তাজউদ্দীনের নাতিকে নির্যাতন-দুই এসআই প্রত্যাহার, পাঁচ কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে তলব

দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের নাতি রাকিব হোসেনকে নির্যাতনের ঘটনায় গুলশান থানার দুই উপপরিদর্শককে (এসআই) প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে গতকাল রোববার একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।
ওই নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তাকে আদালতে তলব করেছেন হাইকোর্ট।


একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলাসহ অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। দুজন পুলিশ সদস্যকে (গুলশান থানার দুই উপপরিদর্শক) প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠুভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণসংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন আহত রাকিবকে হাসপাতালে দেখতে যান। এ ব্যাপারে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি। এর পরপরই জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়।
গতকাল সকালে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার চৌধুরী লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার রাতে গুলশান থানার দুই উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান ও সৌমেন বড়ুয়াকে প্রত্যাহার করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল সকালে এ ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার বেনজীর আহমেদ। গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার শেখ মারুফ হাসানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্য হলেন সহকারী পুলিশ কমিশনার এস এম আশরাফুজ্জামান।
কমিটির প্রধান শেখ মারুফ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন কমিশনার।
হাইকোর্টের রুল: রাকিব হোসেনকে নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। ওই ঘটনায় নিজেদের ভূমিকার ব্যাখ্যা জানাতে ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁদের হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল ওই নির্দেশের পাশাপাশি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলও জারি করেছেন।
নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাসহ অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল রোববার প্রথম আলোয় ‘তাজউদ্দীনের নাতিকে পেটাল পুলিশ’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন।
শুনানিতে শ ম রেজাউল করিম বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর নাতিকে এভাবে পেটানো দুঃখজনক। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নাতিকে যদি এভাবে নিগৃহীত করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে। এ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। শুনানির পর আদালত আদেশ দেন।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাকিব হোসেনকে নির্যাতনের ঘটনায় আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তাকে ১৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে নিজেদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।
পুলিশের ওই পাঁচ কর্মকর্তা হলেন—পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার চৌধুরী লুৎফুল কবির, সহকারী কমিশনার আশরাফুল আজিম, গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম, উপপরিদর্শক (এসআই) সৌমেন বড়ুয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান।
রাকিবের পরিবারের অভিযোগ, বিনা অপরাধে গুলশান এলাকায় পুলিশ রাকিবের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে এবং টানাহেঁচড়া করে থানায় নিয়ে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করে। এ লেভেল পড়ুয়া ১৯ বছর বয়সী রাকিব বর্তমানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আদালত রাকিব হোসেনের চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্যাদি ১৬ ফেব্রুয়ারির আগে দাখিল করতে ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) নির্দেশ দিয়েছেন।
রাকিব আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জোহরা তাজউদ্দীনের নাতি। তাঁর মামা সোহেল তাজ বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
রাকিব হোসেনের মা সিমিন হোসেন রিমি প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশে নিয়োগের ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। চাকরির পর তাদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ হওয়া দরকার। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করতে হবে, সেটাও ভালোভাবে শেখানো উচিত।

No comments

Powered by Blogger.