হিজাব বিপ্লব এবং বাংলাদেশি রাজনীতি by মতিউর রহমান চৌধুরী
এক সময় বাইরের দুনিয়ায় অন্তত দুটো বিষয়ে বাংলাদেশের সুনাম ছিল। এক,
উদার গণতন্ত্র। অন্যটি হচ্ছে প্রাণবন্ত গণমাধ্যম। এখন দুটোই নানা প্রশ্নের
মুখোমুখি। দুই বেগমের ভারসাম্য রক্ষার গণতন্ত্র। পশ্চিমা দুনিয়ায়ও ছিল বেশ
আলোচিত। একবার খালেদা জেতেন। অন্যবার হাসিনা। মাঝখানে দূরত্ব তৈরি হয়।
তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে। হরতাল-অবরোধে কাবু হয় খালেদার শাসন। তবুও তিনি অনড়।
তত্ত্বাবধায়কে যাবেন না। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত
সদস্যরা সংসদ থেকে ইস্তফা দেন। সৃষ্টি হয় শূন্যতা। সব আসনে উপনির্বাচন দেয়া
সম্ভব নয়। তাই খালেদা জিয়ার পরামর্শদাতারা এক সকালে সিদ্ধান্ত নিলেন সংসদ
ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দেবেন। যথারীতি তাই হলো। বিরোধীরা এলেন না। যাই হোক,
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে সংসদের বিলুপ্তি ঘটলো। এর আগে স্যার
নিনিয়ান এসেও ঝগড়া থামাতে পারেননি। মিজানুর রহমান চৌধুরীর সেই মুচলেকা
শব্দটি সমঝোতা ভেঙে দিয়েছিল। বিএনপি নেতারা সেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানতে
কতিপয় শর্ত দিয়েছিলেন। মিজান চৌধুরী সেদিন বলেছিলেন শর্ত দিয়ে রাজনীতি হয়
না। সেদিন কুশলী হননি বিএনপি নেতারা। এর মূল্য তাদের দিতে হয়েছে। নানা
সমালোচনা সত্ত্বেও তত্ত্বাবধায়ক গণতন্ত্র এগিয়ে যাচ্ছিলো। ২০০৬-এ এসে আবার
হোঁচট। কে হবেন তত্ত্বাবধায়ক প্রধান এ নিয়ে অযথা বিএনপি নেতারা পানি ঘোলা
করতে থাকেন। বিচারপতি কে এম হাসানকে মাথায় রেখে কৌশল ঠিক করেন। যা কিনা
বিরোধীদের তখনই রাজপথে ঠেলে দেয়। কাজের কাজ কিছু না হলেও বিতর্কিত হন কে এম
হাসান। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি কে এম হাসান অন্য যে কোনো বিচারকের
তুলনায় এখানে দায়িত্বের প্রতি সৎ হতেন। অযথা তার গায়ে কলঙ্ক লেগে গেল।
বিদায় নিলেন তিনি। এরপরের খেলাও অস্বচ্ছ, বাড়তি সুবিধা নেয়ার অপকৌশল। রাজপথ
উত্তপ্ত হলো। বিদেশিরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেন। লগি-বৈঠায় প্রাণ গেল ১১ জনের।
তাও রাজপথে। এই দেখে বিদেশিরা ভাবলেন এই তো সময়। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ
স্থাপন করলেন। জেনারেল মইনের সম্মতি, জেনারেল মাসুদ এক পায়ে খাড়া। জেনারেল
আমিন সুযোগের অপেক্ষায়। এখানে রসদ যোগান ব্রিগেডিয়ার বারী। পরিণতিতে এলো
ওয়ান ইলেভেন।
নানা খেলা শুরু হলো পর্দার আড়ালে। জেনারেলরা বিভক্ত হয়ে পড়লেন। বিশেষ করে জেনারেল আমিন কৌশলে জেনারেল মইনকে হটিয়ে ক্ষমতা নেয়ার ফন্দি আঁটেন। কিন্তু বিধিবাম। মইন এটা টের পেয়ে অন্য খেলা খেলে দেন। এ দ্বন্দ্বে শিকার হন ব্রিগেডিয়ার বারী। তাকে সরিয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হয়। জেনারেল মইন উপায়ান্তর না দেখে পতিত রাজনীতির কাছেই আত্মসমর্পণ করেন।
সংঘাতময় রাজনীতির অবসান হবে এটা ভেবে জনগণ নির্ভেজাল সমর্থন দিতে শুরু করলো। বড় দুই দলেই সংস্কারবাদীদের উত্থান ঘটলো। জেনারেলরা মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলেন। বাংলাদেশের জনগণকে তারা চেনেন না। এ দেশের জনগণের ভালোবাসা কচুপাতায় পানি রাখার মতো। এই ভালো এই খারাপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের একটি তুচ্ছ ঘটনা জেনারেলদের ভাবিয়ে তুললো। রাজনীতিবিদদের গায়ে দুর্নীতির কলঙ্ক লেপে দিলেন জেনারেলরা। নিজেরাও দুর্নীতিতে ডুবে গেলেন। ভেস্তে গেল মাইনাস টু-এর কথিত ফর্মুলা। দুই নেত্রীকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার কৌশলও ব্যর্থ হলো। দুই নেত্রী যখন জেলে তখন সংলাপ শুরু হলো রাতের অন্ধকারে। শেখ হাসিনা বিদেশ চলে গেলেন। ফিরতে চাইলে হিথ্রো বিমানবন্দরে গতি রোধ। অনেক নাটকীয়তার পর দেশে ফিরলেন। খালেদা তখনও জেলে। সংলাপ চলতে থাকলো নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে। খালেদাকে রাজি করতে সাব-জেলে নানামুখী চেষ্টা চললো। সৌদি আরবে পাঠানোর উদ্যোগ এর আগেই ব্যর্থ হয়েছে।
এক পর্যায়ে খালেদা রাজি হলেন। জেল থেকে মুক্তি পেলেন। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন। শেখ হাসিনা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেলেন। খালেদা চাপে। সারা দেশ সফর করে এসে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা অর্থাৎ অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান হলেন। আর এর অন্যতম কারণ ছিল নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। যে কমিশন তার দল ভাঙার চেষ্টা করেছে সে কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ হবে সেটা নিয়ে ভাবতে থাকলেন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তাকে কোনো একটা জায়গা থেকে বলা হলো দল এক রাখার স্বার্থে নির্বাচনে যান। ফলাফল আপনার পক্ষে যাবে না- এমনটাই বলাবলি হচ্ছে। খালেদা উভয় সংকটে। এই অবস্থায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এসে সব উল্টে দিলেন। বললেন ম্যাডাম ফল নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমাদের কাছে খবর আছে আমরাই জিতবো। জেনারেলদের মনোভাবের কথাও তুলে ধরলেন। খালেদা নির্বাচন বর্জনের পথ থেকে সরে দাঁড়ালেন।
নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেলো আওয়ামী লীগ। জামায়াতকে দুষতে শুরু করলেন খালেদা। নির্বাচন বর্জনই শ্রেয় ছিল তখন বিএনপির অনেকেই বলতে থাকলেন। সম্পর্কের অবনতি ঘটলো দু’দলের মধ্যে। এখনো সেটা মেরামত হয়নি। বরং দূরত্ব আরো বেড়েছে। খালেদা যখন জেলখানায় জামায়াত তখন ভবিষ্যৎ নির্বাচনে অংশ নেয়ার চিন্তায় বিভোর। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকছে না- এমনটা চাউর হয়ে গেছে রাজনৈতিক বৈঠকখানায়, মিডিয়ায়। আওয়ামী লীগ-বিএনপি সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে ২০০৮-এর নির্বাচনের পর থেকে। খালেদা তার বাড়ি হারান। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হয়। যার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা ১৭২ দিন হরতাল পালন করেছিল। নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে তারা হেরে যায়। আগুন সন্ত্রাসের কলঙ্ক লাগে গায়ে। নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক না দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে লাভ হতো কি-না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, এতটা বিপর্যয় হতো না। সংলাপে অংশ নেয়াও ছিল জরুরি। এখানে অবশ্য বলতে হবে বিএনপির ভেতরে রয়েছে আওয়ামী লীগের অনেক শেয়ার হোল্ডার। তারাই খালেদা জিয়াকে বলেছে সরকারের পতন হয়ে যাবে। নির্বাচনে গিয়ে কি লাভ। ভুল বৈদেশিক নীতিও এখানে ভূমিকা রেখেছে। রাজনীতিতে একটি ভুল হাজারো ভুলের জন্ম দেয়। বদলে গেল রাজনীতির দৃশ্যপট। নতুন নতুন কৌশল নিতে থাকে সরকার। মামলা মোকদ্দমায় জর্জরিত হয়ে পড়ে বিএনপি। খালেদা নিজেও চাপের মধ্যে পড়েন। রাজনীতির কৌশল পরিবর্তন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। শাসকদল খালেদাকে মাইনাস করে নির্বাচনে যেতে চায়। খালেদা কারাগারে এক দুর্নীতি মামলায়। তার মুক্তির দাবি নিয়ে বিএনপি এখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠেই নামতে পারছে না। সরকার হার্ডলাইনে। শান্তিবাবু মারা গেছেন। তারা আর বিএনপিকে দাঁড়াতেই দেবে না। বিএনপিকে কঠিন চাপে রেখে নির্বাচনে যেতে চায় দলটি। বিএনপি কি করবে? নির্বাচন বর্জন করলে দল টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। আবার নির্বাচনে গেলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে অন্যরকম হতো। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার কারো কথা শুনবে না। বিদেশিরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলবে। নানামুখী চাপ আসবে। ক’দিন পর এই খবর মিডিয়াতেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমন হয়ে গেল রাজনীতি। শুরুতে যেটা বলেছিলাম পাশ্চাত্য দুনিয়ায় আলোচিত ছিল দুই বেগমের রাজনীতি। বলা হতো একমাত্র মুসলিম দেশ যেখানে পাশ্চাত্য ধারায় গণতন্ত্র চর্চা হচ্ছে। গর্ব করার বিষয় ছিল। নারীর ক্ষমতায়ন বলে কথা। এখন তা বিদায় নিতে চলেছে। একমুখী চিন্তার দিকে নজর বেশি। এই অবস্থায় আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতি কি হবে এটা অস্পষ্ট। সংঘাতের দিকে যাবে না এটাই বা কে বলবে?
দুই, বাংলাদেশের গণমাধ্যম নব্বইয়ের পর ছিল উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত। অনেক কিছুই বলা যেতো। লেখা যেতো। সময় বদলে যোগ হয়েছে সেলফ সেন্সরশিপ। এটা নতুন ধরনের সাংবাদিকতা। ট্রাম্পের ফেইক নিউজের ঢেউ বাংলাদেশেও। কোন্টি সঠিক, কোন্টি বেঠিক এটা বাছাই করা বড় কঠিন। সাংবাদিকতা হয়ে গেছে প্রাপ্তিনির্ভর। সংবাদ সম্মেলনের সংজ্ঞাও বদলে গেছে। দলীয় রাজনীতির প্রভাবে সাংবাদিকরা এখন আসল ছেড়ে নকল নিয়েই ব্যস্ত। এর ফলে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসও মানুষ ভুলে যাবে। মুক্ত চিন্তা আর কথা বলার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা না হলে এক সময় দেশটা ইরানের পথ ধরতে পারে। এমনিতেই ‘হিজাব বিপ্লবে’ বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কাবু হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার মোহে বিভোর ছিলেন ইরানের শাহ। ফল কি দাঁড়িয়েছিল তা সবার জানা।
নানা খেলা শুরু হলো পর্দার আড়ালে। জেনারেলরা বিভক্ত হয়ে পড়লেন। বিশেষ করে জেনারেল আমিন কৌশলে জেনারেল মইনকে হটিয়ে ক্ষমতা নেয়ার ফন্দি আঁটেন। কিন্তু বিধিবাম। মইন এটা টের পেয়ে অন্য খেলা খেলে দেন। এ দ্বন্দ্বে শিকার হন ব্রিগেডিয়ার বারী। তাকে সরিয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হয়। জেনারেল মইন উপায়ান্তর না দেখে পতিত রাজনীতির কাছেই আত্মসমর্পণ করেন।
সংঘাতময় রাজনীতির অবসান হবে এটা ভেবে জনগণ নির্ভেজাল সমর্থন দিতে শুরু করলো। বড় দুই দলেই সংস্কারবাদীদের উত্থান ঘটলো। জেনারেলরা মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলেন। বাংলাদেশের জনগণকে তারা চেনেন না। এ দেশের জনগণের ভালোবাসা কচুপাতায় পানি রাখার মতো। এই ভালো এই খারাপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের একটি তুচ্ছ ঘটনা জেনারেলদের ভাবিয়ে তুললো। রাজনীতিবিদদের গায়ে দুর্নীতির কলঙ্ক লেপে দিলেন জেনারেলরা। নিজেরাও দুর্নীতিতে ডুবে গেলেন। ভেস্তে গেল মাইনাস টু-এর কথিত ফর্মুলা। দুই নেত্রীকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার কৌশলও ব্যর্থ হলো। দুই নেত্রী যখন জেলে তখন সংলাপ শুরু হলো রাতের অন্ধকারে। শেখ হাসিনা বিদেশ চলে গেলেন। ফিরতে চাইলে হিথ্রো বিমানবন্দরে গতি রোধ। অনেক নাটকীয়তার পর দেশে ফিরলেন। খালেদা তখনও জেলে। সংলাপ চলতে থাকলো নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে। খালেদাকে রাজি করতে সাব-জেলে নানামুখী চেষ্টা চললো। সৌদি আরবে পাঠানোর উদ্যোগ এর আগেই ব্যর্থ হয়েছে।
এক পর্যায়ে খালেদা রাজি হলেন। জেল থেকে মুক্তি পেলেন। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন। শেখ হাসিনা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেলেন। খালেদা চাপে। সারা দেশ সফর করে এসে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা অর্থাৎ অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান হলেন। আর এর অন্যতম কারণ ছিল নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। যে কমিশন তার দল ভাঙার চেষ্টা করেছে সে কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ হবে সেটা নিয়ে ভাবতে থাকলেন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তাকে কোনো একটা জায়গা থেকে বলা হলো দল এক রাখার স্বার্থে নির্বাচনে যান। ফলাফল আপনার পক্ষে যাবে না- এমনটাই বলাবলি হচ্ছে। খালেদা উভয় সংকটে। এই অবস্থায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এসে সব উল্টে দিলেন। বললেন ম্যাডাম ফল নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমাদের কাছে খবর আছে আমরাই জিতবো। জেনারেলদের মনোভাবের কথাও তুলে ধরলেন। খালেদা নির্বাচন বর্জনের পথ থেকে সরে দাঁড়ালেন।
নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেলো আওয়ামী লীগ। জামায়াতকে দুষতে শুরু করলেন খালেদা। নির্বাচন বর্জনই শ্রেয় ছিল তখন বিএনপির অনেকেই বলতে থাকলেন। সম্পর্কের অবনতি ঘটলো দু’দলের মধ্যে। এখনো সেটা মেরামত হয়নি। বরং দূরত্ব আরো বেড়েছে। খালেদা যখন জেলখানায় জামায়াত তখন ভবিষ্যৎ নির্বাচনে অংশ নেয়ার চিন্তায় বিভোর। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকছে না- এমনটা চাউর হয়ে গেছে রাজনৈতিক বৈঠকখানায়, মিডিয়ায়। আওয়ামী লীগ-বিএনপি সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে ২০০৮-এর নির্বাচনের পর থেকে। খালেদা তার বাড়ি হারান। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হয়। যার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা ১৭২ দিন হরতাল পালন করেছিল। নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে তারা হেরে যায়। আগুন সন্ত্রাসের কলঙ্ক লাগে গায়ে। নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক না দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে লাভ হতো কি-না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, এতটা বিপর্যয় হতো না। সংলাপে অংশ নেয়াও ছিল জরুরি। এখানে অবশ্য বলতে হবে বিএনপির ভেতরে রয়েছে আওয়ামী লীগের অনেক শেয়ার হোল্ডার। তারাই খালেদা জিয়াকে বলেছে সরকারের পতন হয়ে যাবে। নির্বাচনে গিয়ে কি লাভ। ভুল বৈদেশিক নীতিও এখানে ভূমিকা রেখেছে। রাজনীতিতে একটি ভুল হাজারো ভুলের জন্ম দেয়। বদলে গেল রাজনীতির দৃশ্যপট। নতুন নতুন কৌশল নিতে থাকে সরকার। মামলা মোকদ্দমায় জর্জরিত হয়ে পড়ে বিএনপি। খালেদা নিজেও চাপের মধ্যে পড়েন। রাজনীতির কৌশল পরিবর্তন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। শাসকদল খালেদাকে মাইনাস করে নির্বাচনে যেতে চায়। খালেদা কারাগারে এক দুর্নীতি মামলায়। তার মুক্তির দাবি নিয়ে বিএনপি এখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠেই নামতে পারছে না। সরকার হার্ডলাইনে। শান্তিবাবু মারা গেছেন। তারা আর বিএনপিকে দাঁড়াতেই দেবে না। বিএনপিকে কঠিন চাপে রেখে নির্বাচনে যেতে চায় দলটি। বিএনপি কি করবে? নির্বাচন বর্জন করলে দল টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। আবার নির্বাচনে গেলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে অন্যরকম হতো। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার কারো কথা শুনবে না। বিদেশিরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলবে। নানামুখী চাপ আসবে। ক’দিন পর এই খবর মিডিয়াতেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমন হয়ে গেল রাজনীতি। শুরুতে যেটা বলেছিলাম পাশ্চাত্য দুনিয়ায় আলোচিত ছিল দুই বেগমের রাজনীতি। বলা হতো একমাত্র মুসলিম দেশ যেখানে পাশ্চাত্য ধারায় গণতন্ত্র চর্চা হচ্ছে। গর্ব করার বিষয় ছিল। নারীর ক্ষমতায়ন বলে কথা। এখন তা বিদায় নিতে চলেছে। একমুখী চিন্তার দিকে নজর বেশি। এই অবস্থায় আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতি কি হবে এটা অস্পষ্ট। সংঘাতের দিকে যাবে না এটাই বা কে বলবে?
দুই, বাংলাদেশের গণমাধ্যম নব্বইয়ের পর ছিল উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত। অনেক কিছুই বলা যেতো। লেখা যেতো। সময় বদলে যোগ হয়েছে সেলফ সেন্সরশিপ। এটা নতুন ধরনের সাংবাদিকতা। ট্রাম্পের ফেইক নিউজের ঢেউ বাংলাদেশেও। কোন্টি সঠিক, কোন্টি বেঠিক এটা বাছাই করা বড় কঠিন। সাংবাদিকতা হয়ে গেছে প্রাপ্তিনির্ভর। সংবাদ সম্মেলনের সংজ্ঞাও বদলে গেছে। দলীয় রাজনীতির প্রভাবে সাংবাদিকরা এখন আসল ছেড়ে নকল নিয়েই ব্যস্ত। এর ফলে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসও মানুষ ভুলে যাবে। মুক্ত চিন্তা আর কথা বলার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা না হলে এক সময় দেশটা ইরানের পথ ধরতে পারে। এমনিতেই ‘হিজাব বিপ্লবে’ বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কাবু হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার মোহে বিভোর ছিলেন ইরানের শাহ। ফল কি দাঁড়িয়েছিল তা সবার জানা।
No comments