আবারও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি? by মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
গ্যাস-বিদ্যুতের
দাম বাড়ানোর পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকার কেরোসিন, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের
দাম বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা করছে। এটি কার্যকর হলে জনদুর্ভোগ বাড়বে,
একইসঙ্গে দেশের শিল্প ও কল-কারখানাগুলো নতুন করে সংকটের মুখোমুখি হবে, যা
মোটেই কাম্য নয়। মূলত গ্যাস-তেল ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনার
নেপথ্যে রয়েছে চলতি বছর এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি (তরলিকৃত প্রাকৃতিক
গ্যাস) আমদানির বাস্তবতা। গত কয়েক বছরে সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত সাড়ে ৩শ’র
বেশি শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ দিতে হলে সরকারকে উচ্চমূল্যের এলএনজি
আমদানি করতে হবে এবং এজন্য ব্যয় হবে অতিরিক্ত ১৪ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে ৭ হাজার কোটি টাকা জোগান দেয়া হবে এনার্জি সিকিউরিটি ফান্ড থেকে।
বাকি টাকার জোগান দিতে সরকার আন্তর্জাতিক ইসলামী ট্রেড ফাইন্যান্স
কর্পোরেশন (আইটিএফসি) থেকে উচ্চমূল্যের ঋণ নেয়ার পাশাপাশি গ্যাস-তেল ও
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। আর কতবার গ্যাস-তেল ও
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করলে সরকার খুশি হবে? এটি গ্রাহক তথা জনগণকে
গলাটিপে হত্যার শামিল। দফায় দফায় গ্যাস-তেল ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির
মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়া
হচ্ছে।
গরিব ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর কথা ভেবে এ মুহূর্তে গ্যাস-তেল ও
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসা উচিত। গ্যাস-তেল ও
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব কার্যকর হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
বহুগুণ বাড়বে। এর ফলে গণপরিবহনের ভাড়া যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে নিত্যপণ্যের
দামও। তাছাড়া এটি শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করবে। এর ফলে লোকসানের
মুখে পড়া শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। কাজেই তেল-গ্যাস ও
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা থাকা উচিত।
বস্তুত ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কতবার পাইকারি ও খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে
গ্যাস-তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে, সে হিসাব করা উচিত। দেখা যাচ্ছে,
গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেবামূলক হলেও তারা হাজার কোটি
টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছে। প্রতিষ্ঠানের বড়বাবু, ছোটবাবু সবাই আজ কোটিপতি।
প্রতারণা, চুরি, সিস্টেমলস, লুটপাট ও লুণ্ঠনের জন্য দেশের মানুষ তাদের
প্রতি চরম ক্ষুব্ধ। দেশে নেই কোনো কর্মসংস্থান, সাধারণ মানুষের বেতন
বাড়েনি, মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতে টাকা নেই- ঠিক এ মুহূর্তে গ্যাস-তেল ও
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হলে মানুষের কষ্ট, দুর্ভোগ ও
দুশ্চিন্তা বাড়াবে এবং মনোবল ভেঙে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য। বিশ্বে যখন
জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে, তখন জনগণের দুর্ভোগ ও
কষ্টকে পাত্তা না দিয়ে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অনৈতিক। এ ধরনের
সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে সরকারের বিরত থাকা উচিত।
গেণ্ডারিয়া, ঢাকা
গেণ্ডারিয়া, ঢাকা
No comments