মাদকের দংশন-উৎস সন্ধান করে কঠোর ব্যবস্থা নিন

মাদকের ছোবলে এ দেশের যুবসমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কিভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে, তারই পুনর্বার প্রমাণ মিলল ১৫ অক্টোবর কালের কণ্ঠে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আনাচেকানাচে বিচিত্র ধরনের মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য এতটাই সহজলভ্য হয়ে পড়েছে যে, সমাজে এর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পারিবারিক জীবন পর্যন্ত চরমভাবে বিপন্ন-বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। মাদকের নেশার


সর্বনাশা থাবা এক দিনে বিস্তার লাভ করেনি। কিন্তু উদ্বেগজনক হলো, ক্রমেই তা আরো প্রকট রূপ নিচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অনেক আগেই একটি অধিদপ্তরের জন্ম দেওয়া হলেও কার্যত এই অধিদপ্তরের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ। এমন কথাও রয়েছে, যে শর্ষে দিয়ে ভূত ছাড়ানো হবে, সেই শর্ষেতেই ভূত রয়েছে।
মাদকের ছোবল এতটাই প্রকট রূপ নিয়েছে যে, এ নিয়ে এখন আর আলোচনা-পর্যালোচনা, খতিয়ে দেখা, প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বা হবে_এসব উচ্চারণের মধ্যে বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখার উপায় নেই। বিভিন্ন পথে, বিভিন্ন কৌশলে দেশে নানা রকম মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ ঘটছে এবং তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এর পেছনে একটি শক্তিশালী চক্র সক্রিয় রয়েছে। মাঝেমধ্যে চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও রাঘববোয়ালরা থেকে যাচ্ছে একেবারেই ধরাছোঁয়ার বাইরে। গাছের শিকড় উপড়ে না ফেলে ডালপালা ছেঁটে যে কোনো লাভ হবে না, বিদ্যমান বাস্তবতা তারই সাক্ষ্যবহ। অভিজাত পরিবারের সন্তানরা যেমন মাদকাসক্তির সর্বনাশা পথে পা বাড়াচ্ছে, তেমনি মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং দরিদ্র ঘরের সন্তানরাও নষ্ট স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হচ্ছে, একই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে মূল্যবান অসংখ্য জীবন। বিষয়টি নিয়ে উদাসীনতা কিংবা আর কোনো ধরনের কালক্ষেপণ আরো বড় ধরনের সর্বনাশকেই ত্বরান্বিত করবে। এর প্রতিকারে সরকারের তরফে যেমন কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ দরকার, একই সঙ্গে প্রয়োজন মাদক পাচার, মাদকাসক্তি এবং মাদকের অবৈধ বেচাকেনার বিরুদ্ধে জোরদার সামাজিক আন্দোলন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনবল বৃদ্ধিসহ গোটা দপ্তরটিকে প্রয়োজন ঢেলে সাজানো। মাদকের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সীমান্তে নজরদারি কঠোর করার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাঁড়াশি অভিযানও চালাতে হবে। সর্বাগ্রে এসবের উৎস খুঁজে বের করতে হবে। বিষবৃক্ষের ডালপালা নয়, বৃক্ষটিকেই সমূলে উৎপাটন করতে হবে।
কোনো দেশের যুবসমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যদি মাদকাসক্তির ছোবলে ধ্বংসের কিনারে এসে দাঁড়ায়, তাহলে তা শুধু কয়েকটি পরিবার কিংবা সমাজের একাংশের জন্যই নয়, গোটা রাষ্ট্রের জন্যই দুঃসংবাদ এবং যুগপৎ উদ্বেগজনক। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছে যে, সম্প্রতি বরিশালে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাঁচ সদস্যের একটি দলকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়। পরে কোতোয়ালি থানা থেকে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। অবশ্য এ ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য থাকলেও বাস্তবতা যে উদ্বেগজনক, এ হচ্ছে তারই আলামত। এমন ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। আমরা আশা করি, আর কোনো রকম কালক্ষেপণ না করে জনগুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে সবকিছুর ঊধর্ে্ব উঠে পরিকল্পিত উপায়ে মাদকাসক্তি থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে সরকার সামাজিক শক্তির সমন্বয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে। এই অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করার দায় সর্বাগ্রে সরকারের। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে কথাবার্তা হয়েছে বিস্তর, কিন্তু কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, বিদ্যমান বাস্তবতা সে কথাই বলে। বিষয়টি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। কাজেই এখন কোনো টোটকা দাওয়াইয়ে এর সমাধান মিলবে না।

No comments

Powered by Blogger.