মালদ্বীপ যাচ্ছে কোথায় by লে. জেনারেল প্রকাশ সি ক্যাটচ (অব.)

ভারতীয় প্রশাসন মনে হয় মালদ্বীপের সঠিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অনুমান করতে পারছে না। প্রচার মাধ্যমও এই দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। মৌলবাদের থাবা সেখানে পড়েছে কয়েক বছর আগেই। তখন থেকেই বর্তমান অস্থিতিশীলতার সূত্রপাত হয়। তারই সূত্র ধরে কিছু মানুষ বিক্ষোভের জন্ম দেয়। আর তাদের সঙ্গে যোগ দিতে দেখা যায় কিছু পথভ্রষ্ট পুলিশকেও। এই পুলিশরাই আসলে উন্মুক্ত রাস্তায় মিলিটারির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।


গত পাঁচ বছর ধরে সংস্কারবাদীদের সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি সে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোচরে ছিল। তরুণরা তখন থেকেই পাকিস্তানে যেতে থাকে। তারা লস্কর-ই-তৈয়বা থেকে প্রশিক্ষণ নিতে থাকে। রাজপথে প্রায়ই বোরকা পরা মহিলাদের দেখা যেতে থাকে। দক্ষিণপন্থী বেশ কিছু ক্ষুদ্র সংগঠনের জোট ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেমে পড়ে। বিরোধী দল তাতে সমর্থন জোগায়। তাদের আন্দোলনের মুখে দেশে মদ নিষিদ্ধ হয়। যদিও পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল দেশটিতে এই মদের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার্য। পর্যটন শিল্পে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে গেলে তখন সরকার বাধ্য হয় শুধু রিসোর্টগুলোতে মদ্যপান থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্টের বাড়ির আঙিনায় ১০০ বোতল মদ পাওয়া যাওয়ার ঘটনা আলোচনায় নতুন মাত্রা আনে। কারণ এতে করে প্রেসিডেন্টও তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
তিন বছর আগেই সোমালিয়ার জলদস্যুদের জাতীয় পর্যায়ের হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল মালদ্বীপে। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, এমনকি, ভারতও অবজ্ঞা করে আসছিল। মালদ্বীপের এই উদ্বেগের যথাযথ কারণও ছিল। তাদের জলসীমাতেই এহেন ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। তাদের কোস্টগার্ডের সঙ্গে বার কয়েক সংঘর্ষও হয়েছে। সোমালীয় জলদস্যুদের হামলা সম্পর্কে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত সজাগ হয়েছে একান্তই তাদের নিজেদের জাহাজগুলোর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে।
ভারতীয় সমুদ্রসীমার মধ্যে সোমালীয়রা যেভাবে দস্যুবৃত্তি করে চলেছে, তার দূরত্ব পরিবর্তন হয়েছে ইতিমধ্যে। ২০০৫ সালে তারা ১০৫ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে চলে আসত। এখন এক হাজার ৩০০ নটিক্যাল মাইলে বর্ধিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সোমালীয় এই জলদস্যুদের সঙ্গে আল-কায়েদার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। জলদস্যুদের সংগঠন আলসাবাব আর জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সম্পর্ক আদর্শিকও বটে।
এটা অনেকেরই জানা আছে, এলটিটিইর নৌবাহিনীকে দক্ষ করার জন্য তাদের সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিল আল-কায়েদা। সোমালীয় জলদস্যুদের এই দস্যুবৃত্তিকে নিবৃত্ত করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের তৎপরতা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। বিশ্বশক্তি, বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রও এ ব্যাপারে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে বলে মনে হয় না।
মালদ্বীপের সংস্কার আন্দোলনের দিকে ভারতের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। সেখানে যেসব সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে, তাদের দমনের ব্যাপারে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে সেসবের প্রতি ভারতে সমর্থন থাকা উচিত। আল-কায়েদা এবং এলটিটিই মালদ্বীপের হাজারখানেক মানবশূন্য দ্বীপে অবস্থান গ্রহণ করতে পারে। তাদের সহজ অবস্থান ভারতের নিরাপত্তা বিঘি্নত করতে পারে। ভারতের মাওবাদী সংগঠনের কর্মীরা সেই সূত্রে এলটিটিইর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ সুবিধা পেতে পারে অদূর ভবিষ্যতে।
মালদ্বীপের নিরাপত্তার সঙ্গে ভারতেরও সম্পর্ক রয়েছে। কারণ দক্ষিণ ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপত্তা বিঘি্নত করতে পারে তারা। মালে থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার দূরতে অবস্থিত বেঙ্গালুরু তখন হুমকির মুখে পড়বে। ফলে আকাশপথ কিংবা জলপথ_দুইভাবেই ভারতে ওরা আসতে পারে। সুতরাং বিষয়টি সম্পর্কে ভারতের সুস্পষ্ট অবস্থানে থাকার কথা। ভারতকে আবারও প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ভারতের নীতিনির্ধারকদের অত্যন্ত সচেতনভাবে এবং গুরুত্বসহ মালদ্বীপের নিরাপত্তা, তাদের সেখানকার সাংবিধানিকব্যবস্থা অটুট রাখার ব্যাপারটি ভাবতে হবে। এটা ভাবতে হবে নিজেদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে অধিকতর খারাপ কিছু যাতে না হয়ে যায়। আমাদের জাতীয় স্বার্থকে অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়োজনেই সব কিছু ভাবতে হবে।
লেখক : ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও সামরিক বিশ্লেষক।
আউটলুক অনলাইন থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.