গান-গানের ২০১১ by বাপ্পা মজুমদার
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে গানের কী অবস্থা যাচ্ছে? এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন আমাদের প্রায়ই হতে হয়। উত্তরটাও নেহাত সহজ বলে আমার মনে হয় না—তাই ভাবনায় পড়ে যাই। তাই যথারীতি এই লেখা লিখতে গিয়েও যথেষ্ট মাথা ঘামাতে হলো। আজকাল এফএম রেডিওর কল্যাণে বহু ধরনের গান শুনছেন শ্রোতারা। বলাই বাহুল্য সিডি কিনে গান শোনার অভ্যাসটা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। প্রসঙ্গে আসি। আমি নিজেও মাঝেমধ্যে এফএম রেডিওতে গান
শুনি, যখন ড্রাইভ করি। ঢাকার রাস্তায় এ ছাড়া উপায়ও নেই। খুব সরাসরি বলতে গেলে পাশাপাশি পাঁচ-ছয়টা গান শুনলে মনে হয় প্রায় একই ধরনের গানের এদিক-ওদিক করে কম্পোজ করা। খুব বেশি ভেরিয়েশন আছে বলে মনে হয় না। এর পেছনে অদ্ভুত একটা কারণ আছে। বিষয়টা খুব মজার। যখনই কোনো গান হিট করে যায়, আমরা সবাই যেন সেই নির্দিষ্ট স্টাইলটায় হুমড়ি খেয়ে পড়ি। সবাই মিলে সেই হিট গানটাকে এমন এক রেফারেন্স হিসেবে ধরে নেই, যেন সেটাই হিট করার একমাত্র উপায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই নতুন গানগুলোকে তখন আর নতুন মনে হয় না। মনে হয়, একই গান শুনছি। এই অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।
তাই বলে এই নয় যে বাংলাদেশে ভালো গান হচ্ছে না। বর্তমানে ভালো গানের সংকলন অনেক বেশি বলে আমার মনে হয়। ভালো গানের উদাহরণও দিতে পারব বহু এবং নিঃসন্দেহে এটা আমাদের জন্য সুসংবাদ। তবে ভালো গানে পৃষ্ঠপোষকের অভাব এখন চরমে। ক্ষুদ্র একজন গায়ক হিসেবে বলি, ভালো গানকেই পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হয়। ভালোকে লালন করতে হয়, না হলে ভালো কি বেশি দিন থাকে? না, একপর্যায়ে ভালো ম্লান হয়ে অসুর ভর করে।
প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি কথা বলা অনেক বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছি। অডিও শিল্প তো প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে—এ কথা আমরা যারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই জানি। এর পেছনে কী কারণ তা বলতে গেলে লেখাটা বেশি বড় হয়ে যাবে। তবে বিষয়টি এই মুহূর্তে জরুরি বলে মনে হয়। শিল্পী আর প্রযোজনা সংস্থার ভেতর বিস্তর ব্যবধান। এই ব্যবধানই সব সমস্যার মূল বলে আমার মনে হয়। যত দ্রুত সম্ভব এই দূরত্ব কমিয়ে নিয়ে আসা দরকার। না হলে অডিওশিল্পের মৃত্যু কেউ ঠেকাতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে আমার ধারণা, শিল্পী ও প্রযোজনা সংস্থাকে একটি কমন গ্রাউন্ডে আসতে হবে, যেখানে দুই পক্ষই লাভবান হয়। শিল্পী/সুরকার/গীতিকার/সংগীতকার বরাবরই প্রতারিত হয়ে এসেছেন, এখনো হচ্ছেন। কত দিন চলবে জানি না। কিন্তু এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। আর এটাও সত্য, প্রযোজনা সংস্থা ছাড়া শিল্পীর কোনো উপায় নেই। তাঁর কাজ শ্রোতার হাতে গান তুলে দেওয়া। একইভাবে শিল্পী ছাড়া প্রযোজনা সংস্থারও কোনো মূল্য নেই। হিন্দি আর ইংরেজি গানের নকল করা সিডি বাজারজাত করলেই সে প্রযোজনা সংস্থা হয় না। তাই প্রয়োজন দুই পক্ষকেই। দাঁড়াতে হবে দুই পক্ষের সুবিধা হয় এ রকম একটা প্লাটফর্মে। হতে হবে স্বচ্ছ। স্বচ্ছতাই আস্থা অর্জনের একমাত্র উপায়।
পরিশেষে একটি কথা না বলেই পারছি না। গত ৪০ বছরে বহু সরকারের অদল-বদল হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সরকারই শিল্পীদের মূল্যায়ন করেনি। সবাই হাতি-ঘোড়া মেরেছেন অগণিত। কিন্তু শিল্পী-কলাকুশলী যাঁরা আমাদের দেশকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেন, তাঁদেরই কোনো মূল্যায়ন হলো না। এ বড় দুঃখের ও লজ্জার। সরকারের উচ্চ পদস্থ যাঁরা অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেন তাঁদের প্রতি বিনীতভাবে বলতে চাই, সংগীতের নানা মাধ্যমে অর্থ উপার্জন যাঁরা করছেন, তাঁরা কিন্তু আর সবার মতোই সরকারকে রাজস্ব দেন। এবং এর পরিমাণও কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তাই সংগীত এবং এর সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোর প্রতি সুদৃষ্টি দিন। না হলে বড়ই অন্যায় হবে।
তাই বলে এই নয় যে বাংলাদেশে ভালো গান হচ্ছে না। বর্তমানে ভালো গানের সংকলন অনেক বেশি বলে আমার মনে হয়। ভালো গানের উদাহরণও দিতে পারব বহু এবং নিঃসন্দেহে এটা আমাদের জন্য সুসংবাদ। তবে ভালো গানে পৃষ্ঠপোষকের অভাব এখন চরমে। ক্ষুদ্র একজন গায়ক হিসেবে বলি, ভালো গানকেই পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হয়। ভালোকে লালন করতে হয়, না হলে ভালো কি বেশি দিন থাকে? না, একপর্যায়ে ভালো ম্লান হয়ে অসুর ভর করে।
প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি কথা বলা অনেক বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছি। অডিও শিল্প তো প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে—এ কথা আমরা যারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই জানি। এর পেছনে কী কারণ তা বলতে গেলে লেখাটা বেশি বড় হয়ে যাবে। তবে বিষয়টি এই মুহূর্তে জরুরি বলে মনে হয়। শিল্পী আর প্রযোজনা সংস্থার ভেতর বিস্তর ব্যবধান। এই ব্যবধানই সব সমস্যার মূল বলে আমার মনে হয়। যত দ্রুত সম্ভব এই দূরত্ব কমিয়ে নিয়ে আসা দরকার। না হলে অডিওশিল্পের মৃত্যু কেউ ঠেকাতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে আমার ধারণা, শিল্পী ও প্রযোজনা সংস্থাকে একটি কমন গ্রাউন্ডে আসতে হবে, যেখানে দুই পক্ষই লাভবান হয়। শিল্পী/সুরকার/গীতিকার/সংগীতকার বরাবরই প্রতারিত হয়ে এসেছেন, এখনো হচ্ছেন। কত দিন চলবে জানি না। কিন্তু এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। আর এটাও সত্য, প্রযোজনা সংস্থা ছাড়া শিল্পীর কোনো উপায় নেই। তাঁর কাজ শ্রোতার হাতে গান তুলে দেওয়া। একইভাবে শিল্পী ছাড়া প্রযোজনা সংস্থারও কোনো মূল্য নেই। হিন্দি আর ইংরেজি গানের নকল করা সিডি বাজারজাত করলেই সে প্রযোজনা সংস্থা হয় না। তাই প্রয়োজন দুই পক্ষকেই। দাঁড়াতে হবে দুই পক্ষের সুবিধা হয় এ রকম একটা প্লাটফর্মে। হতে হবে স্বচ্ছ। স্বচ্ছতাই আস্থা অর্জনের একমাত্র উপায়।
পরিশেষে একটি কথা না বলেই পারছি না। গত ৪০ বছরে বহু সরকারের অদল-বদল হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সরকারই শিল্পীদের মূল্যায়ন করেনি। সবাই হাতি-ঘোড়া মেরেছেন অগণিত। কিন্তু শিল্পী-কলাকুশলী যাঁরা আমাদের দেশকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেন, তাঁদেরই কোনো মূল্যায়ন হলো না। এ বড় দুঃখের ও লজ্জার। সরকারের উচ্চ পদস্থ যাঁরা অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেন তাঁদের প্রতি বিনীতভাবে বলতে চাই, সংগীতের নানা মাধ্যমে অর্থ উপার্জন যাঁরা করছেন, তাঁরা কিন্তু আর সবার মতোই সরকারকে রাজস্ব দেন। এবং এর পরিমাণও কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তাই সংগীত এবং এর সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোর প্রতি সুদৃষ্টি দিন। না হলে বড়ই অন্যায় হবে।
No comments