হৃদযন্ত্র বা শ্বাসযন্ত্রের অসুবিধা by ডা: নাহিদ শারমিন নূপুর

রাস্তায় হাঁটছেন কিংবা কারো সাথে কথা বলছেন এমন সময় দেখলেন হঠাৎ একজন মানুষ অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়ল। দ্রুত রোগীর পাশে গিয়ে দেখলেন তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। পালস নেই, লোকটি মৃতের মতো পড়ে আছে, বিভিন্ন কারণে রোগীর এই অবস্থা হতে পারে। ফাস্টএইডার হিসেবে আপনার দায়িত্ব হচ্ছে দু-তিন মিনিটের মধ্যে লোকটির জীবন রক্ষায় সাহায্য করার জন্য সিপিআর বা কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন শুরু করা। হৃদযন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্র বন্ধ হয়ে গেলে দু-তিন মিনিটের মধ্যে মস্তিষ্ক অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্তের অভাবে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের পদ্ধতি প্রয়োগের সাথে কার্ডিয়াক ম্যাসাজকে নিয়মানুযায়ী ব্যবহারকেই একত্রে সিপিআর বলে। এই পদ্ধতি হাতে-কলমে শিক্ষা নেয়া প্রত্যেক ফাস্টএইডারের একান্ত কর্তব্য।
সিপিআর পদ্ধতি
১. এ পর্যায়ে রোগীকে মেঝেতে বা শক্ত কোনো স্থানে চিত করে শুইয়ে পায়ের দিক উঁচু করে রাখতে হবে।
২. রোগীর মাথাকে পেছনের দিকে কাত করে রাখতে হবে, যাতে চিবুকটি ওপরের দিকে উঁচু করে থাকে।
৩. মুখ বা মুখগহ্বরে কোনো কিছু থাকলে তা বের করে ফেলতে হবে।
৪. এক হাত দিয়ে রোগীর চিবুকটি উঁচু করে ধরে তার মুখটি খুলে ধরতে হবে।
৫. ফাস্টএইডারের মুখ হাঁ করে খুলে তা দিয়ে রোগীর খোলা মুখে চেপে ধরতে হবে। রোগীর মুখে সজোরে বাতাস প্রবেশ করানোর সময় তার নাক চেপে বন্ধ করে রাখতে হবে।
৬. ফাস্টএইডারের মুখ সরিয়ে নিয়ে রোগীর ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে। পদ্ধতিটি মিনিটে ১২ থেকে ১৫ বার করতে হবে।
৭. রোগীর পালস না থাকলে দ্রুত কার্ডিয়াক ম্যাসাজ শুরু করতে হবে। রোগীর বুকের মধ্যখানের হাড়ের নিচের অংশে ফাস্টএইডারের হাতের তালুর নিচের অংশ স্থাপন করতে হবে। তার ওপর আরেক হাতের তালু চেপে ধরে সজোরে নিম্নমুখী চাপ দিতে হবে (লক্ষ রাখতে হবে চাপ যেন এত বেশি না হয় যাতে বুকের হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।) প্রতি সেকেন্ডে একবার করে এই ম্যাসাজ দিতে হবে।
৮. প্রতি ১৫ বার কার্ডিয়াক ম্যাসাজ দেয়ার পর তিন-চারবার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে হবে।
৯. সমগ্র পদ্ধতিটি অ্যাম্বুলেন্স না আসা পর্যন্ত চালু রাখতে হবে অথবা পালস ফিরে আসা এবং শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হওয়া পর্যন্ত করতে হবে।
১০. জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
মুখ থেকে মুখে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস
শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে এমন রোগীর ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতিটি সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারলে তার জীবন রক্ষায় সাহায্য করা যেতে পারে।
পদ্ধতি
১. রোগীর মুখে খাদ্যদ্রব্য, কৃত্রিম দাঁত বা অন্য কোনো কিছু থাকলে তা বের করে ফেলতে হবে।
২. রোগীর মাথা সাবধানে ধরে এমনভাবে পেছনের দিকে বাঁকা করে ধরতে হবে যাতে চিবুকটি ওপরের দিকে উঁচু হয়ে থাকে।
৩. এক হাত দিয়ে রোগীর চিবুকটি উঁচু করে ধরে তার মুখটি খুলে ধরতে হবে।
৪. ফাস্টএইডারের মুখ হাঁ করে খুলে তা দিয়ে রোগীর খোলা মুখ চেপে ধরতে হবে। দু’জনের মুখের মধ্যখানে পাতলা রুমাল বা গজ রাখা যেতে পারে। রোগীর মুখে সজোরে বাতাস প্রবেশ করানোর সময় ফাস্টএইডারকে দুই আঙুল দিয়ে রোগীর নাক চেপে বন্ধ রাখতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে ফাস্টএইডারের মুখ দিয়ে রোগীর নাক ও মুখ একসাথে চেপে ধরে বাতাস প্রয়োগ করতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে একটি হাত দিয়ে রোগীর পেটে আলতোভাবে চাপ রাখতে হবে, যাতে অতিরিক্ত বাতাস প্রয়োগের ফলে শিশুর ফুসফুস বেশি প্রসারিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
৫. বাতাস প্রয়োগের পর ফাস্টএইডারকে মুখ সরিয়ে নিয়ে রোগীর ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যেতে সাহায্য করতে হবে।
৬. এই কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়াটি একজন পূর্ণবয়স্ক রোগীর জন্য প্রতি মিনিটে ১২ বার এবং শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটে ২০ বার করতে হবে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরে না আসা পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যেতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.