সংশোধিত বাজেটে রোহিঙ্গা ও নির্বাচনের ব্যয়ের বাড়তি চাপ
রোহিঙ্গা
সংকট ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বাড়তি চাহিদার চাপের পরও চলতি বাজেট
থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হচ্ছে। এতে ৩ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায়
নেমে আসবে সংশোধিত বাজেটের সম্ভাব্য আকার। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায়
কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নির্ধারিত রাজস্বের
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ শতাংশ কমানো হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি হ্রাস
করা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে নতুন করে সংশোধিত বাজেটে
বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায়। পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচন
পরিচালনায় যন্ত্রপাতি ও মুদ্রণ খাতে থাকছে বাড়তি বরাদ্দ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে
পাওয়া গেছে এসব তথ্য। অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন,
চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় কিছুটা কম হবে। ফলে
বাজেটের আকারও কমানো হচ্ছে।
সম্ভাব্য সংশোধিত বাজেটের আকার হবে ৩ লাখ ৮৫
হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি
টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি
টাকা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল
মুহিত বলেছেন, সংশোধিত বাজেট হবে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। কিন্তু আমার মনে
হচ্ছে এটা আরও বেড়ে যাবে। রাজস্ব আদায় বিষয়ে তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে
১১ থেকে ১২ শতাংশ কম হবে। তবে এবারের রাজস্ব আদায় গত বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ
বেশি হবে। অর্থমন্ত্রীর আভাস অনুযায়ী ১১ থেকে ১২ শতাংশ কমানো হলে ৩১ থেকে
৩৫ হাজার কোটি টাকা কমবে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ। সূত্র মতে, সংশোধিত বাজেটে
বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিকে।
বিশেষ করে চলতি বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু এর প্রস্তুতি এখনই শুরু
হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে ভোটার তালিকা খাতে ১০ কোটি টাকা, ভোটার তালিকা
মুদ্রণ ও বিতরণ খাতে ৮ কোটি টাকা, ফরম মুদ্রণ খাতে ৩৫ লাখ টাকা, ডিভিডি
রাইটার ও ডিভিডি খাতে ২০ লাখ টাকাসহ ১৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া
হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাসন গড়ে
তুলতে চলতি বাজেট থেকে এরই মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। আরও ১ হাজার
৮৯৪ কোটি টাকা ছাড় প্রক্রিয়াধীন আছে, যা সংশোধিত বাজেটে অনুমোদন দেয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের
ভাসানচরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। যে কারণে ভাসানচরে শুরু হয়েছে
অস্থায়ী আবাসন নির্মাণের কর্মকাণ্ড। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একনেকে এক লাখ
রোহিঙ্গার জন্য অস্থায়ী আবাসন গড়ে তুলতে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার প্রকল্প
অনুমোদন দেয়া হয়। তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে।
পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নের এ প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের নভেম্বরের মধ্যে শেষ
করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়। তবে প্রথম কিস্তিতে বরাদ্দে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়
হয়েছে।
বাকি অর্থ শিগগিরই ছাড় করা হবে। এছাড়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের কাজ
সম্পন্ন করতে সাড়ে ১১শ’ কোটি টাকা সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ চেয়েছে
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এর মধ্যে এক লাখ গৃহহীন পরিবারকে নিজ জমিতে ঘর
নির্মাণ বাবদ ৯০০ কোটি টাকা, এক হাজার ব্যারাক নির্মাণ বাবদ ৫০ কোটি টাকা ও
খুরুস্কুলের বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫০টি বহুতল ভবন নির্মাণে ২০০ কোটি টাকা
বরাদ্দ চাওয়া হয়। এ প্রকল্পে চলতি বাজেটে ২৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে।
কিন্তু বাড়তি এ অর্থ সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন
কর্মসূচি (এডিপি) কমানো হয়েছে ৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এডিপির লক্ষ্যমাত্রা ১
লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে সংশোধিত আকার নির্ধারণ করা হয় ১
লাখ ৪৬ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। জানা গেছে, সংশোধিত বাজেটের আকার চূড়ান্ত করতে
সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। এ
বৈঠক শুরুর আগে মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ৮টি বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়ার
নির্দেশ দিয়ে অর্থ বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়। অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ের মধ্যে
রয়েছে রাজস্ব বাজেটের আওতাধীন কর্মসূচি, তহবিল ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম
বাস্তবায়নের অগ্রগতি দাখিল করতে হবে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এলপিআরে যাবেন
এমন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঠিক সংখ্যা, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ
জানতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি শ্রান্তি বিনোদন ছুটিতে যাবেন এমন কর্মকর্তা ও
কর্মচারীর তালিকা চাওয়া হয়। এছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি,
ভূমি কর ও টেলিফোন খাতের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া টাকার বিপরীতে এ পর্যন্ত
ব্যয়ের পরিমাণ ও বিল পরিশোধের বিবরণী উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি
পেট্রল, ডিজেল ও সিএনজিচালিত পরিবহনের সংখ্যা পৃথকভাবে উল্লেখ করে পেট্রল ও
লুব্রিকেন্ট খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দের যৌক্তিকতার সপক্ষে কাগজপত্র
উপস্থাপন করতে বলা হয়। উল্লিখিত নির্দেশনা ছাড়া প্রশাসনিক দুটি নির্দেশনা
দেয়া হয়। তা হচ্ছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ পর্যন্ত অর্থ প্রাপ্তি ও ব্যয়ের
হিসাব এবং অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো উপস্থাপন করতে বলা হয়।
No comments