হারাধন ট্রাম্পের দশটি ছেলেই চলে যাচ্ছে একে একে by ফজলুল কবির
‘ইউ
আর ফায়ারড’। এই বাক্যটি যেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের
জন্যই তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পও এই বাক্যকে ভীষণ ভালোবাসেন। আর তাই ‘দ্য
অ্যাপ্রেনটিস’–এর বিচারকের আসনটি থেকে তিনি ওভাল অফিসের সর্বোচ্চ আসনে গিয়ে
বসলেও বাক্যটি ঠিক ছাড়তে পারছেন না। শুরু হয়েছিল স্যালি ইয়েটসকে দিয়ে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র
১০ দিনের মাথায় তাঁকে এই বাক্য শুনতে হয়েছিল। আর সর্বশেষ ১৩ মার্চ বাক্যটি
শুনলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। আমেরিকানদের জানা থাকলে
তারা নিশ্চয় এখন যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘হারাধনের দশটি ছেলে’ কবিতাটি আওড়ে
যেত। কারণ, রেক্স টিলারসনের মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্প প্রশাসনের ২৬
জন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার বিদায় ঘটল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স
টিলারসনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ১৩ মার্চ হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান,
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড
ট্রাম্প। আর পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সিআইএর বর্তমান পরিচালক মাইক
পম্পেও-এর নাম প্রস্তাবের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মোটাদাগে এটুকুই খবর।
কিন্তু এই খবরই অনেক আলোচনাকে উসকে দিচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রেক্স টিলারসনের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এই দুজনের প্রকাশ্য মতপার্থক্য ছিল। বিভিন্ন সফরে প্রেসিডেন্টের আচরণ ও বক্তব্য নিয়ে টিলারসনের মধ্যে বিরক্তিরও জন্ম হয়েছিল। আর এর মাত্রা যে ভয়াবহ, তা প্রথম সামনে আসে গত বছরের শেষার্ধে। সেই সময় পেন্টাগনে একটি সভা শেষে বের হওয়ার সময় প্রশাসন ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সামনে ট্রাম্পকে ‘গাড়ল’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন টিলারসন। সেই সময় এই নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল। টিলারসন পরে ট্রাম্পের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিষয়টি সহজ করারও চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই যে পররাষ্ট্রনীতি, সেখানে দুজনের সহমত হওয়াটা সম্ভবত কখনোই সম্ভব ছিল না। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষত ইরান ইস্যুতে দুজনের অবস্থান ছিল ভিন্ন। ঠিক একইভাবে নাফটা, ন্যাটো ইত্যাদি ক্ষেত্রেও দুজন পৃথক বৃত্তেই অবস্থান করছিলেন। আর সর্বশেষ উত্তর কোরীয় নেতার সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে টিলারসন শুরুতে কিছুটা রাখঢাক দিয়ে কথা বললেও পরে তাঁর অবস্থান প্রকাশ পেয়ে যায়। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, শুক্রবারই টিলারসনকে সরে দাঁড়াতে বলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তাতে সাড়া না দিলেও আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করে সোমবারেই আমেরিকা ফেরেন টিলারসন। আর তার পরদিনই তাঁকে বরখাস্ত করা হলো। পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ট্রাম্পের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন সিআইএ–প্রধান মাইক পম্পেও ট্রাম্পের প্রথম পছন্দ। আর পম্পেওর স্থলাভিষিক্ত করার জন্য তিনি সিআইএর উপপরিচালক গিনা হাসপেলের নাম বলেছেন প্রাথমিকভাবে। সে রকম কিছু হলে হাসপেলই হবেন আমেরিকার শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রথম নারী পরিচালক।এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প পম্পেও ও হাসপেলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে টিলারসনেরও প্রশংসা করেছেন তিনি। মুখে যা–ই বলুন, সবাই জানে টিলারসনের দিক থেকে ‘গাড়ল’ আখ্যা পাওয়ার বিষয়টি তিনি কোনোভাবেই ভুলতে পারেননি। একই সঙ্গে তিনি টিলারসনের সঙ্গে তাঁর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক দ্বন্দ্বটিও আর মানতে নারাজ। ট্রাম্পের দৃষ্টিতে টিলারসন পররাষ্ট্রনীতিগত জায়গায় খুবই পুরোনো ধারণাপন্থী। অন্যদিকে টিলারসন কোনোভাবেই ট্রাম্পের নীতির প্রতি আস্থাশীল নন। সর্বশেষ উত্তর কোরীয় নেতার বৈঠকের প্রস্তাবে ট্রাম্পের হঠাৎ করে সায় দেওয়ার বিষয়টিও তিনি মানতে পারেননি। যেমন মানতে পারেননি কিম উনের সঙ্গে ট্রাম্পের দীর্ঘদিন ধরে চলা কথার লড়াইকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাসের মাথায় টিলারসন চলে যেতে হতে পারে এমন কানাঘুষা চলছিল। বলা হচ্ছিল ট্রাম্প যেকোনো সময় তাঁকে বরখাস্ত করতে পারেন। কিন্তু সেটি বাস্তবে রূপ নিতে আরও আট মাস সময় লাগল। টিলারসনকে ভাগ্যবানই বলতে হবে। ট্রাম্প সাধারণত অস্বস্তিকর কাউকে ‘ইউ আর ফায়ারড’ বাক্যটি শুনিয়ে দিতে এত লম্বা সময় নেন না।স্যালি ইয়েটসের কথাই ধরা যাক। ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় তাঁকে এই কথা শুনতে হয়েছিল। অপরাধ? ছয় মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর আমেরিকা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেওয়া ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশটি স্থগিত করার জন্য বিচার বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্যালি। ফলে ২০ জানুয়ারি নেওয়া দায়িত্ব তাঁকে ৩০ জানুয়ারিই ছাড়তে হয়।
ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে যেন মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলা চলছে। যে কেউ যেকোনো সময় আলোয় আসতে পারে। আবার উল্টোটাও সত্য। এই ক্ষেত্রে অ্যান্থনি স্ক্যারামুচ্চির কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ৭৪ দিন দায়িত্ব পালন করে মাইক ডুবকে পদত্যাগ করার পর গত বছরের ২১ জুলাই হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালকের দায়িত্ব নেন তিনি। মাত্র ছয় দিন স্থায়ী হয়েছিলেন তিনি এই পদে। এর মধ্যেই অবশ্য অনেক কিছু তিনি ওলটপালট করেছিলেন। সে অন্য প্রসঙ্গ। স্ক্যারামুচ্চির পর এই পদের দায়িত্ব নেন হোপ হিকস। তিনিও চলে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই মাসে। মিউজিক্যাল চেয়ারের যথার্থ উদাহরণ বলা যায় হোয়াইট হাউসের এই পদকে। শুরু থেকেই টালমাটাল ট্রাম্প প্রশাসন যেন সম্প্রতি আরও বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে রক্ষণশীল শুল্ক আরোপ নিয়ে মতবিরোধকে কেন্দ্র করে এই তো কদিন আগেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক ও প্রেসিডেন্টের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন গ্যারি কোহন। হোয়াইট হাউসে তিনি ছিলেন ৪১১ দিন। যথেষ্ট ভাগ্যবান বলতে হবে তাঁকে। কারণ চলে যাওয়ার ঘোষণার পরও ট্রাম্প তাঁর প্রশংসা করেছেন। এর কিছুদিন আগেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক হোপ হিকস। একই মাসের শুরুতে কেলেঙ্কারি সঙ্গী করে পদত্যাগ করেন হোয়াইট হাউসের স্টাফ সেক্রেটারি রব পোর্টার। তার আগের মাসে হোয়াইট হাউস ছেড়ে যান পাবলিক লিয়াজোঁ অফিসের যোগাযোগ পরিচালক ওমারোসা ম্যানিগোল্ট-নিউম্যান। যদিও তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন ১৩ ডিসেম্বর। ৮ ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউস ছাড়েন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডিনা পাওয়েল। মার্কিন প্রশাসনে এক বছর সময়ের মধ্যে এত বেশিসংখ্যক কর্মকর্তা এর আগে কখনো পদত্যাগ বা বরখাস্ত হননি। কে নেই এই তালিকায়? ট্রাম্পের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কৌশলী ও উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন, এফবিআই–প্রধান জেমস কোমি, হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রিবাস, প্রেসসচিব শন স্পাইসার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন, হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস মন্ত্রী টম প্রাইস, প্রেসিডেন্টের উপসহকারী সেবাস্তিয়ান গোরকা—এঁদের সবাইকে হয় চাপের মুখে পদত্যাগ করতে হয়েছে, নয়তো বরখাস্ত হতে হয়েছে, যেমনটা হলেন রেক্স টিলারসন, সরে দাঁড়ানোর প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায়। হারাধনের সংসারের মতো ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রস্থানই একমাত্র সত্য। আসা-যাওয়ার খেলা চলছে অবিরত। এই খেলা কোথায় থামে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রেক্স টিলারসনের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এই দুজনের প্রকাশ্য মতপার্থক্য ছিল। বিভিন্ন সফরে প্রেসিডেন্টের আচরণ ও বক্তব্য নিয়ে টিলারসনের মধ্যে বিরক্তিরও জন্ম হয়েছিল। আর এর মাত্রা যে ভয়াবহ, তা প্রথম সামনে আসে গত বছরের শেষার্ধে। সেই সময় পেন্টাগনে একটি সভা শেষে বের হওয়ার সময় প্রশাসন ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সামনে ট্রাম্পকে ‘গাড়ল’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন টিলারসন। সেই সময় এই নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল। টিলারসন পরে ট্রাম্পের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিষয়টি সহজ করারও চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই যে পররাষ্ট্রনীতি, সেখানে দুজনের সহমত হওয়াটা সম্ভবত কখনোই সম্ভব ছিল না। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষত ইরান ইস্যুতে দুজনের অবস্থান ছিল ভিন্ন। ঠিক একইভাবে নাফটা, ন্যাটো ইত্যাদি ক্ষেত্রেও দুজন পৃথক বৃত্তেই অবস্থান করছিলেন। আর সর্বশেষ উত্তর কোরীয় নেতার সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে টিলারসন শুরুতে কিছুটা রাখঢাক দিয়ে কথা বললেও পরে তাঁর অবস্থান প্রকাশ পেয়ে যায়। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, শুক্রবারই টিলারসনকে সরে দাঁড়াতে বলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তাতে সাড়া না দিলেও আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করে সোমবারেই আমেরিকা ফেরেন টিলারসন। আর তার পরদিনই তাঁকে বরখাস্ত করা হলো। পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ট্রাম্পের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন সিআইএ–প্রধান মাইক পম্পেও ট্রাম্পের প্রথম পছন্দ। আর পম্পেওর স্থলাভিষিক্ত করার জন্য তিনি সিআইএর উপপরিচালক গিনা হাসপেলের নাম বলেছেন প্রাথমিকভাবে। সে রকম কিছু হলে হাসপেলই হবেন আমেরিকার শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রথম নারী পরিচালক।এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প পম্পেও ও হাসপেলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে টিলারসনেরও প্রশংসা করেছেন তিনি। মুখে যা–ই বলুন, সবাই জানে টিলারসনের দিক থেকে ‘গাড়ল’ আখ্যা পাওয়ার বিষয়টি তিনি কোনোভাবেই ভুলতে পারেননি। একই সঙ্গে তিনি টিলারসনের সঙ্গে তাঁর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক দ্বন্দ্বটিও আর মানতে নারাজ। ট্রাম্পের দৃষ্টিতে টিলারসন পররাষ্ট্রনীতিগত জায়গায় খুবই পুরোনো ধারণাপন্থী। অন্যদিকে টিলারসন কোনোভাবেই ট্রাম্পের নীতির প্রতি আস্থাশীল নন। সর্বশেষ উত্তর কোরীয় নেতার বৈঠকের প্রস্তাবে ট্রাম্পের হঠাৎ করে সায় দেওয়ার বিষয়টিও তিনি মানতে পারেননি। যেমন মানতে পারেননি কিম উনের সঙ্গে ট্রাম্পের দীর্ঘদিন ধরে চলা কথার লড়াইকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাসের মাথায় টিলারসন চলে যেতে হতে পারে এমন কানাঘুষা চলছিল। বলা হচ্ছিল ট্রাম্প যেকোনো সময় তাঁকে বরখাস্ত করতে পারেন। কিন্তু সেটি বাস্তবে রূপ নিতে আরও আট মাস সময় লাগল। টিলারসনকে ভাগ্যবানই বলতে হবে। ট্রাম্প সাধারণত অস্বস্তিকর কাউকে ‘ইউ আর ফায়ারড’ বাক্যটি শুনিয়ে দিতে এত লম্বা সময় নেন না।স্যালি ইয়েটসের কথাই ধরা যাক। ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় তাঁকে এই কথা শুনতে হয়েছিল। অপরাধ? ছয় মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর আমেরিকা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেওয়া ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশটি স্থগিত করার জন্য বিচার বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্যালি। ফলে ২০ জানুয়ারি নেওয়া দায়িত্ব তাঁকে ৩০ জানুয়ারিই ছাড়তে হয়।
ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে যেন মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলা চলছে। যে কেউ যেকোনো সময় আলোয় আসতে পারে। আবার উল্টোটাও সত্য। এই ক্ষেত্রে অ্যান্থনি স্ক্যারামুচ্চির কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ৭৪ দিন দায়িত্ব পালন করে মাইক ডুবকে পদত্যাগ করার পর গত বছরের ২১ জুলাই হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালকের দায়িত্ব নেন তিনি। মাত্র ছয় দিন স্থায়ী হয়েছিলেন তিনি এই পদে। এর মধ্যেই অবশ্য অনেক কিছু তিনি ওলটপালট করেছিলেন। সে অন্য প্রসঙ্গ। স্ক্যারামুচ্চির পর এই পদের দায়িত্ব নেন হোপ হিকস। তিনিও চলে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই মাসে। মিউজিক্যাল চেয়ারের যথার্থ উদাহরণ বলা যায় হোয়াইট হাউসের এই পদকে। শুরু থেকেই টালমাটাল ট্রাম্প প্রশাসন যেন সম্প্রতি আরও বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে রক্ষণশীল শুল্ক আরোপ নিয়ে মতবিরোধকে কেন্দ্র করে এই তো কদিন আগেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক ও প্রেসিডেন্টের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন গ্যারি কোহন। হোয়াইট হাউসে তিনি ছিলেন ৪১১ দিন। যথেষ্ট ভাগ্যবান বলতে হবে তাঁকে। কারণ চলে যাওয়ার ঘোষণার পরও ট্রাম্প তাঁর প্রশংসা করেছেন। এর কিছুদিন আগেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক হোপ হিকস। একই মাসের শুরুতে কেলেঙ্কারি সঙ্গী করে পদত্যাগ করেন হোয়াইট হাউসের স্টাফ সেক্রেটারি রব পোর্টার। তার আগের মাসে হোয়াইট হাউস ছেড়ে যান পাবলিক লিয়াজোঁ অফিসের যোগাযোগ পরিচালক ওমারোসা ম্যানিগোল্ট-নিউম্যান। যদিও তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন ১৩ ডিসেম্বর। ৮ ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউস ছাড়েন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডিনা পাওয়েল। মার্কিন প্রশাসনে এক বছর সময়ের মধ্যে এত বেশিসংখ্যক কর্মকর্তা এর আগে কখনো পদত্যাগ বা বরখাস্ত হননি। কে নেই এই তালিকায়? ট্রাম্পের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কৌশলী ও উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন, এফবিআই–প্রধান জেমস কোমি, হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রিবাস, প্রেসসচিব শন স্পাইসার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন, হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস মন্ত্রী টম প্রাইস, প্রেসিডেন্টের উপসহকারী সেবাস্তিয়ান গোরকা—এঁদের সবাইকে হয় চাপের মুখে পদত্যাগ করতে হয়েছে, নয়তো বরখাস্ত হতে হয়েছে, যেমনটা হলেন রেক্স টিলারসন, সরে দাঁড়ানোর প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায়। হারাধনের সংসারের মতো ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রস্থানই একমাত্র সত্য। আসা-যাওয়ার খেলা চলছে অবিরত। এই খেলা কোথায় থামে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।
No comments