পবিত্র কোরআনের আলো-পুণ্যের প্রতিফল দশ গুণ বাড়ে, তবে পাপের প্রতিফল বাড়ে না
১৫৮. হাল ইয়ানযুরূনা ইল্লা আন তা'তিয়াহুমুল মালা-য়িকাতু আও ইয়া'তিয়া রাব্বুকা আও ইয়া'তিয়া বা'দ্বু আ-য়া-তি রাবি্বকা; ইয়াওমা ইয়া'তী বা'দ্বু আয়া-তি রাবি্বকা লা-ইয়ানফাউ' নাফছান ঈমা-নুহা লাম তাকুন আ-মানাত মিন্ ক্বাবলু আও কাছাবাত্ ফী ঈমা-নিহা খাইরা; ক্বুলিন্ তাযি্বরূ ইন্না মুনতাযি্বরূন। ১৫৯. ইন্নাল্লাযীনা ফার্রাক্বূ দীনাহুম ওয়া কা-নূ শিয়াআ'ন লাছতা মিনহুম ফী শাইয়িন; ইন্নামা আমরুহুম ইলাল্লা-হি ছুম্মা ইউনাবি্বউহুম বিমা কা-নূ ইয়াফআ'লূন।
১৬০. মান জা-আ বিলহাছানাতি ফালাহূ আ'শ্রু আমছা-লিহা ওয়া মান জা-আ বিচ্ছায়্যিআতি ফালা ইউজ্যা ইল্লা মিছলাহা ওয়া হুম লা-ইউযলামূন।
১৬১. ক্বুল ইন্নানী হাদা-নী রাব্বী ইলা সিরা-তি্বম্ মুছতাক্বীম; দীনান কি্বয়ামাম্ মিল্লাতা ইবরা-হীমা হানীফাওঁ ওয়া মা কা-না মিনাল মুশরিকীন।
[সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ১৫৮-১৬১]
অনুবাদ
১৫৮. তারা সেই অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে যে তাদের কাছে ফেরেশতা নাজিল হবে, কিংবা স্বয়ং বিশ্ববিধাতা তাদের কাছে এসে যাবেন অথবা বিধাতার কোনো নিদর্শনের অংশ এসে যাবে? যেদিন সত্যিই তোমার প্রভুর নিদর্শন আসবে সেদিন তো মৃত্যুর দিন। যে ব্যক্তি এর আগে ইমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি তার ইমান দিয়ে ভালো কিছু অর্জন করেনি, তার জন্য এ ইমান আনাটা কোনোই কাজে আসবে না। (হে নবী!) এদের বলে দিন, ঠিক আছে তোমরাও প্রতীক্ষা করো, আমরাও প্রতীক্ষা করছি।
১৫৯. যারা নিজেদের ধর্মের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের কোনো দায়িত্ব আপনার ওপর নেই। তাদের বিষয়টা আল্লাহ তায়ালার হাতে। তখন তিনি তাদের বিস্তারিত জানাবেন তারা কে কী করেছিল।
১৬০. যে ব্যক্তি কোনো পুণ্য নিয়ে আসবে তার জন্য অনুরূপ দশগুণ পুণ্যের প্রতিফল পাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। অপরদিকে কেউ যদি একটা গুনাহের কাজ নিয়ে আসে তাকে একটারই প্রতিফল দেওয়া হবে। তাদের কারো ওপরেই কোনো জুলুম করা হবে না।
১৬১. (হে নবী!) আপনি বলুন, আমার প্রভু আমাকে একটি সরল পথে পরিচালিত করছেন, এটা সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম, এটাই হচ্ছে ইব্রাহীমের একনিষ্ঠ পথ। তিনি কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত ছিলেন না।
ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে ইমান, সৎকর্ম ও সত্যপথ অনুসন্ধানের ব্যাপারে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। ইমানের সঙ্গে আমলের সম্পর্ক ওৎপ্রোত। জীবন সায়াহ্নে বা মৃত্যুর নিদর্শন যখন মানুষের সামনে এসে উপস্থিত হয়; যখন তার আর কিছু করার বা বলার সময় ও সুযোগ থাকে না, তখন আর ইমান আনারও কোনো সুযোগ থাকে না, যদি জীবনকালে ইমান না এনে থাকে। অপরদিকে ইমান আনার মানে হলো বিমূর্ত বিষয়ের ওপর ইমান আনা। যখন যা দৃশ্যমান হয় তখন তার ওপর বিশ্বাস করার নাম ইমান নয়। বিমূর্ত সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের ওপর ইমান আনার নামই প্রকৃত ইমান আনা। বিমূর্ত বিষয়ের ওপর ইমান আনার জন্য প্রয়োজন হয় সত্য জ্ঞান ও সত্যোপলব্ধির আলো। আর এর সঙ্গে জীবনকে সত্যের পথে পরিচালিত করার সম্পর্ক। ১৫৮ নম্বর আয়াতে এই কথাটাই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে এবং অবাধ্যদের প্রতি চরম সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। ১৫৯ নম্বর আয়াতটি ইহুদি ও খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্যে নাজিল হয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্বাস (রা.)। অপরদিকে হজরত হাসান (রা.)-এর বর্ণনা মতে এই আয়াতে লক্ষ্য মুশরিক সম্প্রদায়। এরাও নানা দলে উপদলে বিভক্ত।
১৬০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালার মহান প্রজ্ঞা ও ন্যায়বিচারের একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্বরূপ উন্মোচিত করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর বিচারের প্রকৃতি হলো যে ব্যক্তি একটা পুণ্য করবে সে দশগুণ পুণ্যের প্রতিদান পাবে, আর যে ব্যক্তি একটি পাপ করবে সে শুধু সেই পাপটির জন্যই শাস্তি ভোগ করবে। সত্য, সুন্দর ও কল্যাণ সবসময়ই বর্ধনশীল ও সম্প্রসারণশীল। এটা বাড়ে একের পুণ্য দিয়ে অনেকে উপকৃত হয়। কিন্তু পাপ বাড়ে না বা একের পাপ অন্যের ওপর বর্তায় না। ১৬১ নম্বর আয়াতে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দ্বীনে হানিফের কথা বলা হয়েছে, যা সর্বকালের সরল পথের দৃষ্টান্ত।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
১৬১. ক্বুল ইন্নানী হাদা-নী রাব্বী ইলা সিরা-তি্বম্ মুছতাক্বীম; দীনান কি্বয়ামাম্ মিল্লাতা ইবরা-হীমা হানীফাওঁ ওয়া মা কা-না মিনাল মুশরিকীন।
[সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ১৫৮-১৬১]
অনুবাদ
১৫৮. তারা সেই অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে যে তাদের কাছে ফেরেশতা নাজিল হবে, কিংবা স্বয়ং বিশ্ববিধাতা তাদের কাছে এসে যাবেন অথবা বিধাতার কোনো নিদর্শনের অংশ এসে যাবে? যেদিন সত্যিই তোমার প্রভুর নিদর্শন আসবে সেদিন তো মৃত্যুর দিন। যে ব্যক্তি এর আগে ইমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি তার ইমান দিয়ে ভালো কিছু অর্জন করেনি, তার জন্য এ ইমান আনাটা কোনোই কাজে আসবে না। (হে নবী!) এদের বলে দিন, ঠিক আছে তোমরাও প্রতীক্ষা করো, আমরাও প্রতীক্ষা করছি।
১৫৯. যারা নিজেদের ধর্মের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের কোনো দায়িত্ব আপনার ওপর নেই। তাদের বিষয়টা আল্লাহ তায়ালার হাতে। তখন তিনি তাদের বিস্তারিত জানাবেন তারা কে কী করেছিল।
১৬০. যে ব্যক্তি কোনো পুণ্য নিয়ে আসবে তার জন্য অনুরূপ দশগুণ পুণ্যের প্রতিফল পাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। অপরদিকে কেউ যদি একটা গুনাহের কাজ নিয়ে আসে তাকে একটারই প্রতিফল দেওয়া হবে। তাদের কারো ওপরেই কোনো জুলুম করা হবে না।
১৬১. (হে নবী!) আপনি বলুন, আমার প্রভু আমাকে একটি সরল পথে পরিচালিত করছেন, এটা সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম, এটাই হচ্ছে ইব্রাহীমের একনিষ্ঠ পথ। তিনি কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত ছিলেন না।
ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে ইমান, সৎকর্ম ও সত্যপথ অনুসন্ধানের ব্যাপারে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। ইমানের সঙ্গে আমলের সম্পর্ক ওৎপ্রোত। জীবন সায়াহ্নে বা মৃত্যুর নিদর্শন যখন মানুষের সামনে এসে উপস্থিত হয়; যখন তার আর কিছু করার বা বলার সময় ও সুযোগ থাকে না, তখন আর ইমান আনারও কোনো সুযোগ থাকে না, যদি জীবনকালে ইমান না এনে থাকে। অপরদিকে ইমান আনার মানে হলো বিমূর্ত বিষয়ের ওপর ইমান আনা। যখন যা দৃশ্যমান হয় তখন তার ওপর বিশ্বাস করার নাম ইমান নয়। বিমূর্ত সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের ওপর ইমান আনার নামই প্রকৃত ইমান আনা। বিমূর্ত বিষয়ের ওপর ইমান আনার জন্য প্রয়োজন হয় সত্য জ্ঞান ও সত্যোপলব্ধির আলো। আর এর সঙ্গে জীবনকে সত্যের পথে পরিচালিত করার সম্পর্ক। ১৫৮ নম্বর আয়াতে এই কথাটাই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে এবং অবাধ্যদের প্রতি চরম সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। ১৫৯ নম্বর আয়াতটি ইহুদি ও খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্যে নাজিল হয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্বাস (রা.)। অপরদিকে হজরত হাসান (রা.)-এর বর্ণনা মতে এই আয়াতে লক্ষ্য মুশরিক সম্প্রদায়। এরাও নানা দলে উপদলে বিভক্ত।
১৬০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালার মহান প্রজ্ঞা ও ন্যায়বিচারের একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্বরূপ উন্মোচিত করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর বিচারের প্রকৃতি হলো যে ব্যক্তি একটা পুণ্য করবে সে দশগুণ পুণ্যের প্রতিদান পাবে, আর যে ব্যক্তি একটি পাপ করবে সে শুধু সেই পাপটির জন্যই শাস্তি ভোগ করবে। সত্য, সুন্দর ও কল্যাণ সবসময়ই বর্ধনশীল ও সম্প্রসারণশীল। এটা বাড়ে একের পুণ্য দিয়ে অনেকে উপকৃত হয়। কিন্তু পাপ বাড়ে না বা একের পাপ অন্যের ওপর বর্তায় না। ১৬১ নম্বর আয়াতে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দ্বীনে হানিফের কথা বলা হয়েছে, যা সর্বকালের সরল পথের দৃষ্টান্ত।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments