সবাইকে আপন করে নিয়েছিলেন নেপালি শিক্ষার্থীরা by জাহিদ হাসান
মানবসেবার
স্বপ্ন নিয়ে ‘হিমালয় কন্যা’ নেপাল থেকে ছয় বছর আগে চিকিৎসাশাস্ত্র পড়তে
এসেছিলেন তারা। ভর্তি হয়েছিলেন সিলেটের বেসরকারি রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল
কলেজে। এমবিবিএস কোর্সের ফাইনাল প্রুফও শেষ হয় ১১ মার্চ। মাসদুয়েক পর
রেজাল্ট হলেই সার্টিফিকেট পেয়ে যেতেন। তার আগে শেষ পরীক্ষার পরদিন ১২ মার্চ
(সোমবার) তাদের মধ্যে ১৩ জন একসঙ্গে দেশে ফিরছিলেন। কিন্তু নেপালের
কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরে তাদের বহনকারী বিমানটি বিধ্বস্ত হলে আরও অনেকের
সঙ্গে জীবনপ্রদীপ নিভে যায় এই শিক্ষার্থীদের ১১ জনের। আহত হয়ে হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন আছেন দুজন।
রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ১৯তম ব্যাচে ভর্তি হয়েছিলেন ৪০ জন নেপালি। তাদের মধ্যে ১৩ জন ওইদিন দেশে ফিরছিলেন। এ ঘটনায় কলেজটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিষন্ন শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণ করছেন প্রয়াত সহপাঠীদের। তারা বলছেন, দ্রুত বাংলা ভাষা বুঝতে ও বলতে শিখে যাওয়ার কারণে নেপালিরা সহজেই সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারতেন। সহজেই আপন করে নিতে পারতেন সবাইকে।
তাদের এক সহপাঠী তীর্থ তাপস সাহা রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের জন্য অনেক বেদনার ও মর্মান্তিক। আমরা ১১ মার্চ শেষ পরীক্ষা দেই। পরদিন সকালে ওরা ১৩ জন একসঙ্গে বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। এরপরই ঘটে দুর্ঘটনাটি। আমরা আমাদের নেপালি বন্ধু-বান্ধবীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। আমি ইতোমধ্যে শামিরা বেনজারখার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি। কিন্তু কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা নেই আমাদের।’
কলেজের নেপালি শিক্ষার্থী ইতিশ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রবিবার একসঙ্গে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ব্যাচের নেপালি ৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ জন সোমবার ইউএস বাংলার ফ্লাইটে নেপালে যান। পরেই আমরা জানতে পারলাম এই দুঃসংবাদ। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলেও জানান তিনি।
পান্ডে নামের আরেক নেপালি শিক্ষার্থী জানান, স্বদেশি ওই সহপাঠীদের তিনি নিজে তুলে দিয়ে এসেছেন। তারও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ থাকায় তার আর যাওয়া হয়নি। এ ঘটনায় নেপালে তাদের স্বজনরাও ভেঙে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
ইসরাত জাহান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নেপালি শিক্ষার্থীরা খুব কম সময়েই বাংলা ভাষা বুঝতে ও বলতে শিখে যেতেন। ফলে সহজেই তারা সবার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেন।’ নিহত ওই নেপালি শিক্ষার্থীরা তার সিনিয়র ছিলেন বলে জানান ইসরাত।
ওই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন, সঞ্জয় পৌডেল, সঞ্জয়া মহারজন, নেগা মহারজন, অঞ্জলি শ্রেষ্ঠ, পূর্ণিমা লোহানি, শ্রোতা থাপা, মিলি মহারজন, শর্মা শ্রেষ্ঠ, আলজিরা বারাল, চুরু বারাল ও আশ্রা শখিয়া। এছাড়া, শামিরা বেনজারখার ও প্রিঞ্চি ধনি নামের দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে কাঠমান্ডু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনার পর কলেজ ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একসঙ্গে এত শিক্ষার্থীকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান সবাই। ভেঙে পড়েছেন নেপালি শিক্ষার্থীরাও। দেখা হলেও কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না তারা। তবে তাদের সহপাঠীরা জানান, পুরো কলেজ ক্যাম্পাস হাসিখুশিতে মাতিয়ে রাখতেন নেপালি এই শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার আনন্দে বেশ উৎফুল্লও ছিলেন তারা।
কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবেদ হোসেন বলেন, ‘চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় ছুটি কাটাতে নিজ দেশে যাচ্ছিলেন মেডিক্যল কলেজের নেপালি ১৩ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রিঞ্চি ধনি ও শামিরা বেনজারখার সেখানকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
রেজাল্ট হলেই তাদের এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের কথা ছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শেষে ফল প্রকাশের জন্য দুই মাসের মতো সময় লাগে। সাধারণত রেজাল্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনও অ্যাসাইনমেন্ট থাকে না। তাই ওই সময়ে সবাই নিজেদের বাড়িতে চলে যায়। গত রবিবার রাতে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসে করে সিলেট থেকে ঢাকা যান ওই ১৩ শিক্ষার্থী। কলেজের গাড়িতে করে তাদের বাসে তুলে দেওয়া হয়।’
রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ কলেজে বর্তমানে ২৫০ জন নেপালি শিক্ষার্থী রয়েছেন। সদ্য চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হওয়া ১৯তম ব্যাচে ১৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জন ছিলেন নেপালি।
সোমবার (১৩ মার্চ) নেপালের কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটিতে চার ক্রুসহ ৩৬ জন বাংলাদেশের। ওই ফ্লাইটের মোট ৭১ জন আরোহীর মধ্যে ৩৩ জন নেপালের এবং একজন করে মালদ্বীপ ও চীনের নাগরিক ছিলেন।
রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ১৯তম ব্যাচে ভর্তি হয়েছিলেন ৪০ জন নেপালি। তাদের মধ্যে ১৩ জন ওইদিন দেশে ফিরছিলেন। এ ঘটনায় কলেজটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিষন্ন শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণ করছেন প্রয়াত সহপাঠীদের। তারা বলছেন, দ্রুত বাংলা ভাষা বুঝতে ও বলতে শিখে যাওয়ার কারণে নেপালিরা সহজেই সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারতেন। সহজেই আপন করে নিতে পারতেন সবাইকে।
তাদের এক সহপাঠী তীর্থ তাপস সাহা রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের জন্য অনেক বেদনার ও মর্মান্তিক। আমরা ১১ মার্চ শেষ পরীক্ষা দেই। পরদিন সকালে ওরা ১৩ জন একসঙ্গে বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। এরপরই ঘটে দুর্ঘটনাটি। আমরা আমাদের নেপালি বন্ধু-বান্ধবীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। আমি ইতোমধ্যে শামিরা বেনজারখার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি। কিন্তু কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা নেই আমাদের।’
কলেজের নেপালি শিক্ষার্থী ইতিশ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রবিবার একসঙ্গে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ব্যাচের নেপালি ৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ জন সোমবার ইউএস বাংলার ফ্লাইটে নেপালে যান। পরেই আমরা জানতে পারলাম এই দুঃসংবাদ। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলেও জানান তিনি।
পান্ডে নামের আরেক নেপালি শিক্ষার্থী জানান, স্বদেশি ওই সহপাঠীদের তিনি নিজে তুলে দিয়ে এসেছেন। তারও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ থাকায় তার আর যাওয়া হয়নি। এ ঘটনায় নেপালে তাদের স্বজনরাও ভেঙে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
ইসরাত জাহান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নেপালি শিক্ষার্থীরা খুব কম সময়েই বাংলা ভাষা বুঝতে ও বলতে শিখে যেতেন। ফলে সহজেই তারা সবার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেন।’ নিহত ওই নেপালি শিক্ষার্থীরা তার সিনিয়র ছিলেন বলে জানান ইসরাত।
ওই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন, সঞ্জয় পৌডেল, সঞ্জয়া মহারজন, নেগা মহারজন, অঞ্জলি শ্রেষ্ঠ, পূর্ণিমা লোহানি, শ্রোতা থাপা, মিলি মহারজন, শর্মা শ্রেষ্ঠ, আলজিরা বারাল, চুরু বারাল ও আশ্রা শখিয়া। এছাড়া, শামিরা বেনজারখার ও প্রিঞ্চি ধনি নামের দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে কাঠমান্ডু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনার পর কলেজ ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একসঙ্গে এত শিক্ষার্থীকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান সবাই। ভেঙে পড়েছেন নেপালি শিক্ষার্থীরাও। দেখা হলেও কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন না তারা। তবে তাদের সহপাঠীরা জানান, পুরো কলেজ ক্যাম্পাস হাসিখুশিতে মাতিয়ে রাখতেন নেপালি এই শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার আনন্দে বেশ উৎফুল্লও ছিলেন তারা।
কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবেদ হোসেন বলেন, ‘চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় ছুটি কাটাতে নিজ দেশে যাচ্ছিলেন মেডিক্যল কলেজের নেপালি ১৩ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রিঞ্চি ধনি ও শামিরা বেনজারখার সেখানকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
রেজাল্ট হলেই তাদের এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের কথা ছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শেষে ফল প্রকাশের জন্য দুই মাসের মতো সময় লাগে। সাধারণত রেজাল্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনও অ্যাসাইনমেন্ট থাকে না। তাই ওই সময়ে সবাই নিজেদের বাড়িতে চলে যায়। গত রবিবার রাতে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসে করে সিলেট থেকে ঢাকা যান ওই ১৩ শিক্ষার্থী। কলেজের গাড়িতে করে তাদের বাসে তুলে দেওয়া হয়।’
রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ কলেজে বর্তমানে ২৫০ জন নেপালি শিক্ষার্থী রয়েছেন। সদ্য চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হওয়া ১৯তম ব্যাচে ১৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জন ছিলেন নেপালি।
সোমবার (১৩ মার্চ) নেপালের কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটিতে চার ক্রুসহ ৩৬ জন বাংলাদেশের। ওই ফ্লাইটের মোট ৭১ জন আরোহীর মধ্যে ৩৩ জন নেপালের এবং একজন করে মালদ্বীপ ও চীনের নাগরিক ছিলেন।
No comments