মর্মান্তিক দুর্ঘটনা-দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে

দুর্ঘটনা বাড়ছে। মিরসরাই ট্র্যাজেডির ক্ষত এখনো শুকায়নি। সড়ক দুর্ঘটনা থেমে নেই। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। অকালে ঝরে যাচ্ছে প্রাণ। প্রতিকারহীনভাবেই বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। শনিবার সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে রাজধানীতে প্রাণ হারিয়েছেন এক মেধাবী সাংবাদিক। সোমবার কুমিল্লা ও নাটোরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।


রাজধানীতে নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে ইট পড়ে এক তরুণ কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। অথচ একটু সচেতন হলে অনেক জীবনই বাঁচানো সম্ভব।
একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারের জন্য বয়ে আনে সারা জীবনের কান্না। পরিবারের উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তির মৃত্যুতে অনেক সময় পরিবারটি পথে বসে। দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান আছে বলে মনে হয় না। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মূলত দায়ী অসচেতনতা। আমাদের দেশের গাড়িচালকদের পাশাপাশি পথচারীরাও অসচেতন। এর পাশাপাশি দায়ী করা যেতে পারে চালকদের লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে। যাঁদের হাতে গাড়ি তুলে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে রাজধানীতে যাঁরা গাড়ি চালাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স ভুয়া এবং গাড়ি ফিটনেসবিহীন। বিআরটিএর একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এই ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে গড়ে তুলেছেন অবৈধ ব্যবসা। তাঁদের লোভের বলি হতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। এই শ্রেণীর চালকদের গাড়ির ইঞ্জিন সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। ট্রাফিক আইন সম্পর্কেও এই চালকরা সচেতন নন। একজন চালকের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে এই জাতীয় চালকরা একেবারই সচেতন নন। ফলে গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে পেলেই এদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। ইদানীং নতুন এক ঝামেলা যুক্ত হয়েছে। এর নাম মোবাইল ফোন। রাজধানীর ভেতরে তো বটেই, হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় গাড়িচালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়। অনেক সময় রাতে গাড়ি চালান, এমন চালকরাও দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এর পাশাপাশি রয়েছে দুর্বল আইন। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে শিশু হামিমের মৃত্যুর পর টিভি ক্যামেরার সামনে গাড়িচালকের নির্বিকার কথা বলার দৃশ্যকে মনে করিয়ে দিল বেলালের ঘাতক বাসের চালকের নির্বিকার থাকার দৃশ্য। এসব দুর্ঘটনার হোতা গাড়িচালকদের দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হলে তাঁরা এভাবে রাস্তায় গাড়ি বের করতেন না। গাড়ি মালিকদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত। অন্যদিকে ফিটনেসবিহীন গাড়ি যে দেশে কত চলে, তারও কোনো সঠিক পরিসংখ্যান বোধ হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। অথচ হাইওয়ে পুলিশ নামে পুলিশের একটি আলাদা বিভাগ রয়েছে। পৃথিবীর সব দেশেই গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা নিষেধ। বিদেশে কোথাও গাড়িচালকদের গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখলেই বড় অঙ্কের জরিমানাসহ তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বাংলাদেশেই শুধু গাড়িচালকদের কী হাইওয়েতে, কী রাজধানীর ভেতরে গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখা যায়। এর কোনো প্রতিকার নেই।
একই অবস্থা নির্মাণাধীন ইমারতের ক্ষেত্রেও। তরুণ মুন্নার মৃত্যু হয়েছে নির্মাণাধীন ইমারতের ওপর থেকে নির্মাণসামগ্রী পড়ে। একটি ইমারত নির্মাণেরও নিয়ম আছে। নিয়ম ভঙ্গ করা হয় বোধ হয় কেবল বাংলাদেশে। প্রায় প্রতিটি নির্মাণাধীন ইমারতের সামনে রাখা হয় নির্মাণসামগ্রী। বহুতল ভবনে নেই প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা। এর কোনো প্রতিকার নেই।
বেলাল ও মুন্নার মৃত্যু কি আমাদের সচেতন করবে? নাকি এভাবেই অসচেতনতার মাশুল দেওয়া চলতেই থাকবে? প্রতিদিন হাতের মুঠোয় জীবন নিয়েই কি আমাদের বের হতে হবে রাস্তায়?

No comments

Powered by Blogger.