ইউএস-বাংলা ট্র্যাজেডি
কাঠমান্ডুতে
বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ
বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রায় অর্ধশত যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে
শোকাহত। উড়োজাহাজটির পাইলট ও কো-পাইলটসহ নিহতদের ২৬ জন বাংলাদেশি। বাকিদের
বেশিরভাগই নেপালি। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বিমানটি সোমবার দুপুরে ৭১ জন
আরোহীসহ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। গত ৩৪
বছরের মধ্যে দেশে বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনা এটাই প্রথম। প্রতিটি মৃত্যুর
ঘটনাই বেদনার, বিশেষত স্বজনদের কাছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ
বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের প্রতি রইল আমাদের গভীর সমবেদনা।
দুর্ঘটনায় যারা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি
আমরা। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ তদন্তসাপেক্ষ। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
কর্তৃপক্ষ বলছে, ত্রিভুবন বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের ভুল বার্তার
কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে পাইলটের সর্বশেষ
কথোপকথনের অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, পাইলটকে বিমানবন্দরের ডানদিকের দুই নম্বর
রানওয়েতে অবতরণের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। নির্দেশনা অনুযায়ী পাইলট
উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরের ডানদিকে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান। কিন্তু ডানদিকে
রানওয়ে ফ্রি না থাকায় তিনি আবারও কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ
সময় তাকে ভিন্ন বার্তা দেয়া হয়। এবারে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি বর্তমান
অবস্থানে থাকতে পারবেন? এ সময় পাইলট দুই নম্বর রানওয়ে ফ্রি করার জন্য
কন্ট্রোল টাওয়ারে অনুরোধ জানান।
কিন্তু তাকে আবারও ভিন্ন বার্তা দেয়া হয়।
এর কিছুক্ষণ পর পাইলট আবারও রানওয়ে ফ্রি করার অনুরোধ জানান। এর পরপরই
উড়োজাহাজটি বিকট শব্দ করতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর সেটি বিমানবন্দরের পাশের
একটি মাঠে আছড়ে পড়ে। কাজেই কন্ট্রোল টাওয়ারের ভুল বার্তা দুর্ঘটনার কারণ
হতেও পারে। তবে ত্রিভুবন বিমানবন্দর বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরগুলোর
একটি। এ বিমানবন্দরে এর আগেও বেশ কয়েকবার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। তাছাড়া
বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটিও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। কাজেই ইউএস-বাংলা
এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ কী, তদন্ত কমিটির
রিপোর্ট প্রকাশের আগে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। দেশে বেসরকারি
বিমান চলাচল ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটেছে, এটি ইতিবাচক। এর ফলে যাত্রীদের
জন্য প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে টিকিট বিক্রির একটি প্রবণতা গড়ে উঠেছে। তবে এ
ক্ষেত্রে বিমান সংস্থাগুলো তাদের বহরে যেসব উড়োজাহাজ যুক্ত করে থাকে,
সেগুলো কতটা নিরাপদ তা সাধারণ মানুষের অজানা। উড়োজাহাজগুলো বেশি পুরনো ও
মেয়াদোত্তীর্ণ কিনা এমন প্রশ্ন বা সংশয় রয়েছে যাত্রীদের মনে। বেসামরিক
বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উচিত এসব বিষয় নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই
করা। বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোকে ব্যবসা প্রসারের পাশাপাশি যাত্রী সেবা ও
নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ
বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে যদি কারও অবহেলা বা যান্ত্রিক ত্র“টি দায়ী হয়ে থাকে,
তাহলে তাদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে
যাতে আর না ঘটে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
No comments