তদন্ত শুরু করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়-প্রতারণার মাধ্যমে বিসিআইসিতে তিন কর্মকর্তা নিয়োগের অভিযোগ by শরিফুল হাসান
প্রকৃত তথ্য গোপন করে প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থায় (বিসিআইসি) তিন কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা হলেন: মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইশরাত শামীম, মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) রফিকুল ইসলাম ও সচিব মো. মনিরুল ইসলাম। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
বিসিআইসিতে ব্যবস্থাপক পদে চাকরি পেতে হলে সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে আট বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কিন্তু ইশরাত শামীম অস্তিত্বহীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ছয় বছর কাজের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে চাকরি নেন। তাই চাকরিবিধি অনুযায়ী তাঁর নিয়োগ অবৈধ। এ ছাড়া যমুনা সার কারখানায় চাকরি করার সময় তাঁর বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় দুর্নীতির মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইশরাত শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এ বিষয়ে কিছু বলার নেই, যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবে।’
মনিরুল ইসলাম খান ব্যবস্থাপক (আইন) পদে বিসিআইসিতে যোগ দিয়েছেন। আট বছরের অভিজ্ঞতার দরকার হলেও তিনি ছয় বছরের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি অভিজ্ঞতায় ওকালতি করেছেন বলে যে তথ্য দিয়েছেন, তা সত্য নয় বলে জানা গেছে। তাঁর আইন পেশার কোনো সনদ নেই। এটিও চাকরি বিধিমালার পরিপন্থী। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
রফিকুল ইসলাম বিসিআইসিতে যোগ দিয়েছিলেন উপব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) হিসেবে। এই পদে চাকরির জন্য সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকার কথা রয়েছে চাকরিবিধিতে। কিন্তু তিনি দুই বছরের অভিজ্ঞতার সনদ দিয়েছেন। তাও আবার ভুয়া বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যখন চাকরি নিয়েছি, তখন কি কর্তৃপক্ষ এসব দেখেনি? আমি তাহলে কীভাবে চাকরি পেলাম? কীভাবে পদোন্নতি পেলাম?’
বিসিআইসির একাধিক কর্মকর্তার দাবি, ওই তিন কর্মকর্তার নিয়োগের সব কাগজপত্রই ভুয়া। বিষয়টি তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। এ কারণে নানাভাবে তদন্ত ঠেকিয়ে রাখা হচ্ছে। অতীতেও এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে কোনো সুরাহা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিআইসির কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসন বিভাগের প্রধান (চিফ অব পারসোনাল বা সিওপি) তপন কুমার দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই তিন কর্মকর্তার নিয়োগের বিষয়টি অনেক আগের। তাই কীভাবে তাঁরা নিয়োগ পেয়েছিলেন, কারা নিয়োগের সময় ছিলেন, তাঁরা কী কী সনদ দিয়েছিলেন বা দেননি, কীভাবে নিয়োগ হয়েছিল, সেসব বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগে প্রতারণা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শিল্প মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ পাঠানো হয়। এরপর তাঁদের নিয়োগে প্রতারণা ও দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে তদন্তের জন্য মতামত চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয় বিসিআইসির চেয়ারম্যানের কাছে। এ ছাড়া শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া নিজেও বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিসিআইসির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
No comments