বিশ্ব সাদা ছড়ি দিবস by জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ
তুমি এপার-ওপার করো কে গো ওগো খেয়ার নেয়ে'। স্মরণ করুন গানটির অন্য লাইনের কথা। একবার ভেবে দেখুন তো, জন্মান্ধ কোনো বন্ধু যখন মধুময় এ গানটি শুনবে, তার মনে কি কোনো পরিচিত স্মৃতি ভেসে আসবে? কোত্থেকে আসবে? স্মৃতির জানালা তো তার জন্ম থেকেই বন্ধ! এমনকি রোমানা মঞ্জুরের মতো আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনায় যিনি চোখ হারিয়েছেন অথবা ধীরে ধীরে রোগে ভুগে যিনি চোখ হারিয়েছেন, তাঁর জন্য স্মৃতি যেন আরো বিষাদের। শরীরে পুবালি
বাতাস লাগলেও চোখ ভিজে যায়। কেবল মনে হয়, গাছের পাতাগুলো বাতাসের জোরে উল্টে উল্টে যাচ্ছে কি না। কবির কবিতা যেন তখন বাস্তবে চোখের নোনা জলের ঢল হয়ে আসে_'চোখটা এত পোড়ায় কেন ও পোড়া চোখ সমুদ্রে যাও/সমুদ্র কি তোমার ছেলে, আদর দিয়ে চোখে মাখাও'। দেহের প্রতিটি অঙ্গই প্রয়োজনের। তবে চোখ যেন প্রয়োজনেরও ঊধর্ে্ব। চোখ বুজিলেই দুনিয়া আন্ধার।
আজ ১৫ অক্টোবর, বিশ্ব সাদা ছড়ি দিবস। সেই সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানানোর প্রতীকী দিবস। ১৯৬৯ সালে শ্রীলঙ্কায় প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য একটি আলাদা দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে সাদা ছড়ি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। শুধু যে ১৫ অক্টোবর অন্ধ বন্ধুরা চোখে দেখেন না আর অন্যদিন দেখেন, তা কিন্তু নয়! চোখের আলোয় তাঁরা চোখের বাহিরে দেখেন না কোনো দিনই। তাই আমরা যারা স্রষ্টার ইচ্ছায় এত সুন্দর দুনিয়াটা দেখতে পাচ্ছি, তাদের প্রতিদিনের প্রচেষ্টা যেন থাকে ওই বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানোর, যাঁরা স্রষ্টার খেয়ালিতে নিদারুণ অসহায়। আমার বন্ধুত্বে, সহায়তায় ও বর্ণনায় দৃষ্টিহীন বন্ধুটি যেন কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারেন এই সুন্দর, চিরযৌবনা ধরণিকে। তাঁর মনের চোখে যেন আমি ছড়িয়ে দিতে পারি প্রভাত-অরুণের একচিলতে আলো। কিংবা সাঝের মায়ায় দেখা কোনো এক শীতের কুয়াশাঢাকা সন্ধ্যা। কোনো একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বন্ধুকে রাস্তা পার করে দেওয়া মানেই কিন্তু আমার দায়িত্ব শেষ নয়। দৃষ্টি যে পেয়েছি, অসীম মূল্যমানের এই দৃষ্টি, এর মূল্য পরিশোধ করতে হবে দৃষ্টহীনকে দৃষ্টি দিয়ে। সে দৃষ্টি যেন হয় মমতায়, বন্ধুত্বে, ভালোবাসায়। আমার এক বন্ধু প্রায়ই বলত, 'তুই অরুণ, কিন্তু তুই মরলে সবাই বলবে, এ অরুণের লাশ।' তাহলে অরুণটা কে! হ্যাঁ, অরুণটা কিন্তু আমার দেহ নয়, অদৃশ্য আমিটাই আমি। তাই এই দেহ ত্যাগের পর যদি চক্ষু দুটি দান করে যাই, তাহলে হয়তো এপার-ওপার করা খেয়ার নেয়েকে দুটি দৃষ্টিহীন বন্ধু অন্তত একটি চোখে হলেও দেখবে। মরে গিয়ে শরীর পচিয়ে কী হবে তা আমি জানি না, কিন্তু দৃষ্টি ছড়িয়ে গেলে যে আলো ছড়িয়ে দেওয়া হবে সে আমি জানি। আসুন না, বেঁচে থেকে দৃষ্টিহীনে দৃষ্টি দিই বর্ণনায় ও বন্ধুত্বে আর মরে গিয়ে আলো দিই কোনো এক চিরবঞ্চিত চোখে।
আজ ১৫ অক্টোবর, বিশ্ব সাদা ছড়ি দিবস। সেই সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানানোর প্রতীকী দিবস। ১৯৬৯ সালে শ্রীলঙ্কায় প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য একটি আলাদা দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে সাদা ছড়ি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। শুধু যে ১৫ অক্টোবর অন্ধ বন্ধুরা চোখে দেখেন না আর অন্যদিন দেখেন, তা কিন্তু নয়! চোখের আলোয় তাঁরা চোখের বাহিরে দেখেন না কোনো দিনই। তাই আমরা যারা স্রষ্টার ইচ্ছায় এত সুন্দর দুনিয়াটা দেখতে পাচ্ছি, তাদের প্রতিদিনের প্রচেষ্টা যেন থাকে ওই বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানোর, যাঁরা স্রষ্টার খেয়ালিতে নিদারুণ অসহায়। আমার বন্ধুত্বে, সহায়তায় ও বর্ণনায় দৃষ্টিহীন বন্ধুটি যেন কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারেন এই সুন্দর, চিরযৌবনা ধরণিকে। তাঁর মনের চোখে যেন আমি ছড়িয়ে দিতে পারি প্রভাত-অরুণের একচিলতে আলো। কিংবা সাঝের মায়ায় দেখা কোনো এক শীতের কুয়াশাঢাকা সন্ধ্যা। কোনো একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বন্ধুকে রাস্তা পার করে দেওয়া মানেই কিন্তু আমার দায়িত্ব শেষ নয়। দৃষ্টি যে পেয়েছি, অসীম মূল্যমানের এই দৃষ্টি, এর মূল্য পরিশোধ করতে হবে দৃষ্টহীনকে দৃষ্টি দিয়ে। সে দৃষ্টি যেন হয় মমতায়, বন্ধুত্বে, ভালোবাসায়। আমার এক বন্ধু প্রায়ই বলত, 'তুই অরুণ, কিন্তু তুই মরলে সবাই বলবে, এ অরুণের লাশ।' তাহলে অরুণটা কে! হ্যাঁ, অরুণটা কিন্তু আমার দেহ নয়, অদৃশ্য আমিটাই আমি। তাই এই দেহ ত্যাগের পর যদি চক্ষু দুটি দান করে যাই, তাহলে হয়তো এপার-ওপার করা খেয়ার নেয়েকে দুটি দৃষ্টিহীন বন্ধু অন্তত একটি চোখে হলেও দেখবে। মরে গিয়ে শরীর পচিয়ে কী হবে তা আমি জানি না, কিন্তু দৃষ্টি ছড়িয়ে গেলে যে আলো ছড়িয়ে দেওয়া হবে সে আমি জানি। আসুন না, বেঁচে থেকে দৃষ্টিহীনে দৃষ্টি দিই বর্ণনায় ও বন্ধুত্বে আর মরে গিয়ে আলো দিই কোনো এক চিরবঞ্চিত চোখে।
No comments