যাদের গল্প কেউ শোনে না...
পৃথিবীতে
কয়েকশ’ কোটি মানুষের বসবাস। সবার পক্ষে বৈশ্বিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের
বক্তব্য তুলে ধরাটা কঠিন। কিন্তু লন্ডন-ভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান
সেই কঠিন কাজকে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে লড়ছে। ‘অন আওয়ার রাডার’ নামে এই
প্রতিষ্ঠান বিশ্বের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের মানুষজনকে একত্রিত করতে চায়।
প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপক পল মাইলস বলেন,‘আমরা প্রবেশের পথে
প্রতিবন্ধকতার উচ্চতা কমিয়ে আনতে চাই।’
২০১২ সালে সাংবাদিক লিবি পাওয়েল আরও কয়েকজনকে নিয়ে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠাতা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অন আওয়ার রাডার কাজ করেছে সিয়েরা লিওন, মালয়েশিয়া, ভারত ও ঘানা সহ বেশ কয়েকটি দেশে। গতানুগতিক সাংবাদিকতা যেসব দেশে বা অঞ্চলে পৌঁছতে পারে না, ঠিক সেখানকার গল্প মূলধারায় তুলে আনাই এই সংগঠনটির উদ্দেশ্য। অন আওয়ার রাডারে’র গল্প তুলে ধরেছে বিখ্যাত প্রযুক্তি বিষয়ক সাময়িকী ওয়ার্ল্ড ইউকে’র একটি প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, লন্ডনের এক্সমাউথ মার্কেটের কাছে একটি কফি শপের ওপর তলায় সংগঠনটির কার্যালয়। কাজ করেন ছয় জনের একটি দল। দলে সাংবাদিক দুই জন। একজন করে সিস্টেম আর্কিটেক্ট ও ডিজাইনার। অপারেশন্স ও ফিন্যান্সের প্রধান হিসেবে কাজ করেন অবশিষ্ট দুই জন। অন আওয়ার রাডার যতগুলো প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছে, তার উদ্দেশ্য একটাই। সেটা হলো, সব মানুষের কথা মূলধারায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কী কী, তা বের করা। এরপর এই অন্তরায় অতিক্রম করার নকশা তৈরি করা।
সংগঠনটির প্রথম প্রকল্প ছিল রিপোর্টারদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে সিয়েরা লিওনে অনুষ্ঠিত ২০১২ সালের সাধারণ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করা। পল মাইলস বলেন, ‘সিয়েরা লিওনের লোকজন বিদ্যুৎ পান সামান্যই। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তাদের নেই। তারা ব্যবহার করেন মান্ধাতা আমলের নোকিয়া ফোন, যেটাতে একবার চার্জ দিলেই সপ্তাহ কেটে যায়। তারা নাগরিক সাংবাদিক নন যে প্রতিদিন টুইটারে নিজেদের সমস্যার কথা জানান দিতে পারবেন।’
তাদের এই সমস্যা সমাধানে অন আওয়ার রাডার দল স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে রিপোর্টিং-এর ওপর প্রশিক্ষণ দেন। তারপর একটি এসএমএস ও ভয়েস হাব তৈরি করেন। এর ফলে শুধু একটি টেক্সট মেসেজ পাঠানো বা কল করার অর্থ ব্যয় করে সিয়েরা লিওন থেকে যে কারো জন্যই প্রতিবেদন পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়। সব রিপোর্ট একটি অনলাইন সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকে, যেটি পর্যবেক্ষণ করে লন্ডনের ওই দলটি।
প্রথমে শুধুমাত্র নির্বাচন কভার করার জন্য এই প্রকল্প তৈরি হলেও, পরে এই প্রকল্পের আরও উপযোগিতা ধরা পড়ে। যেমন, দুই বছর পর যখন সিয়েরা লিওনে ইবোলা আঘাত হানলো, অন আওয়ার রাডারের তৈরি করা ওই রিপোর্টিং নেটওয়ার্ক যেন প্রাণ ফিরে পেল। মূলধারার গণমাধ্যমকে যেখানে সিয়েরা লিওনের খবর পেতে কসরত করতে হতো, সেখানে অন আওয়ার রাডার প্রাণঘাতি ভাইরাসে আক্রান্ত গোটা সিয়েরা লিওনের তাজা খবর পাচ্ছিল। মাইলস বলেন, ‘ইবোলা সংকটের সময় প্রথাগত সাংবাদিকরা সিয়েরা লিওনের ভেতরের খবর পেতে সংগ্রাম করছিলেন। অথচ, আমরা দেশটির সবচেয়ে প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চলে বসবাসকারী সবচেয়ে ভয়াবহভাবে ইবোলা আক্রান্ত কিছু সম্প্রদায় থেকে সরাসরি নিয়মিত রিপোর্ট পাচ্ছিলাম। সেসব ছিল একেবারে তাজা ও বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্টিং।’
অন আওয়ার রাডারের তৈরি করা ওই সিস্টেমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রশ্ন করার সুযোগও ছিল। লন্ডন থেকে সাংবাদিকরা বার্তা পাঠাতে পারেন। আরও তথ্যের জন্য অনুরোধ করতে পারেন। অন আওয়ার রাডারের সিস্টেমে যেসব প্রতিবদন জমা হতো, সেগুলো সঠিকভাবে সম্পাদনা করা হতো। এরপর লিখিত, অডিও ও ভিডিও প্রতিবেদনের ভা-ার নিয়ে অন আওয়ার রাডার যোগাযোগ করে আল জাজিরা, বিবিসি, চ্যানেল ফোর, এল পেইস, লা পারিসিয়ানের মতো মূলধারার গণমাধ্যমকে। এভাবে লাখ লাখ দর্শক, শ্রোতা ও পাঠকের কাছে পৌছে যেত বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের সমস্যার কথা।
সিয়েরা লিওনের ওই পর্বের পর, সংগঠনটি বুঝতে পারে, তাদের তৈরি করা প্ল্যাটফর্ম একেবারে ত্রুটিমুক্ত নয়। সব ধরণের প্রতিবেদন এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পাঠানো যায় না। তাই সংগঠনটির পরবর্তী প্রকল্প ছিল একেবারে আলাদা। কমিক রিলিফ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে, অন আওয়ার রাডার যুক্তরাজ্যে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত মানুষজনকে তাদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দেয়। এজন্য ৪০টি ফোন বিশেষভাবে তৈরি করে সংগঠনটি। এই ফোনে শুধু ৫টি বাটন ছিল। চালু করা, রিপোর্ট করা, উত্তর দেওয়া, শব্দ বাড়ানো বা কমানোর বাটন। মাইলস বলেন, ‘এই ফোন ব্যবহার করাটা কঠিন কিছু নয়। এটি যতটা সম্ভব সহজে ব্যবহার করতে ডিজাইন করা হয়েছে।’ এই প্রকল্পের আওতায় যেসব ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিলোপ রোগে আক্রান্ত রোগী এই ফোন ব্যবহার করতেন, তারা একটি বাটন চেপেই তাদের কথা বলতে পারতেন। কেউ তাদের এই ফোন ধরতো না। কিন্তু তারা নিজের সারাদিনের কথা বা নিজের মনের কথা বলতে পারতেন একটি বাটন চেপে। তাদের কথা সংরক্ষিত থাকতো। তাদের দৈনন্দিন গল্প নিয়েই ২০১৬ সালে নির্মিত হয় ডিমেনশিয়া ডায়রিজ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রটি অন আওয়ার রাডার থেকে কিনে নেয় দ্য গার্ডিয়ান।
বর্তমানে যেসব প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটি, তার মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার দেশ টোগোর ট্রোকোসি দাসপ্রথা নিয়ে রিপোর্টিং। রয়েছে বাংলাদেশের নারী গার্মেন্ট কর্মীদের জীবনযাপন নিয়ে প্রতিবেদন। রয়েছে নাইজার বদ্বীপে গ্যাস উদগীরণের ফলে কী প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা। এছাড়া যুক্তরাজ্যের ব্ল্যাকপুলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিয়ে একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটি। এই প্রকল্পের জন্য, মাইলস ও তার সহকর্মীরা ফোন বক্সের মতো বুথের নকশা তৈরি করছেন। এই বুথের ভেতর ঢুকে একাকী মানুষজন নিজের জীবনের গল্প বলতে পারবেন নিরবে, নিভৃতে। এই এলাকায় কাজ করতে গিয়ে মাইলস লক্ষ্য করেছেন যে, এসব বুথে আসা লোকজন অন্য মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই এখানে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই বুথে মানুষ খুব ধীরে প্রবেশ করে আর বের হয়। তাদের এখানে আসার একটি কারণ হলো অন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা হয়। কিছুক্ষণ বসা ও হাসাহাসি করা। এ কারণে আমরা আরও মজার ও ঘনিষ্ঠ উপায়ে মানুষকে তার গল্প বলতে উৎসাহিত করতে চাই।’ বুথের ভেতরে একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ স্ক্রিনও যুক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেকের জন্য এখানে কিছু ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন থাকে প্রতিদিন।
অন্য প্রকল্পের মতোই, ব্ল্যাকপুলে অন আওয়ার রাডারের এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো সেসব মানুষকে নিজের গল্প বলার সুযোগ করে দেওয়া, যারা কিনা ডিজিটাল বিভাজনের ভুল পাশে পড়ে গেছেন। মাইলস বলেন, এখন আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের থেকে যেসব কনটেন্ট দেখি, সেগুলোতে কিছু টুইটস বা ফেসবুক পোস্ট ছাড়া কিছু দেখি না। হয়তো বাজেটহীন একটি অনলাইন নিউজ টিম এটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা। তবুও তো তাদের সেই সুযোগ আছে।
মাইলসের আশা, ‘একো চ্যাম্বারে’র এই যুগে, কিছু মানুষ থাকবেন যারা চিরাচরিত গ-ির বাইরে গিয়ে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে চাইবেন। তার ভাষ্য, ‘যেসব কমিউনিটির সঙ্গে আমরা কাজ করি, তাদের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস কম যে, তাদের গল্পও বলার মতো একেকটি গল্প। তাদের কথা অন্যরা শুনছে, এমন দৃশ্যপটে তারা অভ্যস্ত নন।’
২০১২ সালে সাংবাদিক লিবি পাওয়েল আরও কয়েকজনকে নিয়ে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠাতা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অন আওয়ার রাডার কাজ করেছে সিয়েরা লিওন, মালয়েশিয়া, ভারত ও ঘানা সহ বেশ কয়েকটি দেশে। গতানুগতিক সাংবাদিকতা যেসব দেশে বা অঞ্চলে পৌঁছতে পারে না, ঠিক সেখানকার গল্প মূলধারায় তুলে আনাই এই সংগঠনটির উদ্দেশ্য। অন আওয়ার রাডারে’র গল্প তুলে ধরেছে বিখ্যাত প্রযুক্তি বিষয়ক সাময়িকী ওয়ার্ল্ড ইউকে’র একটি প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, লন্ডনের এক্সমাউথ মার্কেটের কাছে একটি কফি শপের ওপর তলায় সংগঠনটির কার্যালয়। কাজ করেন ছয় জনের একটি দল। দলে সাংবাদিক দুই জন। একজন করে সিস্টেম আর্কিটেক্ট ও ডিজাইনার। অপারেশন্স ও ফিন্যান্সের প্রধান হিসেবে কাজ করেন অবশিষ্ট দুই জন। অন আওয়ার রাডার যতগুলো প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছে, তার উদ্দেশ্য একটাই। সেটা হলো, সব মানুষের কথা মূলধারায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কী কী, তা বের করা। এরপর এই অন্তরায় অতিক্রম করার নকশা তৈরি করা।
সংগঠনটির প্রথম প্রকল্প ছিল রিপোর্টারদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে সিয়েরা লিওনে অনুষ্ঠিত ২০১২ সালের সাধারণ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করা। পল মাইলস বলেন, ‘সিয়েরা লিওনের লোকজন বিদ্যুৎ পান সামান্যই। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তাদের নেই। তারা ব্যবহার করেন মান্ধাতা আমলের নোকিয়া ফোন, যেটাতে একবার চার্জ দিলেই সপ্তাহ কেটে যায়। তারা নাগরিক সাংবাদিক নন যে প্রতিদিন টুইটারে নিজেদের সমস্যার কথা জানান দিতে পারবেন।’
তাদের এই সমস্যা সমাধানে অন আওয়ার রাডার দল স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে রিপোর্টিং-এর ওপর প্রশিক্ষণ দেন। তারপর একটি এসএমএস ও ভয়েস হাব তৈরি করেন। এর ফলে শুধু একটি টেক্সট মেসেজ পাঠানো বা কল করার অর্থ ব্যয় করে সিয়েরা লিওন থেকে যে কারো জন্যই প্রতিবেদন পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়। সব রিপোর্ট একটি অনলাইন সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকে, যেটি পর্যবেক্ষণ করে লন্ডনের ওই দলটি।
প্রথমে শুধুমাত্র নির্বাচন কভার করার জন্য এই প্রকল্প তৈরি হলেও, পরে এই প্রকল্পের আরও উপযোগিতা ধরা পড়ে। যেমন, দুই বছর পর যখন সিয়েরা লিওনে ইবোলা আঘাত হানলো, অন আওয়ার রাডারের তৈরি করা ওই রিপোর্টিং নেটওয়ার্ক যেন প্রাণ ফিরে পেল। মূলধারার গণমাধ্যমকে যেখানে সিয়েরা লিওনের খবর পেতে কসরত করতে হতো, সেখানে অন আওয়ার রাডার প্রাণঘাতি ভাইরাসে আক্রান্ত গোটা সিয়েরা লিওনের তাজা খবর পাচ্ছিল। মাইলস বলেন, ‘ইবোলা সংকটের সময় প্রথাগত সাংবাদিকরা সিয়েরা লিওনের ভেতরের খবর পেতে সংগ্রাম করছিলেন। অথচ, আমরা দেশটির সবচেয়ে প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চলে বসবাসকারী সবচেয়ে ভয়াবহভাবে ইবোলা আক্রান্ত কিছু সম্প্রদায় থেকে সরাসরি নিয়মিত রিপোর্ট পাচ্ছিলাম। সেসব ছিল একেবারে তাজা ও বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্টিং।’
অন আওয়ার রাডারের তৈরি করা ওই সিস্টেমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রশ্ন করার সুযোগও ছিল। লন্ডন থেকে সাংবাদিকরা বার্তা পাঠাতে পারেন। আরও তথ্যের জন্য অনুরোধ করতে পারেন। অন আওয়ার রাডারের সিস্টেমে যেসব প্রতিবদন জমা হতো, সেগুলো সঠিকভাবে সম্পাদনা করা হতো। এরপর লিখিত, অডিও ও ভিডিও প্রতিবেদনের ভা-ার নিয়ে অন আওয়ার রাডার যোগাযোগ করে আল জাজিরা, বিবিসি, চ্যানেল ফোর, এল পেইস, লা পারিসিয়ানের মতো মূলধারার গণমাধ্যমকে। এভাবে লাখ লাখ দর্শক, শ্রোতা ও পাঠকের কাছে পৌছে যেত বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের সমস্যার কথা।
সিয়েরা লিওনের ওই পর্বের পর, সংগঠনটি বুঝতে পারে, তাদের তৈরি করা প্ল্যাটফর্ম একেবারে ত্রুটিমুক্ত নয়। সব ধরণের প্রতিবেদন এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পাঠানো যায় না। তাই সংগঠনটির পরবর্তী প্রকল্প ছিল একেবারে আলাদা। কমিক রিলিফ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে, অন আওয়ার রাডার যুক্তরাজ্যে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত মানুষজনকে তাদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দেয়। এজন্য ৪০টি ফোন বিশেষভাবে তৈরি করে সংগঠনটি। এই ফোনে শুধু ৫টি বাটন ছিল। চালু করা, রিপোর্ট করা, উত্তর দেওয়া, শব্দ বাড়ানো বা কমানোর বাটন। মাইলস বলেন, ‘এই ফোন ব্যবহার করাটা কঠিন কিছু নয়। এটি যতটা সম্ভব সহজে ব্যবহার করতে ডিজাইন করা হয়েছে।’ এই প্রকল্পের আওতায় যেসব ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিলোপ রোগে আক্রান্ত রোগী এই ফোন ব্যবহার করতেন, তারা একটি বাটন চেপেই তাদের কথা বলতে পারতেন। কেউ তাদের এই ফোন ধরতো না। কিন্তু তারা নিজের সারাদিনের কথা বা নিজের মনের কথা বলতে পারতেন একটি বাটন চেপে। তাদের কথা সংরক্ষিত থাকতো। তাদের দৈনন্দিন গল্প নিয়েই ২০১৬ সালে নির্মিত হয় ডিমেনশিয়া ডায়রিজ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রটি অন আওয়ার রাডার থেকে কিনে নেয় দ্য গার্ডিয়ান।
বর্তমানে যেসব প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটি, তার মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার দেশ টোগোর ট্রোকোসি দাসপ্রথা নিয়ে রিপোর্টিং। রয়েছে বাংলাদেশের নারী গার্মেন্ট কর্মীদের জীবনযাপন নিয়ে প্রতিবেদন। রয়েছে নাইজার বদ্বীপে গ্যাস উদগীরণের ফলে কী প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা। এছাড়া যুক্তরাজ্যের ব্ল্যাকপুলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিয়ে একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটি। এই প্রকল্পের জন্য, মাইলস ও তার সহকর্মীরা ফোন বক্সের মতো বুথের নকশা তৈরি করছেন। এই বুথের ভেতর ঢুকে একাকী মানুষজন নিজের জীবনের গল্প বলতে পারবেন নিরবে, নিভৃতে। এই এলাকায় কাজ করতে গিয়ে মাইলস লক্ষ্য করেছেন যে, এসব বুথে আসা লোকজন অন্য মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই এখানে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই বুথে মানুষ খুব ধীরে প্রবেশ করে আর বের হয়। তাদের এখানে আসার একটি কারণ হলো অন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা হয়। কিছুক্ষণ বসা ও হাসাহাসি করা। এ কারণে আমরা আরও মজার ও ঘনিষ্ঠ উপায়ে মানুষকে তার গল্প বলতে উৎসাহিত করতে চাই।’ বুথের ভেতরে একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ স্ক্রিনও যুক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেকের জন্য এখানে কিছু ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন থাকে প্রতিদিন।
অন্য প্রকল্পের মতোই, ব্ল্যাকপুলে অন আওয়ার রাডারের এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো সেসব মানুষকে নিজের গল্প বলার সুযোগ করে দেওয়া, যারা কিনা ডিজিটাল বিভাজনের ভুল পাশে পড়ে গেছেন। মাইলস বলেন, এখন আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের থেকে যেসব কনটেন্ট দেখি, সেগুলোতে কিছু টুইটস বা ফেসবুক পোস্ট ছাড়া কিছু দেখি না। হয়তো বাজেটহীন একটি অনলাইন নিউজ টিম এটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা। তবুও তো তাদের সেই সুযোগ আছে।
মাইলসের আশা, ‘একো চ্যাম্বারে’র এই যুগে, কিছু মানুষ থাকবেন যারা চিরাচরিত গ-ির বাইরে গিয়ে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে চাইবেন। তার ভাষ্য, ‘যেসব কমিউনিটির সঙ্গে আমরা কাজ করি, তাদের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস কম যে, তাদের গল্পও বলার মতো একেকটি গল্প। তাদের কথা অন্যরা শুনছে, এমন দৃশ্যপটে তারা অভ্যস্ত নন।’
No comments