‘সুবিধা পেয়ে সাক্ষ্য দিইনি’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবী গতকাল বুধবার আইনগত মতামতে বলেছেন, মানিক পসারি সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সরকারি সুবিধার আশায় ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির আশ্বাসের ভিত্তিতে সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর


বিরুদ্ধে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষী মানিক পসারিকে (৬৫) জেরার শেষ দিকে সাঈদীর আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনসারী এ মতামত দেন। তবে এ মতের বিরোধিতা করে মানিক পসারি বলেন, এটা সত্য নয়। কারও উপদেশ শুনে বা সরকারি সুবিধা নিয়ে তিনি সাক্ষ্য দেননি।
বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে গতকাল মানিককে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জেরা শেষ হয়। আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা হবে।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে মানিককে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, মানিকের জবানবন্দি অনুসারে, একাত্তরের ১৮ মে তাঁর বাড়ির কাজের লোক ইবরাহিম ওরফে কুট্টিকে হত্যা করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইবরাহিমকে হত্যা করা হয় ১ অক্টোবর। ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই ইবরাহিমের স্ত্রী মমতাজ বেগম পিরোজপুর সদর থানায় এ বিষয়ে একটি মামলা করেন। তবে এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে সাক্ষী বলেন, এটি সত্য নয়।
জেরায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মানিক পসারি বলেন, একাত্তরে এক বান্ডিল টিনের দাম কত ছিল, তা তিনি জানেন না। ওই সময় কাঠের বা ইটের দাম কেমন ছিল, তা-ও তাঁর জানা নেই। পিরোজপুরের সদর থানার শঙ্করপাশা ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামে তাঁর বাবার ১৪-১৫ বিঘা জমি ছিল। তবে কাগজপত্র না থাকায় ওই জমি জবরদখল হয়ে গেছে।
জেরায় মানিক পসারি আরও বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনারা ও রাজাকাররা তাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পরে সেটি আর বাসযোগ্য ছিল না। অগ্নিসংযোগের প্রায় ১৫ দিন পর তিনি বাঁশের খুঁটি ও পোড়া টিন দিয়ে বাস করার মতো ডেরা বেঁধে নিয়েছিলেন। বাড়ি পোড়ার পর তিনি তাঁর মামা হাসেম আলীর বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন।
জেরার একপর্যায়ে মানিক পসারি বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে তিনি পিরোজপুর আদালতে ২০০৮ সালে মামলা করেছিলেন। মামলা করতে কেন দেরি হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ওই মামলায় ফুফাতো ভাই মফিজউদ্দীন সম্পর্কে কোনো বক্তব্য দিয়েছেন কি না, তা তাঁর মনে নেই।
দুপুরে এক ঘণ্টা বিরতির পর আইনজীবী মিজানুল আবারও মানিককে জেরা করেন। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মানিক বলেন, শান্তি কমিটির সদস্য সেকান্দার শিকদার, দানেশ মোল্লা, মোসলেম মাওলানা, রাজাকার মোমিন ও সোবহান মাওলানাকে তিনি একাত্তরের আগে থেকে চিনতেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, শঙ্করপাশা ইউনিয়নে কোনো শান্তি কমিটি ছিল না। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একরাম খলিফাকে তিনি চেনেন, কিন্তু তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না।
মিজানুল ইসলাম সাক্ষীর কাছে জানতে চান, তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কি না। জবাবে সাক্ষী বলেন, ‘সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করিনি, তবে সহযোগিতা করেছি।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করায় তাঁকে তালিকাভুক্তির জন্য স্থানীয় সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল তাঁর নামে ডিও লেটার দিয়েছেন। এ সময় আইনজীবী জানতে চান, সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুর আদালতে মামলা করার আগে না পরে ওই ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। জবাবে সাক্ষী বলেন, এটি তাঁর মনে নেই।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে মানিক পসারিকে জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। পরে ট্রাইব্যুনাল আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.