নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে-খাদ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ by ইফতেখার মাহমুদ

খাদ্য বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ‘জাতীয় স্বার্থে’ গত ২৭ জানুয়ারি দেশের ২১টি জেলায় একযোগে অনুষ্ঠিত ওই নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ বাতিলেরও সুপারিশ করেছে তিন সদস্যের ওই কমিটি।


গতকাল রোববার খাদ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল আউয়াল হাওলাদারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সচিব বরুণ দেব মিত্রের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে দায়ী করেনি। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণ চিহ্নিত করতে গিয়ে ছাপার কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ছাপাখানার নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করেছে। এ ছাড়া প্রশ্নপত্র বাঁধাই ও ছাপানোর সঙ্গে যুক্ত খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেছে কমিটি।
খাদ্যসচিব বরুণ দেব মিত্র এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে জানান, তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে তা আবারও নেওয়া হবে। শিগগিরই নিয়োগ পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে উল্লেখ করেন খাদ্যসচিব। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে দায়ী করতে না পারলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রশ্নপত্র তৈরি করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ)। মুদ্রণ, প্যাকিং ও বিতরণের কাজে খাদ্য অধিদপ্তরের ১১ জন কর্মকর্তা এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তা নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।
গত ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে ২৭ জানুয়ারি খাদ্য বিভাগের ওই নিয়োগ পরীক্ষাটি হয়। সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শকের ৪২৮টি পদের বিপরীতে দুই লাখ ১৮ হাজার ও নিম্নমান সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকের ৫০৩টি পদের বিপরীতে ৩০ হাজার প্রার্থী ওই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
অরক্ষিত ছাপাখানা: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ছাপাখানাটিতে প্রশ্নপত্রের মতো অতি গোপন নথি মুদ্রণের জন্য আনুষঙ্গিক সুবিধা ছিল না। এর প্রবেশপথে কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল না। কোনো রেজিস্টারে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশ বা বের হওয়ার সময় রেকর্ড করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রেসের ভেতরে ঢোকা বা বের হওয়ার সময় তল্লাশি করা হয়নি। কমিটির কাছে প্রেসের ব্যবস্থাপক বলেছেন, এ নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়া এর আগে ওই প্রেসে অন্য কোনো প্রশ্নপত্র ছাপা হয়নি।
সুপারিশ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রশ্নপত্র তৈরির ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারে—এমন অভিজ্ঞ কোনো সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
খাদ্য বিভাগের দায়িত্ব: প্রশ্নপত্র মুদ্রণ, বাঁধাই ও প্যাকিং কাজ অতি গোপনীয়তার সঙ্গে করার জন্য খাদ্য অধিদপ্তর একটি সহায়ক কমিটি গঠন করেছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই কমিটি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তামূলকব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি। এ কাজে খাদ্য অধিদপ্তরে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব বণ্টন করা ছিল না।
কমিটির প্রতিবেদনে মন্তব্য হিসেবে বলা হয়েছে, প্রশ্নপত্র বণ্টনের সঙ্গে যুক্ত খাদ্য বিভাগের নিজস্ব কমিটির সদস্য সংখ্যা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ছিল। এসব কাজে যত কম লোক সম্পৃক্ত করা যায়, ততই গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়।
নিয়োগপ্রত্যাশী সংস্থার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মুদ্রণ ও বাঁধাই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত না করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, অতি প্রয়োজনে দু-একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে যুক্ত করা যেতে পারে।
এ ছাড়া দায়দায়িত্ব নিয়ে দ্বৈততা এড়াতে একক কোনো অভিজ্ঞ সংস্থাকে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

No comments

Powered by Blogger.