স্মরণ-মেঘনাপারের ছেলে কবি আহসান হাবীব by সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম
সময়ের সঙ্গে নিজে তাল মেলাননি বরং সময়কে ছুটিয়েছিলেন নিজস্ব আধুনিকতার পেছনে। সঙ্গে নয় সময়ের আগে আগে পথচলা মানুষ। আধুনিক কবিতার কবি এমন পরিচয় কয়েকজনেরই রয়েছে। তার মধ্যে তিনিও একজন কিন্তু বড় পরিচয়, তিনি সবার কবি। পরিবর্তনের কবি। তাঁর কবিতা শুধু নির্দিষ্ট একটি বয়সী বা শ্রেণীর নয়।
যেমন কিশোরদের স্বপ্ন এঁকেছিলেন মেঘনা পাড়ের ছেলের গল্প শুনিয়ে, তেমনি মানুষ যখন তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে সংকটে পড়ে, সেই অভিজ্ঞতার ঝুলি বহনকারীদের জন্য লিখেছেন, 'আসমানের তারা সাক্ষি/সাক্ষি এই জমিনের ফুল, এই/নিশিরাইতে বাঁশবাগান বিস্তর জোনাকি সাক্ষি/সাক্ষি এই জারুল-জামরুল, সাক্ষি/ পূবের পুকুর, তার ঝাঁকড়া ডুমুরের ডাল স্থিরদৃষ্টি/ মাছরাঙা আমাকে চেনে/আমি কোনো অভ্যাগত নই/খোদার কসম আমি ভিনদেশি পথিক নই/আমি কোন আগুন্তক নই।' কবি আহসান হাবিব 'আমি কোন আগুন্তুক নই' কবিতায় নিজের পরিচয়ের সাক্ষী মেনেছিলেন জোনাকি, ডুমুরের ডালকে। কিন্তু সময়ই সাক্ষী রেখে গেছে, কবি আহসান হাবীব শুধু আগুন্তুক নন, তিনি এই মাটি-জল-নদী আর সবুজের চিরায়ত এক সন্তান। তাঁর কবিতায় প্রকৃতির যে দ্যোতনা তৈরি হয়েছে, এমন করে আর কজন পেরেছে?
কবির জন্ম ১৯১৭ সালে পিরোজপুরের শংকরপাশায়। বাবা নাম রেখেছিলেন হাবীবুর রহমান। মোটেও পছন্দ ছিল না নিজের নাম, তাই পাল্টে রেখেছিলেন আহসান হাবীব। ১৯৩৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে বাবার অমতে পালিয়ে গেছেন কলকাতায়। চোখে তখন অনেক বড় লেখক হওয়ার স্বপ্ন। তাঁর কি মানায় চাকরির বোঝা? বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও জেদটা ঠিকই বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। হার মানেননি দারিদ্র্যের কাছে, তাই মাত্র ২০ বছর বয়সেই কাজ শুরু করেন তকবীর, বুলবুল ও সওগাতের মতো পত্রিকায়। ১৯৪৩-৪৮ সালে কাজ করেছেন আকাশবাণী কলকাতায়। '৪৭-এ দেশ ভাগের পর তিনি ফিরে এলেন পূর্ববাংলায়। এ বছর বিয়ে করেন, এ বছরই বেরিয়েছিল কবির প্রথম কবিতার বই 'রাত্রিশেষ'। কিছুদিন কাজ করেছেন ফ্রাংকলিনে। ১৯৬৪ সালে যোগ দেন দৈনিক বাংলায় (তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানে)। শেষদিন পর্যন্ত কাজ করেছেন এই পত্রিকায়। দীর্ঘ বিশ বছর কবি আহসান হাবিবের হাতেই সম্পাদিত হয়েছে দৈনিক বাংলার সাহিত্য পাতা। কাজের ক্ষেত্রে আপসহীন স্নিগ্ধ রুচির আহসান হাবীব তখন দুই বাংলাতেই সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়। বরাবরই সংখ্যাধিক্য থেকে গুণের প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি আহসান হাবীব। তাই কবিতার বই মাত্র হাতেগোনা আটটি। ছায়াহরিণ, সারা দুপুর, আশায় বসতি, মেঘ বলে চৈত্রে যাবো, দুই হাতে দুই আদিম পাথর, প্রেমের কবিতা ও বিদীর্ণ দর্পণে মুখ। প্রতিটি কাব্যগ্রন্থে তিনি নিজেকে আরো সৃজনশীল, আরো বেশি তীক্ষ্ন করেছেন। আগের বইটি থেকে আরো বেশি আধুনিক হয়েছে পরের বইটি। এখানেই কবি রেখেছিলেন তাঁর গতির ছাপ। ছোটদের জন্য লিখেছেন রানী সাঁকোর খাল, ছুটির দিন দুপুরে, জোছনা রাতের গল্প। কবির প্রাপ্তির মধ্যে স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ বাংলাদেশের সব উল্লেখযোগ্য পুরস্কার থাকলেও সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মানুষের সম্মান। সে সময়ে মধ্যবিত্ত জীবনের যন্ত্রণা ও বাংলার মাটির এমন নৈসর্গিক রূপ কবি আহসান হাবিবের মতো করে আর কে পেরেছে তুলে আনতে? ১৯৮৫ সালের ১০ জুলাই কবি মৃত্যুবরণ করেন। কবির মৃত্যুদিনে রইল শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম
কবির জন্ম ১৯১৭ সালে পিরোজপুরের শংকরপাশায়। বাবা নাম রেখেছিলেন হাবীবুর রহমান। মোটেও পছন্দ ছিল না নিজের নাম, তাই পাল্টে রেখেছিলেন আহসান হাবীব। ১৯৩৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে বাবার অমতে পালিয়ে গেছেন কলকাতায়। চোখে তখন অনেক বড় লেখক হওয়ার স্বপ্ন। তাঁর কি মানায় চাকরির বোঝা? বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও জেদটা ঠিকই বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। হার মানেননি দারিদ্র্যের কাছে, তাই মাত্র ২০ বছর বয়সেই কাজ শুরু করেন তকবীর, বুলবুল ও সওগাতের মতো পত্রিকায়। ১৯৪৩-৪৮ সালে কাজ করেছেন আকাশবাণী কলকাতায়। '৪৭-এ দেশ ভাগের পর তিনি ফিরে এলেন পূর্ববাংলায়। এ বছর বিয়ে করেন, এ বছরই বেরিয়েছিল কবির প্রথম কবিতার বই 'রাত্রিশেষ'। কিছুদিন কাজ করেছেন ফ্রাংকলিনে। ১৯৬৪ সালে যোগ দেন দৈনিক বাংলায় (তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানে)। শেষদিন পর্যন্ত কাজ করেছেন এই পত্রিকায়। দীর্ঘ বিশ বছর কবি আহসান হাবিবের হাতেই সম্পাদিত হয়েছে দৈনিক বাংলার সাহিত্য পাতা। কাজের ক্ষেত্রে আপসহীন স্নিগ্ধ রুচির আহসান হাবীব তখন দুই বাংলাতেই সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়। বরাবরই সংখ্যাধিক্য থেকে গুণের প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি আহসান হাবীব। তাই কবিতার বই মাত্র হাতেগোনা আটটি। ছায়াহরিণ, সারা দুপুর, আশায় বসতি, মেঘ বলে চৈত্রে যাবো, দুই হাতে দুই আদিম পাথর, প্রেমের কবিতা ও বিদীর্ণ দর্পণে মুখ। প্রতিটি কাব্যগ্রন্থে তিনি নিজেকে আরো সৃজনশীল, আরো বেশি তীক্ষ্ন করেছেন। আগের বইটি থেকে আরো বেশি আধুনিক হয়েছে পরের বইটি। এখানেই কবি রেখেছিলেন তাঁর গতির ছাপ। ছোটদের জন্য লিখেছেন রানী সাঁকোর খাল, ছুটির দিন দুপুরে, জোছনা রাতের গল্প। কবির প্রাপ্তির মধ্যে স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ বাংলাদেশের সব উল্লেখযোগ্য পুরস্কার থাকলেও সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মানুষের সম্মান। সে সময়ে মধ্যবিত্ত জীবনের যন্ত্রণা ও বাংলার মাটির এমন নৈসর্গিক রূপ কবি আহসান হাবিবের মতো করে আর কে পেরেছে তুলে আনতে? ১৯৮৫ সালের ১০ জুলাই কবি মৃত্যুবরণ করেন। কবির মৃত্যুদিনে রইল শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম
No comments