উচ্চ আদালতের রায়-দ্রুত বাস্তবায়িত হোক

বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা দ্বিতীয় হলেও অবস্থার উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ নিতান্তই অপর্যাপ্ত। এখানে ওয়াসার সরবরাহ করা পানি পানের অযোগ্য। এই পানি পান করে প্রতিবছর বহু মানুষ ডায়রিয়া ও অন্যান্য পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। নদীতে নিক্ষিপ্ত রাসায়নিক বর্জ্যের কারণে ক্যান্সারসহ লিভার ও কিডনির রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।


অনেক এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ লাইন এতটাই পুরনো যে তাতে অসংখ্য ফুটো হয়ে গেছে এবং সেসব ফুটো দিয়ে স্যুয়ারেজের ময়লা পানি ওয়াসার সরবরাহ লাইনে ঢুকে পড়ছে। সেগুলো পুনঃ স্থাপনের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো এতটাই দূষিত যে সেগুলোর পানি পরিশোধনেরও অযোগ্য। অথচ নদীগুলোতে শিল্প-কারখানা এবং গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলা অব্যাহত আছে। হাজারীবাগের ট্যানারি-শিল্প এখনো স্থানান্তর করা যায়নি। নদীগুলোর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। শহরের স্যুয়ারেজ ও পানি নিষ্কাশনের লাইনগুলোর সংস্কার নেই। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। প্রতিনিয়ত অসংখ্য ভবন তৈরি হচ্ছে, রাজউক সেগুলোর অনুমোদনও দিচ্ছে; কিন্তু ভবনগুলোর সঙ্গে রাস্তার সংযোগ আছে কি না সেদিকে রাজউকের খেয়াল নেই। ঢাকায় এখন এমন অনেক অলিগলি আছে, যেখানে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ঢোকা তো দূরের কথা, ছোট্ট একটি অ্যাম্বুলেন্সও ঢুকতে পারে না। যানজটে ঢাকাবাসী নাকাল হলেও যানজট কমানোর জন্য পর্যাপ্ত ও কার্যকর উদ্যোগ নেই। এসব ক্ষেত্রে গত আড়াই বছরে উচ্চ আদালত থেকে সরকারকে অনেক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অত্যন্ত দুঃখজনক যে উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনাগুলোও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। বারবার সময় প্রার্থনা করে কেবলই কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।
পরিবেশ দূষণ রোধকল্পে প্রদত্ত রায় ছাড়াও উচ্চ আদালত গত আড়াই বছরে আরো কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছিলেন। সেসব রায়ের মধ্যে আছে ফতোয়ার নামে বিচারবহির্ভূত শাস্তি প্রদান বন্ধ করা, স্কুল ও মাদ্রাসায় সব ধরনের শারীরিক শাস্তি প্রদান অসাংবিধানিক ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে ঘোষণা করা, মোটরযানের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গতিনিয়ন্ত্রক সিল স্থাপন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারার অপপ্রয়োগ রোধ, খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল ও বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় খাদ্য আদালত (ফুড কোর্ট) স্থাপন, চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে রোগীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় বন্ধ করা, নির্মাণ খাতের নিরাপত্তা বিধান, নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, এ পর্যন্ত এসব রায়ের খুব সামান্যই বাস্তবায়িত হয়েছে। রায় বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষেত্রে মূলত দায়ী আমলাদের অবহেলা ও অদক্ষতা। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবও এখানে বড় ভূমিকা পালন করেছে। আমরা চাই, জনস্বার্থে প্রদত্ত উচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে ত্বরিত পালন করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.