সালতামামি ২০১১ : -ছন্দ হারানোর বছর by দাউদ হোসাইন রনি
আরো একটি হতাশার এবং ঘটনাবহুল বছর পার করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প। বিগত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কমসংখ্যক ছবি মুক্তি পেল এ বছর। গত বছরও যেখানে ৫৭টি ছবি মুক্তি পেয়েছে, এবার সেখানে মুক্তি পেয়েছে মাত্র ৪৬টি। এর মধ্যে মাত্র ১১টি ছবি ব্যবসায়িকভাবে সফলতার মুখ দেখেছে। সাফল্যের হার মাত্র ২৪ শতাংশ। অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে ছবি নির্মাণের হার। ৪৬টির মধ্যে খুব কম ছবিই রয়েছে, যেগুলো নির্মাণশৈলীর ক্ষেত্রে পাস
মার্কস পাবে। এই যখন দেশীয় চলচ্চিত্রের অবস্থা, তখনই দেশের প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বছরের শুরুতেই এমন সিদ্ধান্তে ছন্দ হারিয়ে ফেলে চলচ্চিত্র শিল্প। পক্ষ-বিপক্ষের বিতর্কে কেবল বিভক্তিই বেড়েছে। তাতে চলচ্চিত্রের কোনো লাভ হয়নি। সারা বছর প্রযোজক-পরিচালকরা ভারতীয় ছবির ভয়ে 'ভীত' হয়েই কাটিয়ে দিলেন, যদিও বছর শেষে যখন ভারতীয় বাংলা ছবি 'জোর' মুক্তি পেল, তখন দেখা গেল প্রেক্ষাগৃহে আশানুরূপ দর্শক নেই। যাঁরা একটু বুদ্ধিদীপ্ত ছবি দেখতে চান এবং বানাতে চান, তাঁদের জন্য এ বছর সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। বাংলাদেশিদের অস্কারের পথঘাট চেনানো নির্মাতা তারেক মাসুদ হারিয়ে গেলেন এক সড়ক দুর্ঘটনায়। আবারও ছন্দ পতন। এদিকে এফডিসির উন্নয়নে ৫৮ কোটি টাকার একটি তহবিল পাস হয়। কিন্তু এই টাকা কিভাবে খরচ হবে, কোন খাতে খরচ হবে, তার সঠিক কোনো রূপরেখা এখনো প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। বছরজুড়ে নায়ক-প্রযোজকের দ্বন্দ্ব, সমিতিগুলোর নির্বাচন নিয়ে সদস্যদের রেষারেষি ছিল চরমে। অথচ ভালো ও মানসম্পন্ন বাণিজ্যিক ছবি বানানোর দিকে মনোযোগ ছিল না কারোই। আগে যাঁরা ছবি বানিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন, এ বছর তাঁদের বানানো ছবিগুলোতে নতুন কিছুই পাওয়া যায়নি। বাণিজ্যের নামে তাঁরা দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বরং এ বছর নতুন যাঁরা ছবি বানিয়েছেন তাঁদের মধ্যে ভালো করার চেষ্টা দেখা গেছে। ব্যস, এ পর্যন্তই। অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে কেউ কেউ অনৈতিক কার্যকলাপ, মাদক গ্রহণ এবং মারামারি করে শিরোনামে এসেছেন। অন্যদেরও বদনামের ভাগী করেছেন।
এত অঘটনের মধ্যেও সম্মান এনে দিয়েছে 'গেরিলা' ও 'মেহেরজান'। 'গেরিলা' তো এশিয়ার সেরা ছবির গৌরব নিয়ে এসেছে। দেশে বিতর্কিত 'মেহেরজান' যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিন্তু খালি হাতে ফেরেনি। অর্জনের প্রায় পুরোটাই এসেছে এফডিসির বাইরে থেকে। এ বছর দুজন তরুণ পেয়েছেন ছবি নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক অনুদান। জয়া ডাক পেয়েছেন বদলে যাওয়া টালিগঞ্জ থেকে।
তবে এ বছর আলোচনায় থাকা 'লাল টিপ', 'এক কাপ চা' ও 'চোরাবালি' ছন্দ হারিয়ে ফেলা এই শিল্পকে আবারও ছন্দে ফিরিয়ে আনবে, নতুন বছরে এই আশায় বুক বাঁধা ছাড়া আর কোনো উপায়ই যে নেই।
এত অঘটনের মধ্যেও সম্মান এনে দিয়েছে 'গেরিলা' ও 'মেহেরজান'। 'গেরিলা' তো এশিয়ার সেরা ছবির গৌরব নিয়ে এসেছে। দেশে বিতর্কিত 'মেহেরজান' যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিন্তু খালি হাতে ফেরেনি। অর্জনের প্রায় পুরোটাই এসেছে এফডিসির বাইরে থেকে। এ বছর দুজন তরুণ পেয়েছেন ছবি নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক অনুদান। জয়া ডাক পেয়েছেন বদলে যাওয়া টালিগঞ্জ থেকে।
তবে এ বছর আলোচনায় থাকা 'লাল টিপ', 'এক কাপ চা' ও 'চোরাবালি' ছন্দ হারিয়ে ফেলা এই শিল্পকে আবারও ছন্দে ফিরিয়ে আনবে, নতুন বছরে এই আশায় বুক বাঁধা ছাড়া আর কোনো উপায়ই যে নেই।
No comments