তালপাখার গ্রাম by আল মাসুদ নয়ন, আতিকুর রহমান জনী ও সবিতা রহমান
গ্রামের নাম ছোলমাইদ পূর্বপাড়া। রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় অবস্থিত ছোলমাইদ পূর্বপাড়া গ্রামটি তালপাখা তৈরির গ্রাম হিসেবই পরিচিত। এই গ্রামটি তালপাখা তৈরির গ্রাম হলেও এই পাখা তৈরির তালপাতাসহ পুরো সরঞ্জাম আসে ময়মনসিংহ থেকে।
ময়মনসিংহের একটি গ্রাম থেকে তালপাখা তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা সংগ্রহ করা হয় বলে জানান তালপাখার একাধিক কারিগর। ছোলাইমদ পূর্বপাড়া গ্রামের পুরুষ এবং নারীসহ প্রায় ১০টি পরিবারের ৪০ থেকে ৫০ জন মানুষ এই তালপাখা তৈরি করে থাকেন। অনেকে পেশা হিসেবে এই তালপাখা তৈরিকেই বেছে নিয়েছেন।
অপরদিকে গ্রীষ্মকালের দাবদাহ খর-রোদ্দুর বা প্রচণ্ড গরমে জনজীবনের অস্থিরতায় শান্তির বায়ুর পরশ বুলিয়ে দেয় ‘তালপাখা’ বা ‘হাতপাখা’। দামে সস্তা হওয়ার কারণে শুধু দরিদ্র শ্রেণীর মানুষেরাই তালপাখা ব্যবহার করে তা কিন্তু নয়। রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতেও বৈদ্যুতিক লোড শেডিং হলেই ‘তালপাখা’ অন্য নাম ‘হাতপাখা’ ধনীক শ্রেণীর লোকেদের হাতে উঠে আসে। তালপাখা শৈল্পিকভাবেও বাংলার সংস্কৃতির একটি অনন্য একটি উদাহরণ। এর তৈরির কৌশলও শৈল্পিক মানের।
রোববার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর ফটো সাংবাদিক আতিকুর রহমান জনী এবং সবিতা রহমান ওই গ্রামে গিয়ে সংগ্রহ করেছেন চমকপ্রদ কিছু তথ্য এবং ছবি।
তালপাখা তৈরির কারিগর ও এর কেনা-বেচার সাথে জড়িত মো. আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘শীতের মাঝামাঝিতে ময়মনসিংহ থেকে এই পাখা তৈরির তালাপাতা আমরা সংগ্রহ করি। আমরা এই তালপাতা প্রাতি শ’ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় কিনে থাকি।’
ছোলাইমদ গ্রামের অপর বাসিন্দা আলমাস বাংলানিউজকে পাখা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানান, ‘প্রথমে পাতাগুলো ভাঁজ করে ভালো করে বেঁধে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। এরপর এই ভাঁজ খুলে ৩ থেকে ৪টি কাঠি দিয়ে তালপাতাকে সমানভাবে আটকিয়ে রেখে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। তারপর পানি থেকে উঠালে পুরো পাতাটাই খুলে যায়। এরপর রোদে শুকিয়ে শুরু হয় বানানোর কাজ। ধারালো লোহার পাত দিয়ে পাতাটিকে গোল করে চর্তুদিকে সুন্দর করে কাটা হয়। এরপর সরু কাঠি দিয়ে পুরো পাতা গোল করে বেঁধে সূতা দিয়ে সেলাই করা হয়। আবার কেউ কাপড় দিয়ে পাখার চারপাশে বাঁধাই করেন। আবার কেউ বাঁধাই ছাড়াই বাজারে ছেড়ে দেন। সেলাই ও বাঁধার কাজটি হাতেই করা হয়।’
তিনি আরও জানান, মাঘের মাঝামাঝি এবং ফাল্গুন মাসের শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে পাখার অর্ডার দিয়ে যান। এখন তালপাখা বানানোর মৌসুম, তাই কারিগরদের কাজের চাপ বেশি।
এদিকে ওই গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতেই কারিগর নেই বললেই চলে। পরিবারের সদস্যরাই সারাদিন বাড়িতে বসে বসে পাখা বানানোর কাজ করে থাকেন। পাখা তৈরিতে অভিজ্ঞ বয়স্করাই বেশি সময় দিয়ে থাকেন বলে পাইকারদের দেওয়া সময় অনুযায়ী দ্রুত অর্ডার সরবরাহ করা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পাইকাররা তাদের দেওয়া সময় শেষ হলেই অর্ডারকৃত পাখা নিতে আসেন। এসব তৈরি পাখা সেলাই করা বা বাঁধাই করাসহ সবই প্রতি শ’ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় নিয়ে যান ওই পাইকাররা। নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসব অর্ডার নিয়ে আসেন। ফাল্গুন মাসে যেসব পাখা পাইকাররা নিয়ে যাবেন তার বেশিরভাগই যাবে নারায়ণগঞ্জে।
অপরদিকে, এই পাখা তৈরি করেই এসব অধিকাংশ পরিবারের জীবন-জীবিকার অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। তবে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। শুধু বয়স্ক লোকেরাই এই পাখা তৈরির কাজটি ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছেন।
এ ব্যাপারে তালপাখা তৈরির সঙ্গে জড়িত ওই গ্রামের বাসিন্দা মাজেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, একজন কারিগর দৈনিক ১০০টি পাখা তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি পাখা তৈরিতে ৬ টাকা করে মজুরি নিলেও তিনি দৈনিক ৬০০ টাকা আয় করে থাকেন। সাধারণত একজন কারিগর পাখা তৈরি করে মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা উপার্জন করে থাকেন। তবে প্রতিটি পাখার পাইকারি মূল্য ১২ থেকে ১৩ টাকা করে পড়লেও সেগুলো খুচরা মার্কেটে বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
অপরদিকে গ্রীষ্মকালের দাবদাহ খর-রোদ্দুর বা প্রচণ্ড গরমে জনজীবনের অস্থিরতায় শান্তির বায়ুর পরশ বুলিয়ে দেয় ‘তালপাখা’ বা ‘হাতপাখা’। দামে সস্তা হওয়ার কারণে শুধু দরিদ্র শ্রেণীর মানুষেরাই তালপাখা ব্যবহার করে তা কিন্তু নয়। রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতেও বৈদ্যুতিক লোড শেডিং হলেই ‘তালপাখা’ অন্য নাম ‘হাতপাখা’ ধনীক শ্রেণীর লোকেদের হাতে উঠে আসে। তালপাখা শৈল্পিকভাবেও বাংলার সংস্কৃতির একটি অনন্য একটি উদাহরণ। এর তৈরির কৌশলও শৈল্পিক মানের।
রোববার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর ফটো সাংবাদিক আতিকুর রহমান জনী এবং সবিতা রহমান ওই গ্রামে গিয়ে সংগ্রহ করেছেন চমকপ্রদ কিছু তথ্য এবং ছবি।
তালপাখা তৈরির কারিগর ও এর কেনা-বেচার সাথে জড়িত মো. আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘শীতের মাঝামাঝিতে ময়মনসিংহ থেকে এই পাখা তৈরির তালাপাতা আমরা সংগ্রহ করি। আমরা এই তালপাতা প্রাতি শ’ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় কিনে থাকি।’
ছোলাইমদ গ্রামের অপর বাসিন্দা আলমাস বাংলানিউজকে পাখা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানান, ‘প্রথমে পাতাগুলো ভাঁজ করে ভালো করে বেঁধে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। এরপর এই ভাঁজ খুলে ৩ থেকে ৪টি কাঠি দিয়ে তালপাতাকে সমানভাবে আটকিয়ে রেখে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। তারপর পানি থেকে উঠালে পুরো পাতাটাই খুলে যায়। এরপর রোদে শুকিয়ে শুরু হয় বানানোর কাজ। ধারালো লোহার পাত দিয়ে পাতাটিকে গোল করে চর্তুদিকে সুন্দর করে কাটা হয়। এরপর সরু কাঠি দিয়ে পুরো পাতা গোল করে বেঁধে সূতা দিয়ে সেলাই করা হয়। আবার কেউ কাপড় দিয়ে পাখার চারপাশে বাঁধাই করেন। আবার কেউ বাঁধাই ছাড়াই বাজারে ছেড়ে দেন। সেলাই ও বাঁধার কাজটি হাতেই করা হয়।’
তিনি আরও জানান, মাঘের মাঝামাঝি এবং ফাল্গুন মাসের শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে পাখার অর্ডার দিয়ে যান। এখন তালপাখা বানানোর মৌসুম, তাই কারিগরদের কাজের চাপ বেশি।
এদিকে ওই গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতেই কারিগর নেই বললেই চলে। পরিবারের সদস্যরাই সারাদিন বাড়িতে বসে বসে পাখা বানানোর কাজ করে থাকেন। পাখা তৈরিতে অভিজ্ঞ বয়স্করাই বেশি সময় দিয়ে থাকেন বলে পাইকারদের দেওয়া সময় অনুযায়ী দ্রুত অর্ডার সরবরাহ করা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পাইকাররা তাদের দেওয়া সময় শেষ হলেই অর্ডারকৃত পাখা নিতে আসেন। এসব তৈরি পাখা সেলাই করা বা বাঁধাই করাসহ সবই প্রতি শ’ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় নিয়ে যান ওই পাইকাররা। নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসব অর্ডার নিয়ে আসেন। ফাল্গুন মাসে যেসব পাখা পাইকাররা নিয়ে যাবেন তার বেশিরভাগই যাবে নারায়ণগঞ্জে।
অপরদিকে, এই পাখা তৈরি করেই এসব অধিকাংশ পরিবারের জীবন-জীবিকার অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। তবে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। শুধু বয়স্ক লোকেরাই এই পাখা তৈরির কাজটি ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছেন।
এ ব্যাপারে তালপাখা তৈরির সঙ্গে জড়িত ওই গ্রামের বাসিন্দা মাজেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, একজন কারিগর দৈনিক ১০০টি পাখা তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি পাখা তৈরিতে ৬ টাকা করে মজুরি নিলেও তিনি দৈনিক ৬০০ টাকা আয় করে থাকেন। সাধারণত একজন কারিগর পাখা তৈরি করে মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা উপার্জন করে থাকেন। তবে প্রতিটি পাখার পাইকারি মূল্য ১২ থেকে ১৩ টাকা করে পড়লেও সেগুলো খুচরা মার্কেটে বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
No comments