেন (অবশ্য ভবন নির্মাণের প্রয়োজন আছে)। তৃণমূল মানুষকে সেবা পেঁৗছানোর উপায় ও পদ্ধতির প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বাজেট বরাদ্দ করা হয়নি। সরকারকে দেখা যায় পিপির কথা বলতে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে এর বাস্তবায়ন দরকার ছিল। পুষ্টি খাতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রেও সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত ছিল। উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে তেমন কিছুই বলা হয়নি। স্বাস্থ্য খাতের প্রতি সব সরকারের অব্যাহত অবহেলার ফলে অনেক রোগী বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভালো চিকিৎসার জন্য উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা খুবই প্রয়োজন। অথচ বাজেটে সেই দিকনির্দেশনা নেই। এও শুনেছি, প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যনীতিতেও তা নেই। অথচ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এক সহকর্মী বলছিলেন, 'পরমাণু চিকিৎসাসেবা বিশ্বে এখন একটি উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তি। অথচ এ বিষয়টি জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি (সত্যতা যাচাইকৃত নয়)।' বড়ই দুঃখের বিষয়, কথা ও কাজে কত গরমিল!
ডা. ওহাব খানকে নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে। ভুয়া চিকিৎসক ওহাব খান চিকিৎসাবিজ্ঞানের সবচেয়ে কঠিন বিষয় নিউরোমেডিসিন (স্নায়ুরোগ) বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছেন। ভুয়া হন আর প্রতারক হন, তিনি যে দেড় যুগ ধরে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে এসেছেন, তাতে তাঁর সাহস ও দুষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় মেলে। শুধু চিকিৎসা নয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন। পত্রিকায় প্রকাশ, গুলশান, বনানী ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকার চারটি প্রথম শ্রেণীর বেসরকারি হাসপাতালে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। শোনা গেছে, আইসিইউতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দায়িত্বও পালন করেছেন। অবাক লাগে, সাবেক মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ এবং পুলিশ কর্মকর্তাসহ নানা পেশার লোকজনকে নামিদামি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাসেবা দিয়ে এসেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সফল ভুয়া চিকিৎসক। সচেতন নাগরিক সমাজের প্রশ্ন, এই দেড় যুগ কি বিএমডিসি কর্তৃপক্ষ ঘুমিয়ে ছিল! যাঁদের সঙ্গে চাকরি করেছেন, তাঁরাও কি বুঝতে পারলেন না তিনি ভুয়া চিকিৎসক? কিন্তু পত্রিকায় যখন সংবাদ বের হলো, তখন বিএমডিসি প্রমাণ পেল, ওহাব চিকিৎসা বিষয়ে কোনো লেখাপড়া করেননি। ওহাব এখন ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে জেলহাজতে আছেন। এ রকম ভুয়া চিকিৎসক এর আগেও দুই-তিনজন ধরা পড়েছিল। কিন্তু অসংখ্য ভুয়া চিকিৎসক আমাদের দেশে আছে। বিএমডিসি বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভুয়া চিকিৎসকদের সঠিক সংখ্যা বলতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে ভুয়া এসব চিকিৎসকের কারণে বহু রোগী ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় নানা রকম জটিলতার শিকার হয়ে পঙ্গু হয়ে অভিশপ্ত জীবনযাপন করছেন, কেউ বা প্রাণ হারাচ্ছেন। এসব রোগীর মধ্যে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী নারী-পুরুষও রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ভুয়া এসব চিকিৎসককে শনাক্ত করার দায়িত্ব কার? চিকিৎসকদের ডিগ্রি নিয়ন্ত্রণকারী একমাত্র সংস্থা হচ্ছে বিএমডিসি। কিন্তু গত ৪০ বছরে এসব ভুয়া ডিগ্রি এবং ভুল চিকিৎসা প্রদানকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ১৭ বছর বিএমডিসি প্রায় মৃত ছিল। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের শেষদিকে পদক্ষেপ নেওয়ায় আবার জীবন ফিরে পেয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র দুজন চিকিৎসকের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএমডিসিরও সমস্যা আছে। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব। ভুয়া ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের মনিটর করার জনবলও নেই প্রতিষ্ঠানটির। তা ছাড়া দণ্ড দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আইনেরও অভাব। যদিও বিএমডিসি কর্তৃক এ পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৫৫৫ জন।
বিএমডিসি অধ্যাদেশে উল্লেখ আছে, নিবন্ধিত নন, চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত এরূপ ব্যক্তির বিরুদ্ধে এবং চিকিৎসা শাস্ত্রবিষয়ক ভুয়া পদবি, ডিগ্রি, প্রতারণামূলক প্রতিনিধিত্ব অথবা নিবন্ধন ইত্যাদির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কিন্তু বিএমডিসি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করায় দেশব্যাপী ওহাবের মতো ভুয়া ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ রকম ভুয়া চিকিৎসকের কাছে পাস করা অনেক চিকিৎসক, এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও পাত্তা পান না বলে অভিযোগ শোনা যায়। বিশেষ বিশেষ এলাকায় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে তারা রোগী বাগিয়ে নেয়। অনেক সময় ফ্রি চিকিৎসার নামে সব রোগীকে কয়েক হাজার টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য স্থানীয় ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে তারা শতকরা ৫০-৬০ ভাগ কমিশন পেয়ে থাকে। তারা অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মোটা অঙ্কের কমিশন হাতিয়ে নেয়। ভুয়া দন্ত চিকিৎসকদের আরো রমরমা ব্যবসা। তারা শুধু ঢাকা শহরে নয়, উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ তো গেল ভুয়া চিকিৎসকদের চিত্র। কিন্তু যাঁরা এমবিবিএস (প্রকৃত ডিগ্রিধারী), তাঁরাও বসে নেই (সবাই নন)। অনেককে দেখা গেছে, তাঁদের নেমপ্লেটে-ব্যবস্থাপত্রে এমবিবিএসের পর যুক্ত করেন বিএইচএস। আবার তিন মাসের ট্রেনিংয়ে গিয়েছিলেন বিদেশে; সেখান থেকে ফিরে এসে এমবিবিএস, স্পেশালাইজড ইন কার্ডিওলজি বা পিজিটি বা আলট্রাসাউন্ড (জাপান, ইন্ডিয়া, আমেরিকা অথবা ইংল্যান্ড) যুক্ত করেন। এফসিপিএস বা এমডি কোর্সে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা নামের পেছনে এফসিপিএস পার্ট ১-২ অথবা এমডি (থিসিস পর্ব/শেষ পর্ব) লিখে থাকেন। আমি এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এতে কি রোগীর সংখ্যা বাড়ে? উত্তরে সে হ্যাঁ-সূচক জবাব দিয়েছিল। তবুও বলব, সমাজের উঁচু স্তরের পেশাজীবীদের মধ্যে চিকিৎসকরা পড়েন। সমাজের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা আছে। আর এ কারণেই এ ধরনের প্রবণতা পরিত্যাজ্য হওয়া উচিত। বিএমডিসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু শাফি আহম্মদ আমিনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। কর্মঠ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী তিনি। চিকিৎসক হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুনাম ও খ্যাতি আছে। ১৭ বছরের মৃত বিএমডিসিকে পুনরুজ্জীবিত করে সংগঠনটিকে বিজ্ঞানভিত্তিক ও গতিশীল করে তোলার চেষ্টায় ব্রত হবেন। সমাজে চিকিৎসাসেবার নামে ভুয়া ডিগ্রিধারী ও ভুয়া চিকিৎসকের হাত থেকে অসুস্থ জনগণকে মুক্তি দিতে বিএমডিসি তথা সরকার এবং চিকিৎসকদের বৃহৎ সংগঠন বিএমএ এগিয়ে আসবে_এটা জনগণের প্রত্যাশা।
দেশ যেমন দ্বিদলীয় ব্যবস্থার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, তেমনি চিকিৎসকদের বৃহত্তম পেশাজীবী সংগঠন বিএমএও দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় আবর্তিত হচ্ছে। নির্বাচনে এই দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অন্যরা তাদের সহযোগী। বৃহৎ দুটি চিকিৎসক সংগঠন (যা রাজনৈতিক চরিত্রে পরিচিত) ড্যাব ও স্বাচিপ। বিএমএ তার নির্দলীয় পেশাজীবী চরিত্র হারিয়ে এখন রাজনৈতিক চরিত্রে অভিনয় করছে। 'ড্যাব' এখন থেকেও নেই। এখন আছে স্বাচিপ। অর্থাৎ বিএমএর ক্ষমতায় আসীন এখন স্বাচিপ। জোট সরকারের আমলে ড্যাবের দোর্দণ্ড প্রতাপে পুরো স্বাস্থ্য খাত থরথর করে কেঁপেছে। ড্যাবের নেতাদের অঙ্গুলি হেলন, তাঁদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই ছিল শেষ কথা। তার পরিণতি কী হয়েছে, তা সবার জানা। পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু এখন? এখন ড্যাবের দেখানো পথেই চলছে 'স্বাচিপ'। দীর্ঘদিন ধরে এই অপসংস্কৃতির জাঁতাকলে পিষ্ট চিকিৎসকদের স্বার্থ ও স্বাস্থ্যসেবা। ২০০১-০৬ (চারদলীয় জোট সরকারের) মেয়াদে চিকিৎসকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণ করত ড্যাব। তবে নেতৃত্ব ছিল একজনের হাতে। তিনি হলেন ড্যাবের মহাসচিব। অভিযোগ ছিল, মহাসচিব ছাড়াও বিভিন্ন পদে আসীন নেতারাও লুটপাট, স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি এবং সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণের মতো নানা রকম অন্যায় কাজে লিপ্ত ছিলেন। ফলে স্বাস্থ্য খাতের চেইন অব কমান্ড কার্যত ভেঙে পড়ে। সেই সময় ড্যাবের নেতাদের ইন্ধনে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে চালু কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে গোচারণ ক্ষেত্রে পরিণত করা হয়। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশেষায়িত যোগ্যতায় সেই সময় অনেকে রাতারাতি মেডিক্যাল অফিসার এবং সহকারী অধ্যাপক থেকে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় অধ্যাপক পর্যন্ত পদোন্নতি পেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন অনুযায়ী, সহকারী অধ্যাপক পদে যেতে হলে কমপক্ষে ১৩ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ এফসিপিএস, এমএস বা এমফিল অথবা এমডি ডিগ্রি এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বীকৃত জার্নালে তিন থেকে পাঁচটি প্রকাশনা থাকতে হয়। কিন্তু তখন কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। দোহাই দেওয়া হয়েছিল, বিষয়টিকে 'জরুরি' বলে।
দলীয় অনুগত চিকিৎসকদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। চিকিৎসকদের বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে (বিএমএ) ছিল ড্যাবের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব। একজনকে ডিঙিয়ে অন্যকে সিনিয়রিটি দেওয়া, ভিন্নমতের চিকিৎসকদের দূরবর্তী এলাকায় শাস্তিমূলক বদলি, ড্যাব সমর্থক চিকিৎসকদের সুবিধা দিতে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি, বিদেশ ভ্রমণে পাঠানো ইত্যাদি কর্মকাণ্ড ছিল নিত্যনৈমিত্তিক কর্মসূচি। এখন স্বাস্থ্য খাতে চালকের পরিবর্তন। সেই পুরনো গাড়ি ড্যাবের পরিবর্তে নতুন চালক 'স্বাচিপ'। তারাও প্রায় একই অভিযোগে অভিযুক্ত। তবে ড্যাবের নেতৃত্ব ছিল একচ্ছত্রভাবে মহাসচিবের হাতে আর স্বাচিপ বহু ভাগে বিভক্ত। স্বাচিপ রাজনৈতিক দলাদলিতে যতটা উৎসাহী, চিকিৎসকদের স্বার্থরক্ষায় ততটাই অনুৎসাহী। বিএমএর কার্যকলাপ দলাদলির কারণে প্রায় স্থবির। স্বাচিপের নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়নি। সভাপতি এখনো বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দলীয় চিকিৎসকরা বুঝতে পারছেন না, কী কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাচিপের সভাপতির পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। স্বাচিপ ড্যাবের অন্যায় পথ পরিহার করে সব চিকিৎসকের কল্যাণে কাজ করুক, রাজনৈতিক দলাদলির অবসান হোক, বিএমএ তার স্বকীয়তা ফিরে পাক_এটা সময়ের দাবি।

লেখক : বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান,
পরমাণু চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.