সুস্থ রাজনৈতিক বক্তব্যই প্রত্যাশিত-প্রধানমন্ত্রীর অতীতমুখী ভাষণ

সিলেটে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার জনসভার পরদিন নীলফামারীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা থাকায় তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক কৌতূহল ছিল। তিনি যে তাঁর ভাষণে আগের দিন বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের জবাব দেবেন, সে সম্পর্কেও আমরা নিঃসংশয় ছিলাম।


কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এ মুহূর্তে রাজনীতিতে যে দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে—সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। কিছু বলেননি পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ সম্পর্কেও।
প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির দীর্ঘ ফিরিস্তি দেওয়ার পাশাপাশি বিগত চারদলীয় জোট নেতাদের দুর্নীতির বিচার করার কথা বলেছেন। অতীতের দুর্নীতির দায়ে যখন তিনি কাউকে জেল খাটানোর হুমকি দেন, তখন তাঁর সরকারের আমলে কোথায় কী হচ্ছে, দেশবাসী তা-ও জানতে চাইবে। অতীত সরকারের দুর্নীতির বিচার জরুরি। কিন্তু তার চেয়েও বেশি জরুরি বর্তমানের দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অতীত যতটা গুরুত্ব পেয়েছে, বর্তমান ততটাই উপেক্ষিত হয়েছে। শেয়ারবাজারে ধস, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংকট নিয়েও তিনি জনগণকে কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের মানুষ ভালো আছে, এটা বিরোধী দলের নেত্রীর পছন্দ নয়।’ কিন্তু দেশের মানুষ কি সত্যিই ভালো আছে?
প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, আমরা তা সমর্থন করি। কতিপয় মতলববাজ ছাড়া দেশের সর্বস্তরের মানুষই যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়। বিচার-প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যাক, সেটাই সবার প্রত্যাশা। যারা এই বিচারের বিরোধিতা করছে, তাদের মুখোশও উন্মোচন করতে হবে। তবে আদালতিক বিষয়ে রাজনৈতিক বাহাস যত কম হয়, ততই মঙ্গল। প্রধানমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন, তার সঙ্গে দ্বিমত করার কিছু নেই। শিল্প-বাণিজ্যসহ অনেক ক্ষেত্রেই উত্তরবঙ্গ পিছিয়ে আছে। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সব অঞ্চলের সুষম উন্নয়ন প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বিরোধীদলীয় নেতার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করেছেন, ‘কয়টায় তাঁর সকাল হয়, রাতে তিনি কী করেন?’ এ ধরনের কটাক্ষপূর্ণ বক্তব্য যেমন শিষ্টাচারের সীমা লঙ্ঘন করে, তেমনি রাজনৈতিক তিক্ততা বাড়ায়। জাতীয় নেতা-নেত্রীদের কাছ থেকে আমরা সুস্থ ও শালীন রাজনৈতিক বক্তব্যই আশা করি।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রাজনীতিতে শিষ্টাচার ফিরিয়ে আনার যে অঙ্গীকার ছিল, প্রধানমন্ত্রী ‘আপনি আচরি ধর্মের’ মাধ্যমে তা বাস্তবায়নে মনোযোগী হলে নিঃসন্দেহে রাজনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

No comments

Powered by Blogger.