সাফল্যের পর সাফল্য by সজল জাহিদ ও সাবি্বর নেওয়াজ
কৈশোরের দুরন্তপনার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে অষ্টম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষার ফলেও। দ্বিতীয়বারের মতো দেশব্যাপী এ পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী বেশি পাস করেছে। 'জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট' (জেএসসি) আর মাদ্রাসার 'জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট' (জেডিসি) পরীক্ষায় সব মিলিয়ে এবার পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ বৃদ্ধিতে এসেছে সবচেয়ে বড় চমক। তিনগুণেরও বেশি জিপিএ-৫ বেড়েছে এক
লাফে। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী। আর এবার মেধার জোরে জিপিএ-৫ পেয়েছে সারাদেশের ৩০ হাজার ৮৫২ কিশোর-কিশোরী, যা গতবারের চেয়ে ২২ হাজার ২৯৬ জন বেশি। গত বছরের তুলনায় এবার ২৬০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে জিপিএ-৫। সব মিলিয়ে ঈর্ষণীয় এক সাফল্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার যত সূচক রয়েছে তার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এবার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। হোঁচট খাওয়া, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং
হার কমেছে। পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে; বেড়েছে শতভাগ পাসের প্রতিষ্ঠান এবং কমেছে শূন্য পাসের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও।
ফলের মান বৃদ্ধির সব সূচকের এমন ইতিবাচক উন্নতিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক_ সবার হৃদয়ে দোলা দিয়ে গেছে নির্মল আনন্দ। মাত্র এক দিন আগে প্রাথমিকের শিশুদের সাফল্যের পর এবার অষ্টম শ্রেণীর কিশোর-কিশোরীদের মেধার চমক রীতিমতো উচ্ছ্বাসের হাটে পরিণত করেছে দেশের হাজারো স্কুল-মাদ্রাসাকে। সাফল্যের পর সাফল্য আসায় সবার মুখে সুখের হাসি।
গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় সারাদেশে একযোগে এ দুটি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এবারও গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করা হয়। এ দুটি পরীক্ষায় সারাদেশে ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ৯৪৭ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৫ লাখ ৬ হাজার ৭৮৩ জন। পাসের হারে বরিশাল বোর্ড সবার শীর্ষে। আর জিপিএ-৫প্রাপ্তিতে সব বোর্ডকে পেছনে ফেলেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
দুটি পরীক্ষার মধ্যে কেবল সাধারণ আটটি শিক্ষা বোর্ডের জেএসসি পরীক্ষায় এবার অংশ নিয়েছিল ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪০ জন। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেশি ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ৩৮৪ জন। এবার পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৪৫ জন। পাস করেছে ১২ লাখ ৩১ হাজার ৮৮০ জন। গতবার অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষার চেয়ে এবার ৪ লাখ ৯ হাজার ৪০৫ শিক্ষার্থী বেশি পাস করেছে। পাসের এ হার ৮২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। জেএসসিতে ২৯ হাজার ৮৩৮ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গতবারের চেয়ে তা ২১ হাজার ৭৮৬ জন বেশি।
অন্যদিকে মাদ্রাসা বোর্ডের জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল মোট ৩ লাখ ৯ হাজার ৯০২ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৩ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। গতবারের চেয়ে জেডিসিতে পাসের হার বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। জেডিসিতে সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ১৪ জন। জিপিএ-৫প্রাপ্তি গতবারের চেয়ে ৫১০ জন বেড়েছে।
এবারের ফলের বৈশিষ্ট্য হলো_ উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, পাসের হার, জিপিএ-৫প্রাপ্তি এবং শতভাগ উত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে কমে এসেছে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এ ছাড়া কেউ পাস করেনি_ এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমে এসেছে। অবশ্য বহিষ্কারের সংখ্যা গতবারের চেয়ে এবার ৬০ জন বেশি ছিল।
পাসের হার, জিপিএ-৫ বৃদ্ধি ও ঝরেপড়ার হার কমে যাওয়ায় শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ফল অনেক ভালো। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা বলছেন, গতবার এ ধরনের পরীক্ষা প্রথম অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। এবার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে পেরেছেন।
দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১ থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে ৩৬ দিনের মাথায় ফল প্রকাশ করা হলো।
সারাদেশের মধ্যে এবারও ঢাকার রাজউক স্কুল অ্যান্ড কলেজ সেরা ফল করেছে। এ ছাড়া সামগ্রিকভাবে ক্যাডেট কলেজগুলো ভালো ফল করেছে। ঢাকা বোর্ডে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটিই ক্যাডেট কলেজ।
গতকাল স্কুলে ফল পেঁৗছার আগেই শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পেঁৗছে যায়। তার আগেই মোবাইল ফোন থেকে এসএমএস করে বা ইন্টারনেটে ফল জানতে পেরেছে সবাই। মূলত এত ভালো ফলের আনন্দ বন্ধুদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্যই ক্যাম্পাসে এসে হাজির হয় পরীক্ষার্থীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণার আগেই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে তারা।
যেসব পরীক্ষার্থী প্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে মুখর করে তোলে স্কুল আঙিনা। মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলে, প্রিয়জনকে ফোন করে ভালো ফলের খবর পাঠায়। অভিভাবকদের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে আনন্দাশ্রু। কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে ব্যর্থ মনোরথে বাড়ি ফিরেছে অনেকে।
সরকার এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অভিভাবকরা এ ফলে সন্তোষ প্রকাশ করেন। জেএসসি ও জেডিসির প্রাতিষ্ঠানিক ফলের ক্ষেত্রে অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার মতো এবারও গ্রামের স্কুলগুলোর তুলনায় শহরের স্কুলগুলো এগিয়ে রয়েছে। কোনো বোর্ডের শীর্ষ তালিকায়ই গ্রামের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। এ থেকে ধারণা করা যায়, শিক্ষায় সাম্প্রতিককালের সামাজিক ও বিত্তের বৈষম্যের ধারা অব্যাহত আছে। ফলের বিচারে এবার ছেলেরা ভালো করেছে। এ পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে জুনিয়র বৃত্তি দেওয়া হবে।
গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফল তুলে দেন। এ সময় তার সঙ্গে শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, আটটি সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ফলে সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, 'আমাদের শিক্ষার্থীরা মেধাবী এবং তারা যেখানেই যায় মেধার প্রতিফলন ঘটায়।' তিনি আরও বলেন, সব ছাত্রছাত্রী যেন উন্নত শিক্ষার সমান সুযোগ পায় সে জন্য তার সরকার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা চালু করেছে। এ পরীক্ষা দুটি উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষকরাও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি অধিক মনোযোগ দিতে পারছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যশোর জিলা স্কুল এবং যশোরের আমিনিয়া কামেলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন।
জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরে বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের ফলে মান বৃদ্ধির সূচকে বেশ কিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। এর পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু উদ্যোগ ভূমিকা রেখেছে। যেমন_ বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পেঁৗছে দেওয়া, টেলিভিশনে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেরা শিক্ষকদের পাঠদান প্রচার, নকলবিরোধী ব্যাপক প্রচারসহ নকল প্রতিরোধের বিভিন্ন উদ্যোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার। তিনি জানান, এইচএসসির মতো এবারও পেপারলেস (কাগজবিহীন) ফল প্রকাশ করা হয়। বোর্ড সরবরাহকৃত প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল ঠিকানায় নির্ধারিত সময়ে ফল পেঁৗছে যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো ফল ডাউনলোড করে তাদের নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেয়। সমন্বিত প্রচেষ্টার কারণে পরীক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এবারের ফলে সারাদেশের মধ্যে সেরা হওয়া রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ গোলাম হোসেন বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়েই এখন শিক্ষার প্রতি অনেক সচেতন হয়েছে। সে কারণে ফল আগের চেয়ে অনেক ভালো।
বরিশাল বোর্ড : বরিশাল বোর্ড থেকে এ বছর পরীক্ষা দেয় ৮২ হাজার ৯০৫ জন। পাস করেছে ৭৭ হাজার ২১৩ জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মেয়েদের ৯৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৮৮৬ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৯৩৬ ও ছাত্রী ৯৫০ জন। এ বোর্ডে মেয়েদের পাসের হার এবং জিপিএ-৫ বেশি। আট বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে বরিশাল শীর্ষে রয়েছে। গত বছরও তারা সবচেয়ে এগিয়ে ছিল।
কুমিল্লা বোর্ড : পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯১৪ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩০৬ জন। পাসের হার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং মেয়েদের ৮৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৩৯৬ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ১ হাজার ১৭৭ ও ছাত্রী ১ হাজার ২১৯ জন। এবার পাসের হারের বিবেচনায় কুমিল্লা বোর্ড দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। গত বছর তারা তৃতীয় স্থানে ছিল।
দিনাজপুর বোর্ড : পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৯৮ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৩ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৯৬ এবং মেয়েদের ৮৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৬৪৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৬১ ও ছাত্রী ১ হাজার ৫৮৪ জন। আট বোর্ডের মধ্যে দিনাজপুরের স্থান তৃতীয়।
সিলেট বোর্ড : পরীক্ষা দিয়েছে ৯২ হাজার ৬৭৫ জন। পাস করেছে ৭৭ হাজার ২৩৫ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৮৪ দশমিক শূন্য ৫ এবং মেয়েদের ৮২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৪৮ জন। যাদের মধ্যে ছাত্র ৩৯৭ ও ছাত্রী ৩৯১ জন। আটটি বোর্ডের মধ্যে সিলেট বোর্ড চতুর্থ।
ঢাকা বোর্ড : পরীক্ষা দিয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার ১৪৭ জন। পাস করেছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৯ জন। পাসের হার ৮১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৮২ দশমিক ৯৭ এবং মেয়েদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩ হাজার ১০৬ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ২৬ হাজার ৪৭৮ ও ছাত্রী ২৬ হাজার ৬২৮ জন। এ বোর্ডে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের জিপিএ-৫প্রাপ্তির সংখ্যা বেশি। আট বোর্ডে এ বোর্ড থেকে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেলেও পাসের হারে বোর্ডের অবস্থান চতুর্থ।
এ বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত বিদেশের সাতটি কেন্দ্রে ৩৪৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাসের হার ৯৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৩ জন। এর মধ্যে জেদ্দা ও আবুধাবিতে দুটি এবং রিয়াদ, ত্রিপোলি ও দোহায় একটি করে কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী বোর্ড : পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪১ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৭০ এবং মেয়েদের ৭৯ দশমিক ১০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ২১২ জন। ছাত্র ২ হাজার ২৯০ ও ছাত্রী ১ হাজার ৯২২ জন। পাসের হারের বিবেচনায় আট বোর্ডের মধ্যে এ বোর্ডের অবস্থান ষষ্ঠ।
যশোর বোর্ড : আট বোর্ডের মধ্যে গড় পাসের হারে যশোর বোর্ড সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। এ বোর্ডে পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫০৫ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬০ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৭৯ দশমিক শূন্য ৩ এবং মেয়েদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৭৫৪ জন; ছাত্র ১ হাজার ২৮৩ ও ছাত্রী ১ হাজার ৪৭১ জন। এখানেও মেয়েদের ফল ভালো।
চট্টগ্রাম বোর্ড : এ বছর পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ২৬০ জন। পাস করেছে ৯০ হাজার ২৭৫ জন। পাসের হার ৭২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৩২ এবং মেয়েদের পাসের হার ৬৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৭৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯৯০ ও ছাত্রী ১ হাজার ১৮৬ জন। ফলগত অবস্থানে এ বোর্ড সবশেষে অবস্থান করছে।
জেডিসির ফল : মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেটে (জেডিসি) এ বছর পরীক্ষা দিয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৯০২ জন। পাস করেছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৩ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৯০ দশমিক ৮৩ এবং মেয়েদের ৮৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। জেডিসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ১৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬৩৯ ও ছাত্রী ৩৭৫ জন। এখানে পাস ও জিপিএ-৫প্রাপ্তিতে ছেলেরা এগিয়ে।
এত ভালো ফলের পরও এবার সারাদেশের ১৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি। অন্যদিকে ১ হাজার ৮৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ ভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। গতকাল ফল ঘোষণার পরই তা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। আটটি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা বোর্ডের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো_ িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফ.মড়া.নফ।
হার কমেছে। পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে; বেড়েছে শতভাগ পাসের প্রতিষ্ঠান এবং কমেছে শূন্য পাসের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও।
ফলের মান বৃদ্ধির সব সূচকের এমন ইতিবাচক উন্নতিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক_ সবার হৃদয়ে দোলা দিয়ে গেছে নির্মল আনন্দ। মাত্র এক দিন আগে প্রাথমিকের শিশুদের সাফল্যের পর এবার অষ্টম শ্রেণীর কিশোর-কিশোরীদের মেধার চমক রীতিমতো উচ্ছ্বাসের হাটে পরিণত করেছে দেশের হাজারো স্কুল-মাদ্রাসাকে। সাফল্যের পর সাফল্য আসায় সবার মুখে সুখের হাসি।
গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় সারাদেশে একযোগে এ দুটি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এবারও গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করা হয়। এ দুটি পরীক্ষায় সারাদেশে ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ৯৪৭ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৫ লাখ ৬ হাজার ৭৮৩ জন। পাসের হারে বরিশাল বোর্ড সবার শীর্ষে। আর জিপিএ-৫প্রাপ্তিতে সব বোর্ডকে পেছনে ফেলেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
দুটি পরীক্ষার মধ্যে কেবল সাধারণ আটটি শিক্ষা বোর্ডের জেএসসি পরীক্ষায় এবার অংশ নিয়েছিল ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪০ জন। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেশি ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ৩৮৪ জন। এবার পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৪৫ জন। পাস করেছে ১২ লাখ ৩১ হাজার ৮৮০ জন। গতবার অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষার চেয়ে এবার ৪ লাখ ৯ হাজার ৪০৫ শিক্ষার্থী বেশি পাস করেছে। পাসের এ হার ৮২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা গতবারের চেয়ে ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। জেএসসিতে ২৯ হাজার ৮৩৮ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গতবারের চেয়ে তা ২১ হাজার ৭৮৬ জন বেশি।
অন্যদিকে মাদ্রাসা বোর্ডের জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল মোট ৩ লাখ ৯ হাজার ৯০২ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৩ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। গতবারের চেয়ে জেডিসিতে পাসের হার বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। জেডিসিতে সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ১৪ জন। জিপিএ-৫প্রাপ্তি গতবারের চেয়ে ৫১০ জন বেড়েছে।
এবারের ফলের বৈশিষ্ট্য হলো_ উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, পাসের হার, জিপিএ-৫প্রাপ্তি এবং শতভাগ উত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে কমে এসেছে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এ ছাড়া কেউ পাস করেনি_ এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমে এসেছে। অবশ্য বহিষ্কারের সংখ্যা গতবারের চেয়ে এবার ৬০ জন বেশি ছিল।
পাসের হার, জিপিএ-৫ বৃদ্ধি ও ঝরেপড়ার হার কমে যাওয়ায় শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ফল অনেক ভালো। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা বলছেন, গতবার এ ধরনের পরীক্ষা প্রথম অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। এবার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে পেরেছেন।
দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১ থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে ৩৬ দিনের মাথায় ফল প্রকাশ করা হলো।
সারাদেশের মধ্যে এবারও ঢাকার রাজউক স্কুল অ্যান্ড কলেজ সেরা ফল করেছে। এ ছাড়া সামগ্রিকভাবে ক্যাডেট কলেজগুলো ভালো ফল করেছে। ঢাকা বোর্ডে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটিই ক্যাডেট কলেজ।
গতকাল স্কুলে ফল পেঁৗছার আগেই শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পেঁৗছে যায়। তার আগেই মোবাইল ফোন থেকে এসএমএস করে বা ইন্টারনেটে ফল জানতে পেরেছে সবাই। মূলত এত ভালো ফলের আনন্দ বন্ধুদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্যই ক্যাম্পাসে এসে হাজির হয় পরীক্ষার্থীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণার আগেই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে তারা।
যেসব পরীক্ষার্থী প্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে মুখর করে তোলে স্কুল আঙিনা। মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলে, প্রিয়জনকে ফোন করে ভালো ফলের খবর পাঠায়। অভিভাবকদের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে আনন্দাশ্রু। কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে ব্যর্থ মনোরথে বাড়ি ফিরেছে অনেকে।
সরকার এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অভিভাবকরা এ ফলে সন্তোষ প্রকাশ করেন। জেএসসি ও জেডিসির প্রাতিষ্ঠানিক ফলের ক্ষেত্রে অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার মতো এবারও গ্রামের স্কুলগুলোর তুলনায় শহরের স্কুলগুলো এগিয়ে রয়েছে। কোনো বোর্ডের শীর্ষ তালিকায়ই গ্রামের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। এ থেকে ধারণা করা যায়, শিক্ষায় সাম্প্রতিককালের সামাজিক ও বিত্তের বৈষম্যের ধারা অব্যাহত আছে। ফলের বিচারে এবার ছেলেরা ভালো করেছে। এ পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে জুনিয়র বৃত্তি দেওয়া হবে।
গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফল তুলে দেন। এ সময় তার সঙ্গে শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, আটটি সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ফলে সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, 'আমাদের শিক্ষার্থীরা মেধাবী এবং তারা যেখানেই যায় মেধার প্রতিফলন ঘটায়।' তিনি আরও বলেন, সব ছাত্রছাত্রী যেন উন্নত শিক্ষার সমান সুযোগ পায় সে জন্য তার সরকার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা চালু করেছে। এ পরীক্ষা দুটি উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষকরাও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি অধিক মনোযোগ দিতে পারছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যশোর জিলা স্কুল এবং যশোরের আমিনিয়া কামেলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করেন।
জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরে বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের ফলে মান বৃদ্ধির সূচকে বেশ কিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। এর পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু উদ্যোগ ভূমিকা রেখেছে। যেমন_ বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পেঁৗছে দেওয়া, টেলিভিশনে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেরা শিক্ষকদের পাঠদান প্রচার, নকলবিরোধী ব্যাপক প্রচারসহ নকল প্রতিরোধের বিভিন্ন উদ্যোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার। তিনি জানান, এইচএসসির মতো এবারও পেপারলেস (কাগজবিহীন) ফল প্রকাশ করা হয়। বোর্ড সরবরাহকৃত প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল ঠিকানায় নির্ধারিত সময়ে ফল পেঁৗছে যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো ফল ডাউনলোড করে তাদের নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেয়। সমন্বিত প্রচেষ্টার কারণে পরীক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এবারের ফলে সারাদেশের মধ্যে সেরা হওয়া রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ গোলাম হোসেন বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়েই এখন শিক্ষার প্রতি অনেক সচেতন হয়েছে। সে কারণে ফল আগের চেয়ে অনেক ভালো।
বরিশাল বোর্ড : বরিশাল বোর্ড থেকে এ বছর পরীক্ষা দেয় ৮২ হাজার ৯০৫ জন। পাস করেছে ৭৭ হাজার ২১৩ জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মেয়েদের ৯৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৮৮৬ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৯৩৬ ও ছাত্রী ৯৫০ জন। এ বোর্ডে মেয়েদের পাসের হার এবং জিপিএ-৫ বেশি। আট বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে বরিশাল শীর্ষে রয়েছে। গত বছরও তারা সবচেয়ে এগিয়ে ছিল।
কুমিল্লা বোর্ড : পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯১৪ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩০৬ জন। পাসের হার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং মেয়েদের ৮৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৩৯৬ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ১ হাজার ১৭৭ ও ছাত্রী ১ হাজার ২১৯ জন। এবার পাসের হারের বিবেচনায় কুমিল্লা বোর্ড দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। গত বছর তারা তৃতীয় স্থানে ছিল।
দিনাজপুর বোর্ড : পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৯৮ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৩ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৯৬ এবং মেয়েদের ৮৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৬৪৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৬১ ও ছাত্রী ১ হাজার ৫৮৪ জন। আট বোর্ডের মধ্যে দিনাজপুরের স্থান তৃতীয়।
সিলেট বোর্ড : পরীক্ষা দিয়েছে ৯২ হাজার ৬৭৫ জন। পাস করেছে ৭৭ হাজার ২৩৫ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৮৪ দশমিক শূন্য ৫ এবং মেয়েদের ৮২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৪৮ জন। যাদের মধ্যে ছাত্র ৩৯৭ ও ছাত্রী ৩৯১ জন। আটটি বোর্ডের মধ্যে সিলেট বোর্ড চতুর্থ।
ঢাকা বোর্ড : পরীক্ষা দিয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার ১৪৭ জন। পাস করেছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৯ জন। পাসের হার ৮১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৮২ দশমিক ৯৭ এবং মেয়েদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩ হাজার ১০৬ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ২৬ হাজার ৪৭৮ ও ছাত্রী ২৬ হাজার ৬২৮ জন। এ বোর্ডে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের জিপিএ-৫প্রাপ্তির সংখ্যা বেশি। আট বোর্ডে এ বোর্ড থেকে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেলেও পাসের হারে বোর্ডের অবস্থান চতুর্থ।
এ বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত বিদেশের সাতটি কেন্দ্রে ৩৪৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাসের হার ৯৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৩ জন। এর মধ্যে জেদ্দা ও আবুধাবিতে দুটি এবং রিয়াদ, ত্রিপোলি ও দোহায় একটি করে কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী বোর্ড : পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪১ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৭০ এবং মেয়েদের ৭৯ দশমিক ১০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ২১২ জন। ছাত্র ২ হাজার ২৯০ ও ছাত্রী ১ হাজার ৯২২ জন। পাসের হারের বিবেচনায় আট বোর্ডের মধ্যে এ বোর্ডের অবস্থান ষষ্ঠ।
যশোর বোর্ড : আট বোর্ডের মধ্যে গড় পাসের হারে যশোর বোর্ড সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। এ বোর্ডে পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫০৫ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬০ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৭৯ দশমিক শূন্য ৩ এবং মেয়েদের পাসের হার ৮০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৭৫৪ জন; ছাত্র ১ হাজার ২৮৩ ও ছাত্রী ১ হাজার ৪৭১ জন। এখানেও মেয়েদের ফল ভালো।
চট্টগ্রাম বোর্ড : এ বছর পরীক্ষা দিয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ২৬০ জন। পাস করেছে ৯০ হাজার ২৭৫ জন। পাসের হার ৭২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৩২ এবং মেয়েদের পাসের হার ৬৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৭৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৯৯০ ও ছাত্রী ১ হাজার ১৮৬ জন। ফলগত অবস্থানে এ বোর্ড সবশেষে অবস্থান করছে।
জেডিসির ফল : মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেটে (জেডিসি) এ বছর পরীক্ষা দিয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৯০২ জন। পাস করেছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৩ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৯০ দশমিক ৮৩ এবং মেয়েদের ৮৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। জেডিসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ১৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬৩৯ ও ছাত্রী ৩৭৫ জন। এখানে পাস ও জিপিএ-৫প্রাপ্তিতে ছেলেরা এগিয়ে।
এত ভালো ফলের পরও এবার সারাদেশের ১৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি। অন্যদিকে ১ হাজার ৮৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ ভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। গতকাল ফল ঘোষণার পরই তা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। আটটি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা বোর্ডের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো_ িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফ.মড়া.নফ।
No comments