অবিশ্বাস্য দুর্বৃত্তপনা
আপনি
আপনার নিজের বাড়িতে সপরিবার বাস করেন। এক সকালে হঠাৎ ১০-১২ জন অপরিচিত লোক
আপনার বাড়িতে ঢুকে পড়ল; তারা আপনাকেসহ বাড়ির সবাইকে ধরে-বেঁধে মারতে মারতে
বাড়ির বাইরে বের করে এনে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলল। আপনাদের মুঠোফোনগুলো
তারা কেড়ে নিল। তারপর অ্যাম্বুলেন্সটি চলতে শুরু করল। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা
ধরে আপনাদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ঘুরে বেড়াল। তারপর আপনার বাড়ি থেকে দূরে
অন্য এক পাড়ার রাস্তায় দুর্বৃত্তরা আপনাদের সবাইকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে
নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। আপনি স্বজনদের নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়ে দেখতে
পেলেন, বাড়ি ফাঁকা। শুধু দরজার কাছে পড়ে আছে একটা ভাঙা হারমোনিয়াম,
দেয়ালঘড়ি, বইপত্র, কাপড়চোপড় ইত্যাদি। বাড়িটিতে মূল্যবান যা কিছু ছিল, সব
লোপাট হয়ে গেছে। প্রিয় পাঠক, অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ ঘটনা ঘটেছে। দিনের
আলোয়, খোদ রাজধানী ঢাকায়, শ্যামলীর ২ নম্বর সড়কে। মিহির নামে এক ব্যক্তি ও
তাঁর পরিবারের সদস্যদের এই রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার বিবরণ সোমবারের প্রথম আলোয়
ছাপা হয়েছে। আসলে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে ওই বাড়ির সাড়ে আট কাঠা জমি জবরদখল
করার উদ্দেশ্যে। দুর্বৃত্তরা মিহির বিশ্বাস ও তাঁর স্বজনদের অ্যাম্বুলেন্সে
করে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ানোর সময়টাতে জিনিসপত্র লুট করে বাড়ির সামনে জমির
মালিক হিসেবে জনৈক নুরুজ্জামানসহ কজন ব্যক্তির নাম লেখা একটা সাইনবোর্ড
টাঙিয়ে দিয়ে গেছে।
এ ঘটনা যাঁরা ঘটিয়েছেন, পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী তাঁরা
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাঁদের একজন, ঢাকার
মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তৌফিক উর রেজাসহ দুজনকে পুলিশ
গ্রেপ্তার করেছে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক কামরান
শাহিদ প্রিন্স মোহাব্বতকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বলা হচ্ছে তিনি পলাতক।
ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনগুলোর নাম, পদ, প্রভাব ইত্যাদির
অপব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ
প্রায়ই পাওয়া যায়। অনেক জায়গায় অপরাধে লিপ্ত ব্যক্তিরা এতই হিংস্র আচরণ করে
থাকে যে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে, এমনকি কিছু বলতেও লোকজন ভয় পায়।
এ রকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় যেকোনো
অপরাধ করে পার পাওয়া যায়। এ কারণে পেশাদার অপরাধীরা যে ধরনের গুরুতর অপরাধ
করার সাহস সহজে পায় না, ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ব্যক্তিরা সেগুলো
অবলীলায় করে যেতে পারে। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিস্তার ঘটার এটাও একটা
বড় কারণ। মিহির বিশ্বাসের পরিবারের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত
প্রত্যেককে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিতে হবে। কামরান শাহিদ
প্রিন্স মোহাব্বতকে যুবলীগ বহিষ্কার করেছে, এটা ভালো কথা। এখন সব অপরাধীর
বিচার নিশ্চিত করা হোক। বিশেষভাবে নিশ্চিত করতে হবে মিহির বিশ্বাসের
পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা।
No comments