স্বপ্নের মৃত্যু পরিবারের কান্না by শংকর দাস

রুবেলের (২০) স্বপ্ন ছিল সংসারের অভাব-অনটন দূর করে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবেন। এ জন্য একটি দোকান করে ব্যবসা করার চিন্তা ছিল তাঁর। এসএসসি পাস করেই তাই কাজের সন্ধানে রুবেল ছুটে গিয়েছিলেন ঢাকায়। কাজও পেয়েছিলেন। কিন্তু ছিনতাইকারীদের গুলিতে সব শেষ। একটি পরিবার এখন অসহায়। মঙ্গলবার ঢাকায় ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হন রুবেল। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের


ছয়হিস্যা তাঁতেরকাঠি গ্রামে। গতকাল বুধবার সকালে ওই বাড়ির প্রবেশপথেই ভেসে আসে পরিবারের কান্নার শব্দ। শত শত মানুষ। স্বজন ও প্রতিবেশীরা চেষ্টা করেও রুবেলের বাবা-মা-ভাইবোনদের কান্না থামাতে পারছে না।
রুবেলের বাবা আবদুল হক চৌকিদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর (রুবেল) স্বপ্ন ছিল ব্যবসা করবে। এমনেই সংসারে অভাব। দুইডা মাইয়ারে বিয়া দিছি। রুবেলেরে বেশি লেহাপড়া করাইতে পারি নাই। ব্যবসা করবে, টাকা দিমু কেমনে! রুবেল ঠিক করল কাজ করতে ঢাকা যাইবে। ২০০৮ সালে এসএসসি পাস কইরা রুবেল ঢাকায় যায় কাজের সন্ধানে। ঢাকায় ওর মামা আবুল হোসেন মীরের সহায়তায় কাজও পায়। পরে রুবেলের ছোট ভাই রাসেলকেও কাজের জন্য ঢাকায় নেয় সে। ওরা কাজ কইরা কিছু টাকা পাঠাইত। হেইয়া দিয়া চলত সংসার।’
আবদুল হক বলতে থাকেন, ‘রুবেল কইত, কাজ কইরা টাকা জমাইয়া একদিন ব্যবসা শুরু করুম। অনেক টাকা রোজগার করুম। দেখবা আমাগো সংসারে আর কোনো দুঃখ থাকব না। কিন্তু আমি হেই সুখ আর দেখতে পারলাম না।’
রুবেলের মা বেগম তাঁর প্রিয় সন্তানের ছবি হাতে নিয়ে শুধু বিলাপ করছেন। আহাজারি থামছে না। তাঁর কথা, ‘পুতে আমার কোরবানির ঈদে বাড়ি আইছিল। ওই আমার শেষ দেহা। পরশুদিন (সোমবার) বিকালে মোবাইলে কথা কইছে রুবেল। মোরে কত কথা কইছে। কইছে ভালো আছি। আমার জন্য কোনো চিন্তা করবা না। পুতেরে অনেক দিন ধইরা দেহি নাই। কইছিলাম বাড়ি আইতে। বাড়ি আওয়ার কথাও কইছে। পুতে আমার বাড়ি আইতে আছে ঠিকই, তয় লাশ হইয়া।’
নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুক জানান, ‘রুবেল খুব ভালো, ভদ্র ও পরিশ্রমী ছিল। ওদের সাংসারে রুবেলই ছিল একমাত্র চালিকাশক্তি। ওর মৃত্যুতে পুরো পরিবারটিই এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’
গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পুরান ঢাকায় ছিনতাইকারীর গুলিতে রুবেল নিহত হন। রুবেল নাজিরাবাজার লেনের ইকবাল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ছিলেন। ঘটনার পর দোকানের মালিক মো. শাহীন অজ্ঞাতনামা লোকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেও লুট হওয়া টাকা ও খুনের কাজে ব্যবহূত অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
জানতে চাইলে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জমিরউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার পুরান ঢাকার সূত্রাপুর ও কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পুলিশ শাহ আলম (৩০), কিলার সোহেল (৩০) ও কিলার গুড্ডুকে গ্রেপ্তার করেছে। আগেও তাঁদের অন্য মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি তাঁরা জামিনে বেরিয়ে ফের ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.