মঞ্চ-সফলতায় ভারি এক নাট্যবর্ষ ২০১১ by হাসান শাহরিয়ার
২০১১ সাল ঢাকার নাট্যচর্চায় নানা দিক থেকেই উৎসাহব্যঞ্জক। একদিকে এবার আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি হয়েছে, অন্যদিকে আমাদের বাংলা নাটকের প্রধান নাট্যকার কবিগুরুর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী। সে আলোকেই এবার ঢাকার মঞ্চে দেখা গেছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একাধিক নাট্যোৎসব, যেখানে মঞ্চস্থ হয়েছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত নাটক; অন্যদিকে এবারই কবিগুরুর সর্বাধিক নাটকের মঞ্চরূপ দিয়েছে বিভিন্ন নাট্যদল।
এ ছাড়া বিভিন্ন নাট্যদল, নাট্যপত্রিকা, আইটিআই ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে একাধিক নাট্যোৎসব, সেমিনার ও নাট্যবিষয়ক প্রদর্শনীর। বছরের শুরুতেই প্রাঙ্গণেমোর করেছে ‘দুই বাংলার রবীন্দ্র নাট্যমেলা-২০১১’। এতে দেশ ও দেশের বাইরের ১৩টি রবীন্দ্রনাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। এর পরপরই নাট্যপত্রিকা থিয়েটারওয়ালা আয়োজন করে ‘ফয়েজ জহির-আজাদ আবুল কালাম-শুভাশিস সিনহা নাট্যযজ্ঞ-২০১১’। আট দিনব্যাপী আয়োজনে দেশের এ তিন প্রতিভাবান নাট্যনির্দেশকের আটটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। এ ছাড়া তাঁদের মুখোমুখি হন এ সময়ের তরুণ দর্শকেরা। আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্র প্রথমবারের মতো আয়োজন করে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব-২০১১’। এ উৎসবে ২০১০ সালে মঞ্চে আসা প্রধান প্রধান নাটক মঞ্চস্থ হয়। এর কিছুদিন পর বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আয়োজন করে আরেকটি নাট্যোৎসবের। বছরের মাঝামাঝি সময়ে আমাদের সদ্য প্রয়াত দুই নাট্যকার সেলিম আল দীন ও আবদুল্লাহ আল মামুনের নাটক নিয়েও হয় আরও দুটি উৎসব। বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এবং এর পরপরই মহাকাল নাট্যসম্প্রদায় আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের নাটকের ওপর আরও দুটি উৎসব। এ ছাড়া কয়েকটি নাটকের শততম মঞ্চায়ন হয় এ বছর। সব মিলিয়ে অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর ঢাকার নাট্যপাড়া ছিল অনেক বেশি উৎসবমুখর।
এ বছরের সবচেয়ে আলোচনা-সমালোচনার বিষয় ছিল নাটক নির্মাণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুদান প্রসঙ্গ। অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, গত অর্থবছরে সরকার ‘বিপুল’ পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রেখেছে মঞ্চনাটকের চর্চায় গতিশীলতা বাড়াতে। কিন্তু পরে জানা গেছে, ওই অর্থ দিয়ে কোনো ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা যাবে না, কেবল কিছু নাট্যোৎসব ও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করা যাবে। এ অর্থও শেষ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে অর্থবছরের শেষ চার মাসে। ফল যা দাঁড়িয়েছে, যেসব আয়োজন-উৎসব এতকাল নাট্যদলগুলো নিজেরাই করে এসেছে, এর সঙ্গে সরকারি এ অর্থ কেবল বাড়তি কিছু প্রলেপ লাগিয়েছে মাত্র, নাটকের সামগ্রিক উৎকর্ষে কোনো কাজে লেগেছে বলে মনে হয় না।
রবিঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কিছু অর্থ বরাদ্দ করেছিল। জানা গেছে, ১৪টি নাট্যদল বিভিন্ন অঙ্কে এ বরাদ্দ পেয়েছে। কিন্তু কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে দলগুলোকে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা আজও কেউ স্পষ্ট করতে পারেনি। এযাবৎ মঞ্চে রবীন্দ্রনাটকে অভিজ্ঞ অনেক নাট্যদল কিংবা নির্দেশক ছিলেন এ অনুদান-স্পর্শের বাইরে। এমন তাড়াহুড়ো আর অপরিকল্পিত অনুদান-বণ্টন রবীন্দ্রনাট্যচর্চায় কতটুকু অবদান রাখবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে আমাদের থিয়েটার কখনোই অনুদানের দিকে তাকিয়ে থাকে না। এ কারণেই অনুদানের বাইরে থাকা অনেক দলও রবীন্দ্রনাটক মঞ্চায়নে হাত দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাঙ্গণেমোর আর থিয়েটার আর্ট ইউনিট ‘স্ব-অনুদানে’ মঞ্চে এনেছে শেষের কবিতা। আরও কয়েকটি দল রবীন্দ্রনাটকের কাজ হাতে নিয়েছে বলেও শোনা গেছে।
ঢাকার মঞ্চনাট্যচর্চা জাতীয় নাট্যশালাকেন্দ্রিক। ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে নাটক মঞ্চায়নের চর্চার যে প্রয়োজনীয়তা বহু দিন ধরেই অনুভব করা যাচ্ছে, এর সমাধানে তেমন কোনো উন্নতি এ বছরও হয়নি। জাতীয় নাট্যশালার হল বরাদ্দ এবং মহড়াকক্ষের স্বল্পতা নিরসনেও তেমন কোনো অগ্রগতি এ বছর হয়নি। অন্যান্য যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর জাতীয় নাট্যশালার মূল হলটি নাট্যকর্মীদের নাগালের বাইরে ছিল। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের ফরমায়েশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনেই বেশি ব্যস্ত ছিল মূল হলটি। এমনটি চলতে থাকলে আমাদের নিয়মিত নাট্যচর্চা ব্যাহত হবে নিঃসন্দেহে।
তার পরও এ কথা দৃঢ়ভাবে বলা যায়, নতুন নাটক নির্মাণে, রবীন্দ্রনাট্য নির্মাণে, উৎসব আয়োজনে, এমনকি দর্শকের সরব উপস্থিতির বিবেচনায় বছরটি ঢাকার মঞ্চনাটক চর্চায় অন্য বছরগুলোর তুলনায় একটু হলেও এগিয়ে থাকবে।
এ বছরের সবচেয়ে আলোচনা-সমালোচনার বিষয় ছিল নাটক নির্মাণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুদান প্রসঙ্গ। অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, গত অর্থবছরে সরকার ‘বিপুল’ পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রেখেছে মঞ্চনাটকের চর্চায় গতিশীলতা বাড়াতে। কিন্তু পরে জানা গেছে, ওই অর্থ দিয়ে কোনো ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা যাবে না, কেবল কিছু নাট্যোৎসব ও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করা যাবে। এ অর্থও শেষ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে অর্থবছরের শেষ চার মাসে। ফল যা দাঁড়িয়েছে, যেসব আয়োজন-উৎসব এতকাল নাট্যদলগুলো নিজেরাই করে এসেছে, এর সঙ্গে সরকারি এ অর্থ কেবল বাড়তি কিছু প্রলেপ লাগিয়েছে মাত্র, নাটকের সামগ্রিক উৎকর্ষে কোনো কাজে লেগেছে বলে মনে হয় না।
রবিঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কিছু অর্থ বরাদ্দ করেছিল। জানা গেছে, ১৪টি নাট্যদল বিভিন্ন অঙ্কে এ বরাদ্দ পেয়েছে। কিন্তু কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে দলগুলোকে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা আজও কেউ স্পষ্ট করতে পারেনি। এযাবৎ মঞ্চে রবীন্দ্রনাটকে অভিজ্ঞ অনেক নাট্যদল কিংবা নির্দেশক ছিলেন এ অনুদান-স্পর্শের বাইরে। এমন তাড়াহুড়ো আর অপরিকল্পিত অনুদান-বণ্টন রবীন্দ্রনাট্যচর্চায় কতটুকু অবদান রাখবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে আমাদের থিয়েটার কখনোই অনুদানের দিকে তাকিয়ে থাকে না। এ কারণেই অনুদানের বাইরে থাকা অনেক দলও রবীন্দ্রনাটক মঞ্চায়নে হাত দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাঙ্গণেমোর আর থিয়েটার আর্ট ইউনিট ‘স্ব-অনুদানে’ মঞ্চে এনেছে শেষের কবিতা। আরও কয়েকটি দল রবীন্দ্রনাটকের কাজ হাতে নিয়েছে বলেও শোনা গেছে।
ঢাকার মঞ্চনাট্যচর্চা জাতীয় নাট্যশালাকেন্দ্রিক। ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে নাটক মঞ্চায়নের চর্চার যে প্রয়োজনীয়তা বহু দিন ধরেই অনুভব করা যাচ্ছে, এর সমাধানে তেমন কোনো উন্নতি এ বছরও হয়নি। জাতীয় নাট্যশালার হল বরাদ্দ এবং মহড়াকক্ষের স্বল্পতা নিরসনেও তেমন কোনো অগ্রগতি এ বছর হয়নি। অন্যান্য যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর জাতীয় নাট্যশালার মূল হলটি নাট্যকর্মীদের নাগালের বাইরে ছিল। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের ফরমায়েশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনেই বেশি ব্যস্ত ছিল মূল হলটি। এমনটি চলতে থাকলে আমাদের নিয়মিত নাট্যচর্চা ব্যাহত হবে নিঃসন্দেহে।
তার পরও এ কথা দৃঢ়ভাবে বলা যায়, নতুন নাটক নির্মাণে, রবীন্দ্রনাট্য নির্মাণে, উৎসব আয়োজনে, এমনকি দর্শকের সরব উপস্থিতির বিবেচনায় বছরটি ঢাকার মঞ্চনাটক চর্চায় অন্য বছরগুলোর তুলনায় একটু হলেও এগিয়ে থাকবে।
No comments