রোভার মুটের শিক্ষায় দেশকে আলোকিত করার প্রত্যয়

‘রোভার মুটে অংশ নিয়ে নিজের কাজ নিজে করছি। তাঁবু বাস করে রান্নার কাজ, তাঁবু পরিষ্কারসহ নিজের কাজ নিজেই করছি, যা বাসায় কখনোই করতাম না। তাই এখান থেকে আত্মনির্ভরশীল হতে শিখেছি। এখানের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’ গতকাল বুধবার কথাগুলো বলছিলেন কিশোরগঞ্জের ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও গার্ল-ইন রোভার তানিয়া আক্তার। তার মতো একই চিন্তা তাপসীরও।


তানিয়া, তাপসীসহ দেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার রোভার এবারের রোভার মুটে অংশ নিয়েছে। রোভার মুটের শিক্ষায় তারা দেশকে আলোকিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
গাজীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুরে গজারি বনঘেরা ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন এলাকায় গত সোমবার থেকে বাংলাদেশ স্কাউটের আয়োজনে শুরু হয়েছে সপ্তদশ রোভার মুট। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে: ‘আলোকিত জীবনের জন্য রোভারিং’।
রোভার মুটে অংশগ্রহণ করা নোয়াখালীর সৈকত ডিগ্রি কলেজের রোভার বিমল চন্দ্র শীল ও নজরুল ইসলাম বলেছে, ‘এখানে এসে অনেক নতুন বন্ধু হয়েছে। সবাই মিলে এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কারসহ সমাজসেবামূলক কাজ করেছি। এখানকার অভিজ্ঞতা কলেজের সব বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করব এবং তাদের নিয়ে সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করব। রোভারিংয়ের শিক্ষা ভবিষ্যৎ জীবনকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।’
রোভার কর্মকর্তারা জানান, ছয় দিনব্যাপী রোভার মুটে শিক্ষার্থীরা চারটি সাব-ক্যাম্পে ভাগ হয়ে প্রতিদিন ১৬টি চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করছে। সাব-ক্যাম্পগুলো হচ্ছে: নীলগিরি, নীলআঁচল, নীলসাগর, নীলডুমুর।
ওই ক্যাম্পের শিক্ষার্থীরা গতকাল বিভিন্ন চ্যালেঞ্জে অংশ নেয়। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে: সুস্বাস্থ্য, আবাস সাজাই, অভিযাত্রা, যুব ফোরাম ও যুব সংসদ, মহা তাঁবু জলসা, দেয়ালিকা, দুর্যোগব্যবস্থাপনা, জ্ঞান যাচাই, সমাজসেবা, হারজিৎ, দেখা-শেখা, তথ্যপ্রযুক্তি, রোভার প্রোগ্রাম ইকো, বন্ধুত্ব, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, ফেরার পালা।
রোভার পল্লির মূল ভবনে আয়োজন করা হয়েছে তথ্য ও প্রযুক্তি চ্যালেঞ্জের। গতকাল সকালে নীলসাগর সাব-ক্যাম্পের রোভাররা তথ্যপ্রযুক্তি চ্যালেঞ্জে অংশ নেয়। ওই চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণকারী টাঙ্গাইলের করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজের রোভার নিত্যনন্দ সরকার বলেছে, ‘আগে কখনো কম্পিউটার ছুঁয়েও দেখিনি। এখানে রীতিমতো কম্পিউটার চালাতে শিখে গেছি।’
রোভার পল্লির মাঠে একপাশে রয়েছে প্রদর্শনী পল্লি। যেখানে রয়েছে টিআইবি, রোভার, হামদর্দ, কোয়ান্টাম, রোটারি ক্লাব, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান ডেভেলপমেন্ট, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির স্টল।
চ্যালেঞ্জ-১২ তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ক মো. ফজলে রাব্বী প্রথম আলোকে বলেন, রোভারে অংশগ্রহণকারী সব ছাত্রছাত্রীকে একটি করে ই-মেইল ঠিকানা খুলে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই কম্পিউটার চালু ও বন্ধ করাও পারত না। এখন তারা কম্পিউটারে টাইপ করতে পারছে।
বাংলাদেশ রোভার অঞ্চলের সহসভাপতি অধ্যাপক নির্মল কান্তি মিত্র বলেন, রোভারদের জন্য রোভার পল্লিতে ছয় শতাধিক তাঁবু টানানো হয়েছে। চারটি সাব-ক্যাম্পে ৫০০ ইউনিট রয়েছে। এ ছাড়া গার্ল-ইন রোভারদের জন্য আবাসস্থল রয়েছে। রোভাররা প্রতিদিন যেসব কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে, তা তাদের জীবনকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।

No comments

Powered by Blogger.