নারীর অলঙ্কার এবং... by শামীমুল হক
এক
দেশে এক রাজা ছিলেন। তার সাত রানি। কিন্তু রাজা ছোট রানিকে খুব বেশি
ভালোবাসতেন। এতে অন্য ছয় রানি ক্ষেপে যান। তারা ছোট রানিকে শায়েস্তা করার
পরিকল্পনা করতে থাকেন। কিন্তু রাজা বাড়িতে থাকতে এটা কখনোই সম্ভব নয়। তাই
তাদের অপেক্ষা রাজা বেড়াতে যাওয়ার। কয়েকদিন পর রাজা অন্য রাজ্যের অতিথি হয়ে
বেশ কদিনের জন্য নিজ রাজ্য ত্যাগ করেন। এদিকে রাজাবিহীন ছয় রানি তাদের
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। কি করা যায়? একেক রানির একেক
পরামর্শ। শেষ পর্যন্ত সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন ছোট রানিকে বিশ্রি বানিয়ে
দিতে হবে। রাজা ফিরে এসে যেন তার দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যেই কথা সেই
কাজ। ছয় রানি মিলে ছোট রানির নাক, কান ছিদ্র করে সেখানে মোটা লোহার রিং
পরিয়ে দেয়। ছোট রানি অসহায়। ওদিকে অন্য রাজ্য সফর শেষে রাজা নিজ রাজ্যে
ফেরেন। এসেই ছোট রানিকে ডাকেন। অপর ছয় রানি মহা খুশি। রাজা এবার ঝেটিয়ে
বিদায় করবেন ছোট রানিকে। ছয় রানি আড়ালে বসে আছেন। ছোট রানি সামনে গেলে রাজা
কিভাবে তাকে বিদায় করে সে দৃশ্য দেখার জন্য। রাজার ডাক পেয়ে ছোট রানি ভয়ে
ভয়ে রাজার সামনে হাজির হন। রাজাতো তাকে দেখে অবাক। এত সুন্দর করে কে
সাজিয়েছে রানিকে? মুখে বলে উঠলেন বাহ্ চমৎকারতো। এত সুন্দর কেন লাগছে
তোমাকে। কাছে ডেকে নেন। জড়িয়ে ধরেন। নাক ও কানে রিং দেয়ায় রানিকে এত সুন্দর
লাগছে। কিন্তু এগুলো যে লোহার। সঙ্গে সঙ্গে উজিরকে ডাকেন। নির্দেশ দেন
রানির জন্য হীরার রিং বানাতে। যাতে থাকবে কারুকাজ। নির্দেশ মতো দ্রুত তা
তৈরি করে আনা হয়। রানিকে পরানো হয়। আরে ছোট রানিতো সত্যিই আগের চেয়ে অনেক
সুন্দর। অলঙ্কার তাকে অন্য সবার চেয়ে আলাদা সৌন্দর্য দিয়েছে। এসব দেখে হতাশ
ছয় রানি। তারাও এখন নাক ও কান ছিদ্র করে অলঙ্কার পরেছে। সেই থেকে
অলঙ্কারের যাত্রা শুরু। অলঙ্কার মানে হলো সৌন্দর্য বাড়ানো। নারীর সৌন্দর্য
যেমন তার অলঙ্কার গহনা। তেমনি রাষ্ট্রের অলঙ্কার হলো প্রেসিডেন্ট। এখনো
ব্রিটেনে রানির যুগ রয়েছে অলঙ্কার হিসেবে। বিভিন্ন দেশে রাজা রয়েছে
অলঙ্কারস্বরূপ।
এ মুহূর্তে শিল্পীর মুখের সেই গানটি খুব মনে পড়ছে- যেমনি নাচাও তেমনি নাচি পুতুলের কি দোষ? কবির এ বয়ান শিল্পীর কণ্ঠে সুমধুর হয়ে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। একসময় এ গানটি দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। আসলেই পুতুলকে কে না ভালোবাসে? শিশুরাতো পুতুল নিয়ে খেলা নয় শুধু, ঘুমানোর সময় পাশে নিয়ে ঘুমায়। কারো কারো ঘরে পুতুল শোপিস হিসেবে সাজানো রয়েছে। বর্তমান বাজারে এই পুতুলের মাধ্যমে গান বলানো হচ্ছে। কথা বলছে অনর্গল। শুধু প্রয়োজন ব্যাটারির। ব্যাটারি ফিট করলে এই পুতুল তার কার্যক্রম শুরু করে। পুতুল হলো সৌন্দর্যের অলঙ্কার। এরকমই রাষ্ট্রের অলঙ্কার হলেন প্রেসিডেন্ট। যিনি মহামান্য। কিন্তু তার পাওয়ার বা ক্ষমতা সেই পুতুলের মতোই। রাষ্ট্রপ্রধান হলেও প্রেসিডেন্ট সরকারের বাইরে যেতে পারেন না। অনেক কিছুই তিনি করতে পারবেন, তবে তা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে। মূল কথা- প্রেসিডেন্টের ব্যাটারি হলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যা বলবেন, যেভাবে বলবেন তিনি সেভাবেই চলবেন। হাঁটবেন। দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ সুন্দর করে বিষয়টিকে বিভন্ন সভা-সমাবেশে উপস্থাপন করেন। তার যে ক্ষমতা নেই সেটা তিনি নিজেই মজা করে কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশ করেন। এই রসিকতা দিয়েই প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। দেখতে দেখতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ তার পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করে ফেলেছেন। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এ নির্বাচন নিয়ে তেমন তোড়জোড় হয় না দেশে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতারও প্রয়োজন নেই। সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট বানান বলে সরকারি দল অনায়াসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বৈতরণী পার হন। তবে যেভাবেই নির্বাচিত হোক প্রেসিডেন্ট তিনি যে শুধু অলঙ্কার, কিংবা পুতুল তা সবাইকে স্বীকার করে নিতে হবে। এ জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। কারণ, প্রেসিডেন্ট তারা ভোট দিয়ে বানান না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন সংসদ। সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। বাংলাদেশে সাধারণত সরকারে যে দল থাকে, সে দল যাকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেন তিনিই হন প্রেসিডেন্ট। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনো পরিবেশও নেই। তারপরও সচেতন মানুষ দৃষ্টি রাখেন সেদিকে। দেশে দেশে এমন অলঙ্কারিক পদ হিসেবে রাজা, রাষ্ট্রপতি, প্রেসিডেন্ট কিংবা রানি রয়েছেন। তারা রাষ্ট্রের শোভা বর্ধন করেন।
দুই: পৃথিবীতে হায়? সে বেশি চায়/ আছে যার ভূরি ভূরি/ রাজার হস্ত/ করে সমস্ত/ কাঙ্গালের ধন চুরি। যথার্থই বলেছেন কবি। চলার পথে কবির এ কাব্য কত যে মধুর তা সবাই উপলব্ধি করছেন। বাস্তবেও দেখছেন প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত। রাস্তায় বেরুলে ছিনতাইকারী, মলম পার্টি, ব্লেড পার্টি, পকেটমার এমনকি থাবা পার্টির ভয়। যেকোনো সময় তারা তাদের কৌশল প্রয়োগ করে হস্তগত করতে পারে অন্যের ধন, অর্থ। কেউ কেউ এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। আবার রাজপথে, ফুটপাথে অনেক ভিক্ষুক আছেন যারা কোটিপতি। ঢাকায় তাদের একাধিক বাড়ি রয়েছে। ভবন রয়েছে। কারো কারো সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। কারো সন্তান সম্মানজনক চাকরি করছেন। কেউ কেউ মেয়ে বিয়ে দিয়েছে লাখ লাখ টাকা খরচ করে। এত কিছুর পরও ওইসব ভিক্ষুক এখনো রাজপথে থালা নিয়ে বসেন। ভিক্ষা করেন। বাসায় থাকতে নাকি তাদের ভালো লাগে না। ঘুমের মধ্যেও মাঝে মাঝে বলে ওঠেন- ‘মাগো কিছু দিয়া যান।’ দীর্ঘদিনের অভ্যাস ত্যাগ করা খুব কঠিন। ওই ছেলের মতো। ওই ছেলে বিয়ে করেছে। ঘরে নতুন বউ। প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রাতে বাড়ি ফেরে। একদিন বউ তাকে বলছে, তুমি কি কর। ছেলে জবাব দেয় চাকরি করি। বড় চাকরি। ওগো বলো না কি চাকরি? ছেলে কোনো জবাব দেয় না। এভাবে দিন চলতে থাকে। বেশ কিছু দিন পর একরাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দু’জন। হঠাৎ চিৎকারে বউ ঘুম থেকে জেগে উঠেন। দেখেন স্বামী তার চিৎকার করে বলছেন- ওই লাগেনি জুতা পালিশ...। লাগেনি জুতা পালিশ...। বউয়ের আর বুঝতে বাকি রইলো না তার স্বামী কি করেন। দিনে যা করেন রাতে স্বপ্নের মধ্যেও স্বামী বেচারা তা দেখছেন। তাই ডাকছেন ‘ওই লাগেনি জুতা পালিশ...।’ আসলে অভ্যাস কখনও পরিবর্তন হয় না। এমনকি তা আপনজনের কাছে লুকাতে গেলেও তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। কখনো স্বপ্নে কিংবা কখনো মনের অজান্তেই তা প্রকাশ করেন। রাজধানী ঢাকার অলিগলিতে এখন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের ছড়াছড়ি। সব কেন্দ্রই চলছে বেশ ভালোভাবেই। অথচ একসময় সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ছিল একটি। তা তেজগাঁওয়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এসব কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসক্তরা কি সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন। না। বেশির ভাগই সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারেননি। কারণ, এসব কেন্দ্রে মাস কয়েক থাকার পর বাইরে বেরিয়ে এসে ফের তারা অন্ধকার জগতে পা বাড়ান। এমনও শোনা যায়, কোনো কোনো নিরাময় কেন্দ্রে নিজেরাই আসক্তদের নেশা সরবরাহ করে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। পুরনো অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন না তারা। নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়েও সন্তানদের সুস্থ করতে পারছেন না অভিভাবকরা। এমন কত অভ্যাস যে গড়ে তোলে মানুষ। ঘুষখোর অফিসার জীবনে কোটি কোটি টাকা ঘুষ খেয়েও তার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন না। বাড়ি-গাড়ি, ধন-দৌলত করেও তাদের আফসোস থেকে যায়। তাইতো বনখেকোর বাসার চালের ড্রাম, বালিশের ভেতর থেকে পাওয়া যায় অর্থ আর অর্থ। যে টাকা দেখে সারাদেশ হয় হতবাক। মিডিয়া খবর নিয়ে দেখেছে এত টাকার মালিক হলেও বনখেকো তার মাকে ভরণপোষণ করতো না। ভাঙা ঘরেই বসবাস করতে হয়েছে তাকে। এ কাহিনী শুনেই সারা দেশ ছিঃ ছিঃ করেছে। দেশের মানুষ যতই ছিঃ ছিঃ করুক এতে তাদের কিছুই যায় আসে না। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ফোকলা করে হাজার হাজার কোটি টাকা গিলে খেয়েছে। কখনো ভুয়া এলসি, কখনো নকল কাগজ সরবরাহ করে একের পর এক টাকা তুলে নিয়েছে তারা। বাসের কন্ডাক্টরও নাকি সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। ব্যাংকের কর্ণধাররা পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে ব্যাংকগুলোকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করেছে। এইতো গতকাল এক ব্যাংকারের সঙ্গে দেখা। তিনি দুঃখ করে বললেন, ব্যাংক থেকে প্রচ- চাপ। একেকজনকে কোটি টাকা টার্গেট দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এফডিআর, মোটা অঙ্কের টাকা জমা রাখাসহ নানা সিস্টেমে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখতে গ্রাহকদের উদ্বুব্ধ করতে। কি করব বুঝে পাচ্ছি না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকে এ অবস্থায় ব্যাংকে টাকা রাখছেন না। রাজনীতিও উত্তপ্ত। কি হয় দেশে তা নিয়ে চিন্তিত মানুষ। কিন্তু কেউতো অভ্যাস বদলায় না। বদলাতে চায় না। সবাই মনে করে তিনি যা করছেন, তা-ই ভালো। এ কারণেই হয়তো ‘কয়লা যায় না ধুলে, অভ্যাস যায় না মরলে’ প্রবাদ বাক্যটি সমাজে প্রচলিত। আর তাইতো কারো কারো জীবনে অভ্যাস পরিণত হয় বদ অভ্যাসে।
এ মুহূর্তে শিল্পীর মুখের সেই গানটি খুব মনে পড়ছে- যেমনি নাচাও তেমনি নাচি পুতুলের কি দোষ? কবির এ বয়ান শিল্পীর কণ্ঠে সুমধুর হয়ে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। একসময় এ গানটি দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। আসলেই পুতুলকে কে না ভালোবাসে? শিশুরাতো পুতুল নিয়ে খেলা নয় শুধু, ঘুমানোর সময় পাশে নিয়ে ঘুমায়। কারো কারো ঘরে পুতুল শোপিস হিসেবে সাজানো রয়েছে। বর্তমান বাজারে এই পুতুলের মাধ্যমে গান বলানো হচ্ছে। কথা বলছে অনর্গল। শুধু প্রয়োজন ব্যাটারির। ব্যাটারি ফিট করলে এই পুতুল তার কার্যক্রম শুরু করে। পুতুল হলো সৌন্দর্যের অলঙ্কার। এরকমই রাষ্ট্রের অলঙ্কার হলেন প্রেসিডেন্ট। যিনি মহামান্য। কিন্তু তার পাওয়ার বা ক্ষমতা সেই পুতুলের মতোই। রাষ্ট্রপ্রধান হলেও প্রেসিডেন্ট সরকারের বাইরে যেতে পারেন না। অনেক কিছুই তিনি করতে পারবেন, তবে তা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে। মূল কথা- প্রেসিডেন্টের ব্যাটারি হলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যা বলবেন, যেভাবে বলবেন তিনি সেভাবেই চলবেন। হাঁটবেন। দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ সুন্দর করে বিষয়টিকে বিভন্ন সভা-সমাবেশে উপস্থাপন করেন। তার যে ক্ষমতা নেই সেটা তিনি নিজেই মজা করে কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশ করেন। এই রসিকতা দিয়েই প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। দেখতে দেখতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ তার পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করে ফেলেছেন। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এ নির্বাচন নিয়ে তেমন তোড়জোড় হয় না দেশে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতারও প্রয়োজন নেই। সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট বানান বলে সরকারি দল অনায়াসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বৈতরণী পার হন। তবে যেভাবেই নির্বাচিত হোক প্রেসিডেন্ট তিনি যে শুধু অলঙ্কার, কিংবা পুতুল তা সবাইকে স্বীকার করে নিতে হবে। এ জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। কারণ, প্রেসিডেন্ট তারা ভোট দিয়ে বানান না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন সংসদ। সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। বাংলাদেশে সাধারণত সরকারে যে দল থাকে, সে দল যাকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেন তিনিই হন প্রেসিডেন্ট। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনো পরিবেশও নেই। তারপরও সচেতন মানুষ দৃষ্টি রাখেন সেদিকে। দেশে দেশে এমন অলঙ্কারিক পদ হিসেবে রাজা, রাষ্ট্রপতি, প্রেসিডেন্ট কিংবা রানি রয়েছেন। তারা রাষ্ট্রের শোভা বর্ধন করেন।
দুই: পৃথিবীতে হায়? সে বেশি চায়/ আছে যার ভূরি ভূরি/ রাজার হস্ত/ করে সমস্ত/ কাঙ্গালের ধন চুরি। যথার্থই বলেছেন কবি। চলার পথে কবির এ কাব্য কত যে মধুর তা সবাই উপলব্ধি করছেন। বাস্তবেও দেখছেন প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত। রাস্তায় বেরুলে ছিনতাইকারী, মলম পার্টি, ব্লেড পার্টি, পকেটমার এমনকি থাবা পার্টির ভয়। যেকোনো সময় তারা তাদের কৌশল প্রয়োগ করে হস্তগত করতে পারে অন্যের ধন, অর্থ। কেউ কেউ এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। আবার রাজপথে, ফুটপাথে অনেক ভিক্ষুক আছেন যারা কোটিপতি। ঢাকায় তাদের একাধিক বাড়ি রয়েছে। ভবন রয়েছে। কারো কারো সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। কারো সন্তান সম্মানজনক চাকরি করছেন। কেউ কেউ মেয়ে বিয়ে দিয়েছে লাখ লাখ টাকা খরচ করে। এত কিছুর পরও ওইসব ভিক্ষুক এখনো রাজপথে থালা নিয়ে বসেন। ভিক্ষা করেন। বাসায় থাকতে নাকি তাদের ভালো লাগে না। ঘুমের মধ্যেও মাঝে মাঝে বলে ওঠেন- ‘মাগো কিছু দিয়া যান।’ দীর্ঘদিনের অভ্যাস ত্যাগ করা খুব কঠিন। ওই ছেলের মতো। ওই ছেলে বিয়ে করেছে। ঘরে নতুন বউ। প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রাতে বাড়ি ফেরে। একদিন বউ তাকে বলছে, তুমি কি কর। ছেলে জবাব দেয় চাকরি করি। বড় চাকরি। ওগো বলো না কি চাকরি? ছেলে কোনো জবাব দেয় না। এভাবে দিন চলতে থাকে। বেশ কিছু দিন পর একরাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দু’জন। হঠাৎ চিৎকারে বউ ঘুম থেকে জেগে উঠেন। দেখেন স্বামী তার চিৎকার করে বলছেন- ওই লাগেনি জুতা পালিশ...। লাগেনি জুতা পালিশ...। বউয়ের আর বুঝতে বাকি রইলো না তার স্বামী কি করেন। দিনে যা করেন রাতে স্বপ্নের মধ্যেও স্বামী বেচারা তা দেখছেন। তাই ডাকছেন ‘ওই লাগেনি জুতা পালিশ...।’ আসলে অভ্যাস কখনও পরিবর্তন হয় না। এমনকি তা আপনজনের কাছে লুকাতে গেলেও তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। কখনো স্বপ্নে কিংবা কখনো মনের অজান্তেই তা প্রকাশ করেন। রাজধানী ঢাকার অলিগলিতে এখন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের ছড়াছড়ি। সব কেন্দ্রই চলছে বেশ ভালোভাবেই। অথচ একসময় সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ছিল একটি। তা তেজগাঁওয়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এসব কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসক্তরা কি সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন। না। বেশির ভাগই সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারেননি। কারণ, এসব কেন্দ্রে মাস কয়েক থাকার পর বাইরে বেরিয়ে এসে ফের তারা অন্ধকার জগতে পা বাড়ান। এমনও শোনা যায়, কোনো কোনো নিরাময় কেন্দ্রে নিজেরাই আসক্তদের নেশা সরবরাহ করে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। পুরনো অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন না তারা। নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়েও সন্তানদের সুস্থ করতে পারছেন না অভিভাবকরা। এমন কত অভ্যাস যে গড়ে তোলে মানুষ। ঘুষখোর অফিসার জীবনে কোটি কোটি টাকা ঘুষ খেয়েও তার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন না। বাড়ি-গাড়ি, ধন-দৌলত করেও তাদের আফসোস থেকে যায়। তাইতো বনখেকোর বাসার চালের ড্রাম, বালিশের ভেতর থেকে পাওয়া যায় অর্থ আর অর্থ। যে টাকা দেখে সারাদেশ হয় হতবাক। মিডিয়া খবর নিয়ে দেখেছে এত টাকার মালিক হলেও বনখেকো তার মাকে ভরণপোষণ করতো না। ভাঙা ঘরেই বসবাস করতে হয়েছে তাকে। এ কাহিনী শুনেই সারা দেশ ছিঃ ছিঃ করেছে। দেশের মানুষ যতই ছিঃ ছিঃ করুক এতে তাদের কিছুই যায় আসে না। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ফোকলা করে হাজার হাজার কোটি টাকা গিলে খেয়েছে। কখনো ভুয়া এলসি, কখনো নকল কাগজ সরবরাহ করে একের পর এক টাকা তুলে নিয়েছে তারা। বাসের কন্ডাক্টরও নাকি সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। ব্যাংকের কর্ণধাররা পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে ব্যাংকগুলোকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করেছে। এইতো গতকাল এক ব্যাংকারের সঙ্গে দেখা। তিনি দুঃখ করে বললেন, ব্যাংক থেকে প্রচ- চাপ। একেকজনকে কোটি টাকা টার্গেট দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এফডিআর, মোটা অঙ্কের টাকা জমা রাখাসহ নানা সিস্টেমে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখতে গ্রাহকদের উদ্বুব্ধ করতে। কি করব বুঝে পাচ্ছি না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকে এ অবস্থায় ব্যাংকে টাকা রাখছেন না। রাজনীতিও উত্তপ্ত। কি হয় দেশে তা নিয়ে চিন্তিত মানুষ। কিন্তু কেউতো অভ্যাস বদলায় না। বদলাতে চায় না। সবাই মনে করে তিনি যা করছেন, তা-ই ভালো। এ কারণেই হয়তো ‘কয়লা যায় না ধুলে, অভ্যাস যায় না মরলে’ প্রবাদ বাক্যটি সমাজে প্রচলিত। আর তাইতো কারো কারো জীবনে অভ্যাস পরিণত হয় বদ অভ্যাসে।
No comments